সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: তেভাগা ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ কমরেড গুরুদাস তালুকদারের (১৮৯৬-১৯৮০) ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দিনাজপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কমরেড গুরুদাস তালুকদার স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে ২২শে ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক গুরুদাস তালুকদারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, তেভাগা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, নাট্য সমিতি, কৃষক সমিতি, মহিলা পরিষদ, যুব ইউনিয়ন, প্রগতি লেখক সংঘ, খেলাঘর এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
এরপর কমরেড গুরুদাস তালুকদার স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক রঞ্জন কুণ্ডুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য নুরুল মতিন সৈকতের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন তেভাগা পরিষদের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সিপিবির সাবেক সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন, সিপিবি জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি শ্রীদাম দাস, নাট্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি অধ্যাপক জলিল আহমেদ, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু, উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুল ইসলাম বাবুল, মহিলা পরিষদের নেত্রী রত্না মৈত্র, কৃষক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রমথেশ শীল এবং যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমৃত রায়।
বক্তারা কমরেড গুরুদাস তালুকদারের স্মৃতিরক্ষায় দিনাজপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি করেন। এছাড়া দিনাজপুরে একটি পাঠাগার স্থাপন এবং একটি প্রতিষ্ঠানের নামকরণেরও দাবি করেন বক্তারা।
আলোচনা সভাশেষে ফুলতলা শ্মশানে দিনাজপুর নাট্য সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য মঞ্চাভিনেতা গুরুদাস তালুকদার-স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
গুরুদাস তালুকদার একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কৃষকনেতা। তাঁর জন্ম রংপুরের পীরগাছার মন্থনা এস্টেটের জমিদার পরিবারে ১৮৯৬ সালে। রংপুর থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। পড়ালেখা শেষ না করে চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়ায় তার পিতা একমাত্র সন্তানকে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করেন। ১৯২১ সালে দিনাজপুরে এসে সক্রিয় কংগ্রেসকর্মী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। ১৯২২ থেকে আত্মগোপন অবস্থায় ছিলেন। তার জীবনের মোট ৩৭ বছর অতিবাহিত হয় আত্মগোপন অবস্থায় এবং জেলবন্দী হয়ে। ত্রিশের দশকের শেষে কমিউনিস্ট মতাদর্শে আগ্রহী হয়ে যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে। আমৃত্যু কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত থেকে শ্রমিক মেহনতি মানুষের লাল পতাকাকে উড্ডীন রেখেছেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এলাকায় তেভাগা আন্দোলন তীব্র হলে গুরুদাস তালুকদার ছিলেন সামনের সারিতে। কৃষক ও শ্রমিকদের সাথে তার ছিল গভীর যোগাযোগ ও হৃদ্যতার সম্পর্ক। তাকে সাধারণ কৃষকেরা 'রাজাবাবু' ও সাওঁতালরা 'রাজা মারাং' বলে সম্বোধন করতেন। নিজে সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এলেও তেভাগার সংগ্রাম তাকে জননেতার আসন দেয়। মণি সিংহ, কৃষ্ণবিনোদ রায়, সুনীল সেন, ভবানী সেন, ইলা মিত্র, হাজী মোহাম্মদ দানেশ প্রমুখেরা ছিলেন তার সহযোদ্ধা। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর দিনাজপুরের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন গুরুদাস তালুকদার। রাজনীতির পাশাপশি নিজেকে সবসময় যুক্ত রেখেছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। শতবর্ষী দিনাজপুর নাট্য সমিতির প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন; ছিলেন খ্যাতিমান মঞ্চ অভিনেতা। ১৯৮০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জীবনাবসান ঘটে অকৃতদার বর্ষীয়ান আমৃত্যু এই বিপ্লবীর।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪