তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: দেশের তৃতীয় বৃহৎ চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পেয়েছে তেঁতুলিয়া পঞ্চগড়ের সমতলের চা। যে আশা নিয়ে এখানকার প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষীরা চা আবাদ করেছেন তাদের সেই আশা ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। চা পাতা তুলে বিক্রয় করতে গিয়ে তারা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো সিন্ডিকেট করে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করছে। সেই সাথে কারখানায় বিক্রয় করতে আনা কাঁচা চা পাতার ওজন থেকে শতকরা ২০-২৫ ভাগ কর্তন করে রাখছে। এতে করে লোকসানের মূখে পড়েছে ক্ষুদ্র চা চাষীরা। চলতি বছরের চা পাতা তোলার মৌসূম শুরুর পর থেকে চা কারখানাগুলো প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতা ২০-২২ টাকা দরে ক্রয় করলেও এখন তারা ১২-১৩ টাকা দরেও কিনছে না। এতে করে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে ক্ষুদ্র চা চাষীরা।
বুধবার (১১ মে) বিকেলে উপজেলার চৌরাস্তা বাজারের তেঁতুলতলায় পঞ্চগড়- বাংলাবান্ধা মহাসড়কে কাঁচা চা পাতা ন্যায্য মূল্যের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তেতুলিয়া উপজেলার চা চাষীরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে তেঁতুলিয়া উপজেলার চা চাষী আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন, পঞ্চগড় জেলা কৃষকলীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান আজু, পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মাসুদ করিম, তেঁতুলিয়া ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসেদ, স্থানীয় ক্ষুদ্র চা চাষী সাদ্দাম হোসেন, আবু হানিফ, কবির হোসেন, আব্দুল মতিন, আব্দুল হাকিমসহ চা চাষীরা বক্তব্য দেন।
কর্মসূচিতে তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকশ ক্ষুদ্র চা চাষী অংশ নেন। বক্তারা বলেন, অকশন মার্কেটে চায়ের ভাল দাম থাকলেও চা কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে কাঁচা চা পাতা কিনছে। মৌসূমের শুরুতে কারখানা মালিকরা প্রতিযোগিতা করে প্রতিকেজি চা পাতা ২০-২২ টাকা দরে কিনতে শুরুকরে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তারা সিন্ডিকেট করে পাতার দাম কমাতে থাকে। বর্তমানে তারা ১২-১৩ টাকা কেজি দরেও চা পাতা কিনছে না। উপরšত কারখানায় বিক্রয়ের জন্য আনা কাঁচা চা পাতার ওজন থেকে তারা শতকরা ২০-২২ ভাগ কর্তন করছে। এতে করে চা চাষীদের কাঁচা চা পাতার দাম পড়ছে ১০-১১ টাকায়। অথচ প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫-১৬ টাকা। যে কারণে পঞ্চগড়ের একমাত্র ভারী শিল্প কারখানা পঞ্চগড় চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে একইভাবে এই সিন্ডিকেট পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে ধংসের পায়তারা করছে। তারা অবিলম্বে চা চাষীদের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবি জানান। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে চা চাষীদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা বলে তারা হুশিয়ারি দেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চলতি বছরের জন্য নতুন করে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। গত বছরের সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্তে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ছিল ১৫.৫০ টাকা। নতুন করে মূল্য নির্ধারণ না হওয়ায় আগের মূল্যই বিদ্যমান রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে চা কারখানা মালিকরা প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ২০-২২ টাকা দরে ক্রয় শুরুকরে। নতুন করে চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করলে চা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এ কারণে নতুন করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। কারখানায় আনা কাঁচা চা পাতার ওজনের ২০-২৫ ভাগ কর্তন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমাদের অভিযোগ করেনি। প্রমান দিয়ে কেউ অভিযোগ করলে আমরা বটলিফ কমিটির সাথে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪