দিনাজপুর বার্তা২৪.কম :- কক্সবাজারের ভূ-গর্ভস্থ মাটি ও পানিতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই সন্ধান কাজে ভূমিকা রেখেছেন দিনাজপুরের কৃতি সন্তান বিপুলেন্দু বসাক।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন দলে ছিলেন দিনাজপুরের কৃতি সন্তান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক এস. বিপুলেন্দু বসাকসহ একদল গবেষক। তারা বিভিন্ন স্তরের মাটি ও পানির নমুনা সংগ্রহ করে জাপানে পরীক্ষার পর এই সন্ধান পান।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল সায়েন্স ডাইরেক্ট ডটকম-এ (গ্রাউন্ড ওয়াটার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর মুখপত্র) গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে কক্সবাজারের ভূ-গর্ভস্থ মাটিতে থাকা জিরকন ও মোনাজাইটে ৯৯০ পিপিএম মাত্রারও বেশি ইউরেনিয়াম থাকার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার ফল অনুযায়ী, কক্সবাজারের ভূ-গর্ভস্থ মাটিতে থাকা জিরকন ও মোনাজাইটে ৮৫০.৭ পিপিএম থেকে ৯৯০.৬ পিপিএম মাত্রার ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যা ইতোপূর্বে সিলেট ও মৌলভীবাজারে প্রাপ্ত আকরিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উচ্চমানের।
গবেষক অধ্যাপক ড. আশরাফ জানান, কক্সবাজারে চালানো সা¤প্রতিক ওই গবেষণায় অনুসন্ধানের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ ১৮.৯ মিটার গভীর থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৩ মিটারের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি জিরকন ও মোনাজাইট পাওয়া যায়। কক্সবাজারের মাটিতে ১.১ পিপিএম থেকে ৩৩.৪ পিপিএম পর্যন্ত ইউরেনিয়াম এবং ৬.৩ পিপিএম থেকে ২০২.৩ পিপিএম থোরিয়াম পাওয়া যায়। আর এই মাটিতে মোনাজাইটের পরিমাণ ৩.২৮% ভাগ এবং জিরকনের পরিমাণ ২.৩৬% ভাগ।
এছাড়াও মোনাজাইট এবং জিরকন কণা নিজেই ৩৩৯৫.৯ পিপিএম থেকে ৩৯৩৭.৫ পিপিএম পর্যন্ত থোরিয়াম এবং ৮৫০.৭ থেকে ৯৯০.৬ পিপিএম পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ। যা সাধারণ মাত্রার তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। সাধারণ মাত্রায় থোরিয়াম থাকে ২৭৫.৫ পিপিএম থেকে ৩১৮.৪ পিপিএম এবং ইউরেনিয়াম থাকে ২৫৬.৩ পিপিএম থেকে ২৯০.৫ পিপিএম পর্যন্ত। এটা বেশ সমৃদ্ধ এবং কম গভীরতায় থাকায় উত্তোলনও হবে খুব লাভজনক।
কয়েক বছর আগে কক্সবাজারের ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ পিপিএম মাত্রার ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পান বিজ্ঞানী ড. আশরাফ। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সহনীয় মাত্রা হলো ২ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ)। আর এ ফলের পরই কক্সবাজারের মাটিতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম থাকার সম্ভাবনা থেকে তিনি স¤প্রতি ওই জরিপ চালান বলে জানান।
গবেষক দলে আরও রয়েছেন-জিওলজিকাল সার্ভে অব জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ইয়োশিআকি কোন, জাপানের তুকোশিমা ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব টেকনোলজি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের শিক্ষক রিও আনমা, জাপানের ওসাকা সিটি ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব সায়েন্সের শিক্ষক হারু মাসুদা ও কেজি শিনোদা, সুইডেনের কেটিএস-ইন্টারন্যাশনাল গ্রাউন্ড ওয়াটার আর্সেনিক রিসার্চ গ্রæপের ডিপার্টমেন্ট অব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রসূন ভট্টাচার্য, জাপানের দশিশা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক ইউরিকো ইউকো এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক এস. বিপুলেন্দু বসাক।
দিনাজপুরের কৃতি সন্তান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক এস. বিপুলেন্দু বসাক জানান, সারাবিশ্বে ভিন্ন মাত্রার ইউরেনিয়াম ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিতে পাওয়া ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লিতে সমৃদ্ধ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতিতে পাওয়া ইউরেনিয়ামকে ০.৭% থেকে ৩.৭ পর্যন্ত এবং ৩.৭ থেকে ৫% মাত্রায় সমৃদ্ধ করা হয়। তবে ২০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে বলা হয় উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম (এইচআরইউ)। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রচুর পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দরকার। আর সেই ইউরেনিয়ামের যোগান দেশ থেকে আসতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে এই মূল্যবান খনিজ সম্পদের ব্যবহারের জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু করা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।##
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪