এনটিএস শুভ, নিউজ প্রেজেন্টার এন্ড ষ্টাফ রিপোর্টার- বিজয় টিভি :-
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৪০ লাখের ও বেশি। তবে একটি বেসরকারি সংস্থার মতে, এ সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছেছে। আর দুই সূত্র থেকেই বলা হয়েছে, মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং নারী মাদকাশক্তের সংখ্যা ৪ লাখ। এছাড়াও বাড়ছে মহিলা মাদকসেবী ও মহিলা মাদক বিক্রেতার সংখ্যা। এই বাস্তবতায় ভয়েস অব এমেরিকার “মাদক ও নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন এবং নারী” শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং মাদক বিরোধী সংগঠন 'মানস '-এর সভাপতি ড. অরুপ রতন চৌধুরী বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মাদকের একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর আলোচনা তুলে ধরেন।
এখন প্রশ্ন হল বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের সমাজ বিশেষ করে তরুন সমাজ বিপথগামী হয়ে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। তাহলে আমাদের এই আসক্ত সমাজকে নিয়ে আমরা কি আশা করতে পারি, দেশই বা কতটুক পেতে এই ঘুনে ধরা সমাজ থেকে। তাই এখনই সময় দেশ এবং দেশের জনগণকে বাঁচাতে হলে কিছু একটা করা যার মাধ্যমে তরুন প্রজন্মকে নেশার ভয়াল থাবা থেকে ফিরিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত টার্গেট অর্জনের মাধ্যমে দেশকে একটি উন্নত সারির কাতারে দাঁড় করা। কিন্তু এই গুরু দায়িত্ব পালন করবে কে? প্রশ্ন? সরকার! জনগণ! নাকি আমাদের তথাকথিত সমাজ বোদ্ধারা, যারা ভদ্র লোকের মুখোশে পড়ে সমাজ সংস্কার কিংবা প্রত্যেক্ষ অর্থে সমাজ উন্নয়নের জন্যে মিছিল, মিটিং, ফোরাম গঠন, আলোচনা সভা ও মঞ্চে গলা ফাটালেও দিন শেষে এই ভদ্র বেশি সুশিল সমাজের একটি অংশও কিন্তু রাতের আঁধারে নিজেরাই নেশায় মত্ত।
এবার আসা যাক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো কথা বিবেচনায় যেখান থেকে জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার বা সুগুণাবলী সম্পন্ন যোগ্য সুনাগরিক গড়ে উঠবার কথা কিন্তু মাদক কি আসলেই তা হতে দিচ্ছে? কুড়ে কুড়ে খাচেছ এসব মেধারীদের ঢেলে দিচ্ছে অন্ধকার এক সমরাজ্যের দিকে। বর্তমানে দিন দিন মাদকের ভয়াল থাবা আরো ভয়াবহভাবে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এর হার বেড়েছে অসাভাবিকভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ বাহ্যিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা বললেও কার্যত তা বন্ধে বিশেষ কোন তৎপরতা লক্ষা করা যাযনি প্রশাসন থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির অর্ধেক ছেলে এবং চার ভাগের একভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীই ধুমপায়ী। আর নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৬৬ ভাগই চারুকলা অনুষদের ছাত্রী। এছাড়াও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত এক জরিপ বলছে, দেশে মাদকাসক্তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদকের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। অতীতে মাদকের সাথে ছেলেদের সম্পৃক্তা বেশি পরিলক্ষিত হলেও বর্তমানে গত কয়েক বছরে মাদক সেবানের মতো একটি আত্মঘাতী নেশার ছোবল থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়ে শিক্ষার্থীরা ও পিছিয়ে নেই।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভাসির্টির অবস্থাও আরো করুণ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ক্যাম্পটাসের বিভিন্ন অংশের আকাশ বাতাস ভরে ওঠে মাদকের গন্ধ্যে। বহিরাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমিলিত যোগসাজসে মাদকের দিকে দিন দিন ঝুকছে দেশের তরুন জনগোষ্ঠী । বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মাদক ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও আদউ কোন কাজ হয়নি আজও। শুধুমাত্র দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই নয় দেশের সরকারি বেসরকারী হালচালও একই রকম। উচ্চ বিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্য পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ইয়াবা, গাজা, ফেনসিডিল, হিরোইন সহ বিভিন্ন রকম নেশায় আসক্ত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। দেশের এমন কোনো উপজেলা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ। গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকজুড়ে ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কত, তা আদৌ জানা সম্ভব নয়। সম্প্রতি আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই জানে নেশা মানুষের জীবনে সত্যিকার অর্থে কোন ক্ষতি ছাড়া কোন কল্যাণই বয়ে আনে না। অথচ এই নেশা ক্ষতিকারক জেনেও মানুষ নেশা করে? আসলে মানুষ কী শুধুমাত্র দুঃখ কষ্ট হতাশা ব্যর্থতা পরাজয় গ্লানি বিষণœতা কিংবা দুর্বহ মনস্তাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য নেশা করে নাক নিছক মজা পাবার লোভে বা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি কৌতুহল প্রবণতারোধ থেকে নেশা করে? এই প্রশ্ন জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে মানুষ যে নেশা করে এই প্রবণতাসমাজে চালু আছে সভ্যতার জন্ম লগ্ন তেকেই। তবে নেশার ক্ষতির দিকাটা এতটা প্রকট, এতটা ব্যাপক ও বিপত্তিকর প্রভাব ফেলে মানুষের জীবননাশসহ সমাজ সভ্যতা ধ্বংস করার মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি কিংবা সর্ংকটাপন্ন আকার ধারণ করেনি কখনো। কারণ তখনকার দিনে সচরাচর চিত্ত বিনোদনের নিমিত্তে কোন পালা পার্বণে, উৎসবে কম বেশি মাদকের ব্যবহার বা প্রচলন ছিল। তবে নেশঅয় কেউ কখনো এত মেতে উঠত না কিংবা আসিক্তির পর্যায়ে তা যেতো না। ফলে মাদকের সীমতি ব্যবহার মূলতঃ জনজীবনে তেমন সমস্যার সুষ্টি করেননি। কিন্তু সম্প্রতি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অভিসাপ এই মাদক সমস্যা। এক সময় এক ড্রাগ বলা হতো। কিন্তু সেই ড্রাগ এখন ফনা তুলে ড্রাগনে পরিনত হয়েছে এহেন ড্রাগন সদৃশ মাদক নেশা এখন তরা সর্বনাশা থাবা বিস্তার করে মানুষের চেতনাবোধের অবলুপ্তি জনজীবনের ম্যুবোধের অবক্ষয় ও অবনিতিকে প্রকট করে তুলেছে। আর এর রোমশ থাবার বিস্তুতি আমাদের সব্যতায় ভব্যতায় ইতিহাস সংস্কৃতি ঐহিত্য শুদ্ধ জীবনাচার ও নৈতিক মুল্যবোধ আবেগ উচ্ছাসে ভরপুর এবং গৌরবময় অতীত আবৃত বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার আলো ঝলমলে শহর থেকে গ্রামেও এর অবাধ বিস্তৃতি সাধারন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে ম্লান হতে চলেছে আবহমান বাঙ্গালীর কোমল শান্ত মায়াবী স্বাভাবসুলভতা আর সমৃদ্ধি সভ্যতার হইতিহাস ও গৌরবময় সোনালি অতীত ঐতিহ্য। আর চোখের সামনে ধ্বংস হতে চরে ছে অপার সম্ভানবাময় ভবিস্যত আর আমাদের অমুল্য সম্পদ আমাদের তরুণ প্রজন্ম। প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন- ” বাঙ্গালি জাতির পরম সৌভাগ্য হেন আর নাই, যার নাই বৌভাগ্য” অথচ পরিতাপের বিষয় এই যে, আমরা সৌভগ্যবান পুরুষরাই আজ আমাদের মায়ের জাতকে কলুষিত করে চলেছে মাদক ব্যবসায় জতিত করে তাদেরকে বভহার করছে।
এখন প্রশ্ন হলএই অপ্রতিরোধ্য মেতে উঠা বা এহেন উন্মত্ততার পেছনে কার বেশি অবদান শারীর না মন, পরিবার না সমাজ নিঃসঙ্গতা নাকি জেনেটিক কোন ব্যাপার স্যাপার? চলুন উত্তর খোজার চেষ্টা করি। -
প্রখ্যাত গবেষক- Hatterer এর মতে মাদকাসক্তির প্রাথমিক কারণ হলো ব্যাক্তি নিজে। ব্যাক্তির মন মানসিকতা অচরণ মনোভাব, চিন্তা ভাবনা, দেহ রসায়ন, জীবনের বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সাতে খাপ খাওয়ানোর ক্সেত্রে অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয়গুলি তাকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। তবে মাদকাস্িকতর বিষয়ক বিখ্যাত ইটালিয় চিকিৎসক ডাঃ Efrem milanse এর মতে, মাদকাসক্তির মুল কারণ ব্যক্তির বর্তমান বা অতীত জীবনের কোন এক বা একাধিক অধ্যায়ে ঘটে যাওয়া কষ্টকর অভিজ্ঞতা বা Trauma .
মাদকাসক্তি বিষয়ে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস এর সভাপতি বিভাগীয় প্রধান, ডেন্টিস্টি বিভাগ , বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, সাধারনত মাদকাসক্তির কারনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ১. মানসিক ২. সামাজিত ৩. জৈবিক। আমাদের আলোচনার বিষয় হল মানসিক-
মানসিক কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ব্যাক্তিত্ব। এবার আসা যাক ব্যাক্তিত্বটা আসলে কি?
সময়ে গড়ে উটা ব্যক্তিত্ব আত্মবিকাশী হবে না আত্মবিনাশী হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির যাবতীয় বিকাশ, মননগত উম্মেশ তথা সমগ্রিক পারিবারিক অবকাঠামোর উপরই। শৈশবকালীন সময়ে গড়ে উঠা ব্যক্তির ধরন অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জীবন পদ্ধতি নিজের অজান্তেই প্রবাহমান থাকে। মূলত অকার্যকর পরিবারে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বের মধ্যে অনেক সময় আত্মধ্বংসী আচরণ ও ব্যক্তিত্বজনিত বিশৃঙ্খলা গড়ে উঠে যা আসক্তি থেকে সুস্থতা লাভের ক্ষমতায় উপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এবার জেনে নিই ব্যক্তিত্বের বিশৃঙ্খলা বলতে কি বুঝি ? আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী- ব্যক্তিত্বের বিশৃঙ্খলা বলতে কতগুলো বৈশিষ্ট্যের একটি সমষ্টিগত প্যাটার্নকে বোঝায়। যা সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তির চিন্তন, অনুভুতি ও আচরনকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে ব্যক্তি তার পরিবেশের সাথে সন্তোষজনক উপযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয় : অর্থাৎ ব্যক্তির খাপ খাওয়ানো প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। যৌবনের প্রারম্ভেই এরুপ ব্যক্তির বিকাশ ঘটে এবং তা মোটামুটি অনমনীয়ও স্থায়ী হয়ে পড়ে। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব তার কৃষ্টি ও সামাজিক পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। ফলে ব্যক্তি যেমন অসুখী হয় তেমনি তার আশেপাশের মানুষ গুলোও অসুখি হয়ে ওঠে। এই যে ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা বা ব্যক্তিত্বে সমস্যা এর কারণে কিন্তু মাদকাসক্তি রোগ দেখা দিতে পারে । শৈশব থেকইে কোন কোন সন্তানের আত্মবিনাশী প্রবণতা বা অবাধ্যভাব পরিলক্ষিত হয়। যার জন্য একটি শিশুর পারিবারিক পরিবেশ , শৈশবের শিক্ষা ও অন্তনিহিত মানসিক গঠণ দায়ী। এ ধরনের সন্তানরা সহজেই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে । নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তাদের তীব্র আকর্ষণ থাকে। কারো সাথে সখ্যতার গভীরতা গড়ে তুলতে সে অপারগ। দেখতে মনে হয় বেশি মিশুখ ও সংবেদনশীল। আসলে ভিতরে সে কঠিন, ফলে তার গভারতাবোধ নেই বললেই চলে। তারা অন্যের দোষকে বড় করে দেখে। ধৈর্য সহকারে কর্তব্য কাজে মনোনিবাশ করতে পারে না। ফলে বার বার একই ভুল করে। ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করে না। এমনকি সংশোধনের চেষ্টাও করে না। ফলে ভুলের লেখার মুরুতেই জেনে নিই, মাদক আসলে কী । যে দ্রব্য গ্রহন বা সেবনবা ব্যবহার করলে মস্তিকের উপর কাজ করে আচরণের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটায় সেগুলোই মাদকদ্রব্য। মূলত : যা গ্রহণে বা সেবনে ব্যবহারে নেশা হয় সেগুলোই মাদক।
বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রনে সরকারের পাশাপাশিমানস, প্রয়াস ও স্যামের মত বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।
SAAM (Society For Anti-addiction Movement) একটি মাদক বিরোধী সংগঠন। স্যাম একটি আলাভ জনক প্রতিষ্ঠান। মাদক নির্মূলের জন্য ৩০১২ জন সদস্যের অকøান্ত পরিশ্রম আর৪৮ টি প্রকল্পকে সামনে রেখে সামাজিক সচেতনা সৃষ্টি করার লক্ষে স্যম বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা, সেমিনার এবং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। মাদক ও ধুমপান বিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকের কুফল সর্ম্পকে সবাইকে অবগত করে বাংলাদেশের তরুণ-কিশোর, যুবক, ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বয়সী মানুষকে মাদকের করালগ্রাস থেকে রক্ষা করা ও আসক্তদেরকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে একতা, শিক্ষা, সততা, চরিত্র, স্বাস্থ্য, নৈতিকতা, সেবার আদর্শকে ভিত্তি করে ”জীবন একটাই মাদকমুক্ত জীবন চাই ” স্লোগানে বলিয়ান হয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন কার্যক্রমকে টার্গেট করে মাদক মুক্ত সমাজ গঠন এবং বাংলাদেশের যুব সমাজকে দেশের উন্নয়নের কান্ডারীতে পরিণত করতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্যাম সমাজ সংস্কার ও উন্নয়ন মূলক অনেক বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বর্নাত্যদের মাঝে ত্রান বিতরণ, মাদকের আগ্রাসন বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠন, স্কুল কলেজে মাদকের কুফল সম্পর্কে সেমিনার ইত্যাদি। এছাড়াও দ্বি-মাসিক মাদক বিরোধী পত্রিকা ‘নেশা’ নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছে স্যাম। নেশার উদ্দেশ্য হচ্ছে মাদক সম্পর্কে সচেতন করা, প্রতিকার এবং সুষ্ঠ চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করা। সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্যাম শিশু এবং দরিদ্রের মাঝে ঈদ বস্ত্র, শীত বস্ত্র ইত্যাদি বিতরণ করে থাকে।
স্যামের বর্তমান কার্যক্রমঃ
০১. দেশে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক লাইব্রেরী, আঞ্চলিক লাইব্রেরী, ( SAAM) এর ৬ টি শাখা, কলেজ বিশ্ববিদ্যলয়ের ( SAAM) প্রতিনিধি, উদ্যোগি তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ও প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।
০২. স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক বিরোধী গণসচেতনতার লক্ষে ক্যাম্পিং আলোচনা সভা, সেমিনার করা।
০৩. মাদক ও ধুমপান বিরোধী ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা।
০৪. মাদক বিরোধী গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
০৫. বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, খেলাধুলার আয়োজন করা।
০৬. বিজ্ঞান মেলা, দেয়ালিকা উৎসব এর আয়োজন করা।
০৭. বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, স্বাস্থ্য দিবস, মানষিক দিবস, শিশু দিবস সহ বিভিন্ন দিবস পালন করা।
০৮. লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ব্রুশিয়ার স্টিকার তৈরী ও ভাষ্কর্য্য নির্মান করে মাদক বিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি করা ।
০৯. শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ,
১০. পথ-শিশু ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করা।
১১. রক্তদান কর্মসূচি
১২. বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়ানো।
১৩. নিরক্ষরদেরকে শিক্ষাদান, পথ-শিশুদেরকে বই, বস্ত্র, পাঠ দান ও কাউন্সেলিং করা।
১৪. বন্ধুকে ধুমপান মুক্ত করণ সপ্তাহ পালন ও পুরষ্কারের আয়োজন করা।
১৫. মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র ভিজিট করা এবং তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য গিফটের ব্যাবস্থা করা।
১৬. ধূমপান ও মাদক বিরোধী ডকুমেন্টারী নির্মান করা
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম ঃ-
০১. মাদক বিরোধী পত্রিকা ‘নেশা’ বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছানো।
০২. সকল স্কুল কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ে শাখা গঠন করে মাদক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা।
০৩. সুন্দর ও বিশ্বমানের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেখানে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা সেবা দিয়ে মাদকাসক্তদেরকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
০৪. মাদক বিরোধী টিভি অনুষ্ঠান নির্মান করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
০৫. প্রতিমাসে অভিভাবক সমাবেশ করে তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
০৬. জেলা ও থানা পর্যায়ে শিক্ষকদেরকে নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে মাদক বিরোধী আন্দোলনে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা।
০৭. মাদক বিরোধী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সরকারী বেসরকারী সংস্থা বা ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেয়া।
০৮. গবেষণা।
মাদক সমস্যা তথা মাদক দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি জটিল, বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও চোরাচালান সমস্যা দেশ-কাল, ধর্ম-বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। ধনী-দরিদ্র, উন্নত-উন্নয়নশীল কোন দেশই মাদক সন্ত্রাস থেকে মুক্ত নয়। মাদককে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, সংঘাত-দ্বন্দ্ব, কলহ, দুর্ঘটনা, ধ্বংস ও মৃত্যুর যে খেলা চলছে তাকে নিবারণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তি আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন যথা- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হওয়ার কারণে মাদকের মারাত্মক ক্ষতি সর্বজন স্বীকৃত। ইউরোপীয় ও পাশ্চাত্য সভ্যতা মদ, নারী ও সম্পদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক বিশ্বে এ সভ্যতা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। অথচ ইসলাম চৌদ্দশ’ বছর পূর্বেই সমাজকে সুসভ্য করার জন্য মাদক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলাম মানবতার রক্ষাকবচ। ইসলাম মানুষকে দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক অধঃপতন থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে। ইসলাম মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে হেফাযতের জন্য মাদক বিরোধী আইন রচনা করেছে। একটি সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের জন্য সুস্থ মস্তিঙ্ক একান্তভাবেই কাম্য। মাদক মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে নস্যাৎ করে দেয়। ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র তথা গোটা মানব সমাজের অকল্যাণ ও অমঙ্গল সাধিত হয়। আজ মাদকাসক্তি বিশ্ব মানবতার জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি অসংখ্য পাপকার্য, অপরাধ ও অসামাজিক কর্মের মূল। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো লক্ষ্য করে এর প্রতিকারের জন্য বর্তমান বিশ্বে বহু দেশ ও জাতি এগিয়ে আসার মাধ্যমে একটি সুুষ্ঠ, বাসযোগ্য, নিরাপদ সমাজ সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে এটাই হোত সকলের প্রত্যাশা।
প্রতিকার-
১. ইচ্ছাশক্তি: মাদক বর্জনের জন্য মাদক গ্রহণকারীর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য প্রথমে
২. সামাজিক প্রতিরোধ : মাদক নিবারণের জন্য সমাজ ও স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। মাদক গ্রহণ করাকে ঘৃণার চোখে দেখা উচিত। সমাজপতিগণ নিজেরা মাদকমুক্ত থেকে এবং তাদের প্রভাব খাটিয়ে মাদক প্রতিরোধ করতে পারেন।
৩. মাদকমুক্ত এলাকা গড়ে তোলা : স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, অফিস, আদালত প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মাদক বর্জন করা প্রয়োজন।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি : শিশুকাল থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে হবে। যাতে ইসলামের বিধি-বিধান সমূহ পালনে তারা আগ্রহী হয়। সাথে সাথে মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা তৈরি করতে হবে। যাতে আল্লাহ পাকের প্রতিটি কথা পালন করতে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। মাদক গ্রহণের ক্ষতিকর বিষয় সম্বন্ধে শারীরিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকের ক্ষতি ও অপকারিতা সম্বন্ধে অবহিত হলে এই বদাভ্যাস ত্যাগ করা ও এর প্রতি ঘৃণা জন্মানো সহজ হবে।
৫. চিকিৎসকদের উদ্যোগ : মাদক প্রতিরোধে চিকিৎসকগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এবং জনগণকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবগত করে তাদের এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
(তথ্য সুত্রঃ- মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তার বাংলাদেশ, ইন্টারনেট, বিভিন্ন দেশী বিদেশী জার্নাল,স্যাম।)
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪