আজহারুল আজাদ জুয়েল :-
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ছিল যথেষ্ট আড়ম্বরতার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। আতশবাজি হবে, বর্ণাঢ্য র্যালি, কনসার্ট, সভা, জনসভা, ক্রিড়া-সংস্কৃতির নানান প্রতিযোগিতাসহ বর্ণাঢ্য সব আয়োজন থাকবে। জন্মশত বার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, রাষ্ট্র প্রধান, মন্ত্রী, গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকার থাকবে এবং এক জমকালো আয়োজনে বাঙালির স্বাধীনতার মহানায়কের জন্মশত বার্ষিকীর উদ্বোধন হবে।
কিন্তু বিশ^গ্রাসী করোনার আক্রমণে সরকারের সই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে অতিব সীমিত পরিসরে।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধূর জন্মদিন। একশত বছর আগের এই দিন রাত ৮টায় বাংলা মায়ের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন এই ক্ষণজন্মা পুরুষ, যিনি বাঙালি জাতিকে গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছিলেন ১৯৭১ সালে। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি বাঙালিকে পরাধীনতার শেকল মুক্ত করতে বার বার কারাগারে গিয়েছিলেন। একর পর এক কারাভোগ করে করে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে ত্বরাম্বিত করেছিলেন। তিনি প্রজ্ঞা, কূশলী ও কৌশলী রাজনীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে এক মোহনায় ঐক্যবদ্ধ করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তার সেই ঘোষণার পর বাঙালি তার স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
সেই কালজয়ী মহানায়কের মহা জন্মদিন ও জন্মশত বার্ষিকী পালনের জন্য গোটা জাতি যখন পুরোমাত্রায় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল তখুনি মরণ ব্যাধি হয়ে গোটা বিশে^ আঘাত হেনেছে কাবিদ ভাইরাস যা করোনা নামে অধিক পরিচিতি পেয়েছে। করোনা এখন গোটা বিশে^র আতংক। ১৬ মার্চ বিকাল বেলা যখন এই লেখা লিখছি ততক্ষণে সারা দুনিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় গোটা দুনিয়ায় আকাশ পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীসহ কয়েকটি দেশের কয়েকজন মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য, কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়, কয়েকজন তারকা অভিনেতা এবং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ প্রায় পৌনে দুই লক্ষ লোক, নারী, পুরষ, তরুন-তরুনী, শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা যখন একের পর এক বিভিন্ন দেশে ছড়াতে ছড়াতে একশ’র কাছাকাছি, তখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশে করোনা আসছে না এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত ইটালী ফেরত বাংলাদেশের দুই নাগরিকের মাধ্যমে করোনা ঢুকে গেল বাংলাদেশেও। দুইজন থেকে তিনজন। তারপর আরো দুইজন। এরপর আরো তিনজন যার মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে। এই লেখা যখন লিখছি তখন দুই শিশুসহ বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ৮। তবে এদের মধ্যে দুই জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা টেলিভিশনের টকশ’গুলোয় বলছিলেন যে, ৫০ উর্ধ বয়সীদের জন্য করোনা ঝুঁকিপুর্ণ। এই রকম বয়সী মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যাদের ডায়াবেটিস আছে, এজমা আছে, যারা প্রাই ইনফুয়েনজা কিংবা হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত হন, হার্টের সমস্যা আক্রান্ত, এমন ব্যক্তিদের জন্য করোনা বিপজ্জনক। এই ভাইরাসে আক্রান্ত যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ হলেন এই ধরণের রোগী। তুলনামূলকভাবে শিশুর মৃত্যু নেই বললেই চলে।
শিশুদের করোনায় আক্রান্তের হার কম হলেও বাংলাদেশে দুই জন শিশুর করোনায় আক্রান্তের খবরটি সবার জন্য অস্বস্তিদায়ক। ফলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এখন এটা বড় ভাবনা। শিশুরা যদি এরকম প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে পরিবারের অবস্থা কিরকম হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। তবে আমাদের আশার ভরসা হলো যে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮জন করোনায় আক্রান্ত। সার্বিক পার্সেন্টেজে এটা কিছুই না। এর মধ্যেই সরকার নিজস্ব উদ্যোগেই মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহীত প্রায় সব কর্মসুচি সীমিত এবং অনেক কর্মসুচি স্থগিত করেছেন। অন্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশও আকাশপথ এবং সীমান্ত প্রায় সীল করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে ১৭ হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। একই সময়ে সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখার কথা বলেছেন হল মালিকদের সমিতি। আরো নানা রকম পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলার কালজয়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কাজেই এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, করোনা বাংলাদেশকে খুব একটা কাবু করতে পারবে না।
১৭ মার্চ হতে আমরা মুজিব বর্ষ পালন করব। এই মুহুর্তে করোনা মোকাবেলায় যে সব পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে তাতে ঘরে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ঘরে কি করব? অখন্ড অবসর এখন। যদি চেষ্টা করা যায় তাহলে মুজিব বর্ষকে কেন্দ্র করে এই অবসর সময়ে এই কাজগুলো করা যেতে পারে: ১. ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজেদের পড়াগুলো ঠিকমত পড়তে পারেন। ২. ছাত্র-ছাত্রীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা চীন বই তিনটি পড়তে পারেন। ৩. ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল মানুষ বঙ্গবন্ধুর উপর বিভিন্ন লেখকের লেখা বই পড়ে তার জীবন, দর্শন ও আদর্শ জানতে পারেন এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। ৪. বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাই বাড়িতে বসে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন লেখকের লেখা বইগুলোও পড়া যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে। তাহলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেন নাই তারা সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আমরা করোনা নিয়ে সমস্যায় আছি। এই সমস্যা মোকাবেলা করা হবে আমাদের এই মুহুর্তের এক নম্বর করনীয়। তাই পরিস্কার পচ্ছিন্নতা বজায় রাখা এবং মাঝে মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিকল্প এখন নাই। মাস্ক পড়ে নিজেকে এবং অন্যকে বিপদমুক্ত রাখতে পারি। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নিশ্চিতভাবে ভাল থাকব বলে আশা করা যায়। নিজেকে ভাল ও সুস্থ্য রেখে, বই পড়ে, জ্ঞ্যাণার্জন করে যদি মুজিব বর্ষ পালন করা যায় তাহলে সেটা হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪