ফুলবাড়ী সংবাদদাতা ॥ ফুলবাড়ীতে ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড়ে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
এদিকে একই ঘটনায় গ্রাম্য মাতবরের নির্যাতনের ভয়ে আরো দুই কিশোর নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই তিন কিশোরের পরিবার থেকে গতকাল রোববার দুপুরে রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন (১৮) ত্রিমোহনী স্লুইচ গেট, রাকিবুল ইসলাম (১৯) ও নিশাত (১৪) কে পূর্ব জাফরপুর গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কৌশলে ডেকে রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড় নামক স্থানে নিয়ে যায়। এরপর গ্রামের রুপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার (৫০), শাকিব (২৫), . শিপন (২৬), রেজাউল (৫৫), আফজাল হোসেন (৬০), শুভ (২৪), হৃদয় (২৫) ও নূরনবী (২৬) ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন তিন কিশোরকে গাছের সাথে বেঁধে রড, পাইপ ও লাঠিসোটা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়গায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। চুরির স্বীকারোক্তি নিতে কিশোর তিনজনের পায়ে ইঞ্জেশনের সিরিজের সুস পায়ের তালু ফুটিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এদিকে এই বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণও করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক।
জানা গেছে মারপিট শেষে বাবু মাস্টারসহ তার সহযোগীরা আহত কিশোর তিনজনকে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই তিন কিশোরের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলে পরিবারের লোকজন প্রতিবন্ধী কিশোর রাকিবুল (১৯) ও শামীম হোসেনকে (১৮) চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। একই সাথে নির্যাতনের শিকার নিশাত (১৪) তার নিজ বাড়ীতে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তবে গ্রামের মাতবরদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ হয়েছে নাঈম (১৪) ও নূর আলম (১৫) নামে দুই কিশোর।
নির্যাতনের শিকার শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদেরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে জীবন বাঁচাতে। কিন্তু আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানেনা বলে দাবী করেন।
নিখোঁজ নাইমের মা শাহানুর বানুু বলেন, বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন গত শনিবার মিথ্যা ছাগল চুরির অপবাদে এক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে মারপিট করেছে। এ ঘটনার পর থেকে তার ছেলে নাইম নিখোঁজ রয়েছে।
অপরদিকে মারপিটের ঘটনার পর ওইদিন রাতে গ্রাম্য সালিশ করে জরিমানা হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবী করে নির্যাতিতার পরিবারের নিকট। শালিস শেষে নির্যাতনের শিকার আহত কিশোর নিশাদের নানীর একটি গাভী এবং নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ীর থেকে একটি চার্জার রিকশা ভ্যান নিয়ে যায় মাতবরেরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, তার নির্দেশে বাদল মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই কিশোরকে নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুল ইসলাম অভিযোগ দায়েরর বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত শেষ হলেই দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।