দিনাজপুর বার্তা ২৪.কম ডেস্ক ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ আর নেই। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলকাতার নিজ বাড়িতেই মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতার পঞ্চপাণ্ডবের একজন। তার আগেই অনন্তের পথে পাড়ি জমান পঞ্চপাণ্ডবের অন্য চার কবি শক্তি-সুনীল-উৎপল ও বিনয়। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তার ওপর গায়ে জ¦র থাকায় গত সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করে ১৪ এপ্রিল বিকেলে জানা যায়, তিনি করোনা পজেটিভ। কোভিড সংক্রমণ ধরা পরার পর ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আচমকা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার সকালে তাকে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চিরতরে চলে যান তিনি। কর্মজীবনে নানা দায়িত্ব পালন করেছেন শঙ্খ ঘোষ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করেন। বছর দুয়েক আগে ‘মাটি’ নামের একটি কবিতায় মোদি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন তিনি। শঙ্খ ঘোষ এর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তার বাবা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মা অমলা ঘোষ। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায় তার জন্ম। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। তবে শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। বাবার কর্মস্থল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘উর্বশীর হাসি’, ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’, ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘এখন সময় নয়’, ‘নিহিত পাতালছায়া’, ‘আদিম লতাগুল্মময়’, ‘মূর্খ বড় সামাজিক নয়’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মিনিবুক’, ‘তুমি তেমন গৌরী নও’, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’, ‘প্রহরজোড়া ত্রিতাল’, ‘বন্ধুরা মাতি তরজায়, ‘ধুম লেগেছে হৃদকমলে’, ‘লাইনেই ছিলাম বাবা’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, ‘শবের উপরে শামিয়ানা’, ‘ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার’, ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’, ‘সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি’, ‘মাটিখোঁড়া পুরোনো করোটি’, ‘গোটাদেশজোড়া জউঘর’, ‘হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ, ‘প্রতি প্রশ্নে জেগে ওঠে ভিটে’, ‘বহুস্বর স্তব্ধ পড়ে আছে’, ‘শুনি নীরব চিৎকার’, ‘এও এক ব্যথা উপশম’, ‘নিঃশব্দের তর্জনী’, ‘ছন্দের বারান্দা’, ‘এ আমির আবরণ’, ‘শব্দ আর সত্য’, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’, ‘কল্পনার হিস্টোরিয়া’, ‘জার্নাল’, ‘ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম’, ‘কবিতার মুহূর্ত’, ‘কবিতালেখা কবিতাপড়া’, ‘ঐতিহ্যের বিস্তার’, ‘ছন্দময় জীবন’, ‘কবির অভিপ্রায়’ ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে নানা পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করে ফের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়াও রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে ভারতের তৎকালীন সরকার। সূত্র: আনন্দবাজার।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪