একরামুল মুন্না: পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড় জেলার তেতুঁলিয়া উপজেলায় নিরবে নিভৃতে প্রতিবন্ধিদের মাঝে প্রেরণা আর আতœবিশ্বাসের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ভজনপুর প্রতিবন্ধি এই বিদ্যালয। জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রতিবন্ধিতা এখন আর প্রতিবন্ধকতা নয় এমন বিশ্বাস অর্জন করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিরা। আর নিজেদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনে সহযোগিতা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর দেবনগর ইউনিয়নের দেবনগর এলাকায় কিছু বেকার যুবকের উদ্যোগে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি চালু হয় ২০১৩ সালে। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন তারা জানতেন না যে, প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। তাই আশে পাশের কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে এই স্কুলটি ব্যপক সারা ফেলেছে।শিক্ষার্থিদের পাশাপাশি বিদ্যালয়টির সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছেন এলাকার গণ্যমান্যরাও।বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে,৭ ক্যাটাগরির প্রায় তিন’শ জন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থি এই বিদ্যালয়ে পাঠ নিচ্ছে। শারিরিক প্রতিবন্ধি,দৃষ্টি প্রতিবন্ধি,বাক,শ্রবন,বুদ্ধি এবং অসুস্থতা জনিত প্রতিবন্ধিরা দুর দুরান্ত থেকে এসে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে । এদের আনা নেয়ার জন্য রয়েছে মাত্র দুটি অটোবাইক। খেলা ধুলা আর সাংস্কৃতিক চর্চাও হয় নিয়মিত। রয়েছে শারিরিক থেরাপি দেয়ার ব্যবস্থা । প্রতিবন্ধিদের বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়া শেখানোর উদ্যোগও নিয়েছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এছাড়া দুপুরে নাস্তা দেয়া হয় প্রতিটি শিক্ষার্থিকে। এখানে শুধু শিশুরা নয় বয়স্ক প্রতিবন্ধিরাও শিক্ষার আলো গ্রহণ করছে ।গত সোমবার সরেজমিনে এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের চাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি ঘর। দুই কক্ষে চলছে ক্লাস। একটি কক্ষ শিক্ষকদের। মাত্র ১৫ শতাংশ জমির উপর এই বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ক্লাস শেষে সংক্ষিপ্তা এক আড্ডায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধি লাইলি আক্তার (১১), বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি মাসুম হোসেন (৯) সহ বেশ কয়েকজন গান শুনিয়ে তাদের স্বপ্নের কথা জানালো। তারা জানায়, এই বিদ্যালয়ে পড়তে পেরে আর তাদের খারাপ লাগেনা।আগে সব সময় মন খারপ থাকতো। তাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করছে। এসময় অভিভাবক আলেমা বেওয়া (৭০) জানান, আমার নাতনী বাক প্রতিবন্ধি। কথা স্পষ্ট হয়না। এখানে এসে সবার সাথে মিসে সে আস্তে আস্তে সঠিকভাবে কথা বলতে পারছে।বিদ্যালয়ে এলাকার ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজো অবধি তারা বেতন পাননি। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আলিমূল রাজি জানান, আশে পাশের কোথাও প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় ছিলনা। এ এলাকার প্রতিবন্ধিরা দিনে পর দিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। ২০১৩ সালে আমরা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করি। এর পর সমাজের নানা গুণিজন এগিয়ে আসে।বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে রয়েছে নানা সমস্যা। খেলার মাঠ নেই। ভাল ভবন নেই। শিক্ষার্থিদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। সরকার একটু দৃষ্টি দিলে বিদ্যালয়টি দ্রুত এগিয়ে যাবে।
এই বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজি মাহবুবুর রহমান জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতিবন্ধিরা এই বিদ্যালয়ে এসে লেখা পড়া করছে। তাদের কে অটোবাইকে করে অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। সরকারি উদ্যোগে শিক্ষার্থিদের আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তারা আরও সুবিধা পাবে। তাদের বেড়ে ওঠা অনেক সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪