কামরুল হুদা হেলাল :
আজ ২৩ জুন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। বাঙ্গালীর অনুভ‚তি, বিশ্বাস আর গৌরবের এক বিমূর্ত প্রতিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পৃািথবীর কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অর্জন ও সাফল্য আওয়ামী লীগের গৌরবকে অতিক্রম করতে পারেনি। তাই গণমানুষের প্রাণের স্পন্দন আওয়ামী লীগ টিকে আছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সমর্থন আর বিশ্বাসে।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আ¤্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার মাধ্যমে ব্রিটিশ বেনিয়ারা এদেশীয় মির্জা জাফরদের চক্রান্তে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। বাঙ্গালীর স্বাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটলির কে এম দাস লেন রোডে রোজগার্ডেন প্যালেসে জন্ম নেয় সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী মুসলিম লীগের। ইতিহাসে জানা যায়, বাংলা ভাগের বেদনায় সংক্ষুব্ধ মুসলিম লীগের একাংশ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাসেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালিন বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় একাংশের নেতাদের সমর্থনে গড়ে উঠে আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতেই সেই দিন বাংলার মাটিতে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ। তবে ১৯৫৫ সালে দলের ৩য় কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ক’বছর পরে আবার গড়ে তোলা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সৃষ্টি ৮ বছর পর ১৯৫৭ সালে পররাষ্ট্রনীতির বিতর্কের কারনে দলের প্রথম বিভক্তি সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল খান ভাসানী দল ছেড়ে নতুন সংগঠন ন্যাপের জন্ম দেন। ১৯৭০ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে নৌকা আজও দেশের আপামর জনগণের প্রাণের প্রতীক হিসেবে টিকে আছে।
আওয়ামীলীগের ৭৩ বছরের ইতিহাসে ৬ জন সভাপতি ও ৯নং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন “কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজগার্ডেন এর বাড়ীতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না অনেক রাজনৈতিক নেতাও এই সম্মেলনে যোগদান করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শের এ বাংলা একে ফজলূল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আল্লামা রাগীব আহসান। এম এলদের ভেতর থেকে খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমেদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়াসহ বিভিন্ন জেলার অনেক প্রবীন নেতা যোগদান করেছিলেন। সভায় সকলে একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন, তার নাম দেয়া হলো পুর্ব পাকিস্তানী আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হলেন শামসুল হক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারী। খবরে কাগজে দেখলাম আমার নামের পাশে লেখা আছে নিরাপত্তা বন্দী।”
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আব্দুর রশিদ তর্কবাগীস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এএইচএম কামরুজ্জামান, আব্দুল মালেক উকিল এবং শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৩তম কাউন্সিলে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ৪১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা গণতন্ত্রের মানস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মত বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব কাধে নিয়ে দল ও দেশকে বহুমুখী অর্জনের অংশিদার করেছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাযিত্ব পালনকারী ৯ জন হলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজুদ্দিন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোঃ আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ওবায়দুল কাদের। ১৯৭৭ সালের ১১তম কাউন্সিলে আহবায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন জোহরা তাজউদ্দিন।
৭৩ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় আওয়ামী লীগের বিশাল অর্জন হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ‚্যদয়। জাতির জনক দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার হারা, শোষন নির্যাতনের শিকার বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার মহান সাফল্য অর্জন করে। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়। তারপর টানা ৩ মেয়াদের সরকার পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখনও জনগনের দল হিসেবে ক্ষমতায় আসীন রয়েছে। ৪১ বছরের দলীয় সভাপতির দাযিত্ব গ্রহণকারী জননেত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নারীর ক্ষমতায়ন, শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, মধ্য আয়ের দেশ হতে স্বল্পোন্নত দেশের অভিযাত্রা, গ্রামীন মানুষের জীবন মান উন্নয়ন, অতিমারী করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন প্রদানে অভ‚তপূর্ব সাফল্য সুশান প্রতিষ্ঠায় অধিকতর যতœবান, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও রায়ের বাস্তবায়ন, যুদ্ধপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এবং বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছেন। সব সাফল্যের পালক আওয়ামী লীগের মুকুটে শোভা পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বড় সাফল্যের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো বাঙ্গালীর স্বপ্নের সেতু বহুমুখী পদ্মা। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করছেন দেশের আত্মসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অসামান্য সাফল্যের স্মারক পদ্মা সেতু। আওয়ামী লীগের ৭৩ বছর ইতিহাস সংগ্রাম, আন্দোলন আর গৌরবের মহিমায় সমুজ্জল। জনগণের প্রাণের সংগঠন হিসেবে তাই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে, টিকে থাকবে।
লেখক- সাংবাদিক ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ dinajpurbarta2017@gmail.com, dinajpurbarta24@yahoo.com
দিনাজপুর বার্তা ২৪