দিনাজপুর প্রতিনিধি : চল্লিশ বছর ধরে দিনাজপুর শহরের মালদাহ্পট্টি ও বাসুনিয়াপট্টি এলাকায় কাটিয়ে দেয়া ইয়াছিন আলী শেষ বয়সে পরিবারের কাছে ফিরতে চায়। এক সময় ঠেলাগাড়ি চালালেও পরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবিকার তাগিদে এলাকার চায়ের দোকানে বালতি ভরে পানি সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। কাজের প্রয়োজনে দিনের বেলা যেখানেই থাকুক না কেন, রাতে তার অবস্থান হতো বাসুনিয়াপট্টি আওয়ামীলীগ অফিসের বারান্দায়।
করোনাকালে দিনাজপুর শহরের তখন লকডাউন চলছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় তেমন পথচারীর দেখা পাওয়া যেত না। দিনাজপুর শহরে অসহায় মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপশি ভবঘুরে মানুষের জন্য কাজ করা মকিদ হায়দার শিপন ও তার সহকর্মীরা গত ১৬ এপ্রিল রাতে চকবাজার এলাকার রাস্তায় মুমূর্ষ অবস্থায় ইয়াছিন আলী(৮৫) পড়ে থাকতে দেখে। এসময় তারা তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীয় সময়ে মকিদ হায়দার শিপন তার সহকর্মীদের নিয়ে অসুস্থ ইয়াছিন আলী’র জন্য নতুন কাপড়, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔধুষ ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। এবং আজ পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে তার খোঁজ নেয়া সহ রাতের খাবার পৌছে দেন তারা।
করোনা প্রকোপ বাড়তে থাকায় দিনাজপুর সদর হাসপাতাল কতৃপক্ষ ইয়াছিন আলীকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেয়ার কথা জানান। কিন্তু দিনাজপুর শহরের ইয়াছিন আলী’র পরিবারের সদস্য কিংবা পরিচিত কেউ না থাকায় বিপাকে পড়ে যায় উদ্ধারকারী মকিদ হায়দার শিপন ও দলের সদস্যরা। এসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন দিনাজপুরের প্রবীন রাজনীতিবিদ ও নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও মাহমুদুল হাসান মনিক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এখনো সেই হাসপাতালের এক কোণে দিনের পর দিন গনণা করে চলছেন ইয়াছিন আলী যদি তার কোর আতœীয় এসে তাকে নিয়ে যাবে এই প্রতিক্ষায়।
দিনাজপুর প্রবীন সাংবাদিক ও দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি রতন সিং বলেন, ইয়াছিন আলী দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করলেও কখনো কারো কাছে সাহায্য চাইতে দেখিনি। এই বয়সেও সে চায়ের দোকানে পানি টানার কাজ করত।
ইয়াছিন আলীকে উদ্ধার করা মকিদ হায়দার শিপন জানান, অনেক চেষ্টা চালিয়ে তার বাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোন এক সময় ইয়াছিন আলী রংপুর থেকে দিনাজপুরে চলে আসেন। রংপুর শহরের জাহাজ কোম্পানী মোড় এলাকার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মৃত রেজা সাহেব ইসাছিন আলী’র সম্পর্কের চাচা। কিন্তু ইয়াছিন আলী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়ায় তার স্ত্রী ও সন্তান নেই। রংপুর বার কাউন্সিলরের প্রথম নারী আইনজীবী মৃত নুসরাত বেগম ছিলেন ইয়াছিন আলী’র বোন। বর্তমানে রংপুরে তার ভাতিজা, ভাগিনা ও ভাগনী রয়েছে।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ইয়াছিন আলী’কে তার তার পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেয়া ও তার চিকিৎসা নির্বাহের জন্য সমাজের সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তরুণ সমাজকর্মী মকিদ হায়দার শিপন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪