দিনাজপুর বার্তা ২৪.কম ডেস্ক ॥ ২০১৭ সালের মার্চ, প্রতিপক্ষ ছিল এই শ্রীলঙ্কাই। ভেন্যু অবশ্য ভিন্ন, খেলেছিলেন গলে। ওই টেস্টেই তাসকিন আহমেদ পেয়েছিলেন সবশেষ উইকেট। এরপর কেটে গেছে ৪ বছর, যদিও এ সময়ের মধ্যে মাত্র একটি টেস্টই খেলেছেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সময়ের পরিক্রমায় আবারও লাল বলে হাসলেন তাসকিন। লম্বা বিরতি শেষে মাতলেন উইকেট উদযাপনে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্টে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন তাসকিন। এই পেসারের বলে ফিরেছেন ওশাডা ফার্নান্ডো। দিমুথ করুণারত্নের সঙ্গে যখন এই ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তখনই সফরকারীদের কাক্সিক্ষত ব্রেক থ্রু এনে দিলেন তাসকিন। ডানহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পে পড়া বল ফার্নান্ডোর ব্যাট ছুঁয়ে গেলে ঝাঁপিয়ে গ্লাভসবন্দি করেন লিটন দাস। ফেরার আগে ৪৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ওশাডা করেন ২০ রান। ওশাডার বিদায়ে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে দ্বিতীয় উইকেট। স্কোর ৫৮ ওভারে ২ উইকেটে ১৭৮। লম্বা সময় পর টেস্টে সুযোগ হয়েছে তাসকিনের। সেই সময়টাও সাড়ে তিন বছরের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবশেষ খেলা টেস্টের দুই ইনিংসে ৩২ ওভার বল করলেও কোনও উইকেট ছিল না তার। মাঝে ফর্মহীনতা ও চোটের কারণে খেলা হয়নি। এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিরেই দুর্দান্ত বোলিংয়ে উইকেট উদযাপন করলেন এই পেসার। ওভারের পর ওভার যাচ্ছে, কিন্তু কোনও সাফল্য আসছে না বাংলাদেশের। অবশেষে মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে এলো প্রথম উইকেট। এই স্পিনারের বলে ফিরে গেছেন লাহিরু থিরিমানে। তাতে ভেঙেছে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি। থিরিমানের আউটের পরপরই তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। সে পর্যন্ত লঙ্কানদের স্কোর ছিল ৩৯ ওভারে ১ উইকেটে ১১৪ রান। অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে অপরাজিত ছিলেন ৪৩ রানে। থিরিমানে আউট হয়েছেন ৫৮ রানে। মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউয়ের শিকার তিনি। রিভিউ নিয়েছিলেন যদিও, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। থিরিমানে-করুণারত্নের জুটিতে দারুণ শুরু পায় শ্রীলঙ্কা। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের উইকেট যে ব্যাটিং স্বর্গ, সেটা হয়তো বলার প্রয়োজন পড়ছে না। বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ৫৪১ রানে ঘোষণা করেছে প্রথম ইনিংস, যেখানে টপ অর্ডারের প্রায় সবাই রান পেয়েছেন। এরপর শ্রীলঙ্কাও উদ্বোধনী জুটিতে পায় শক্ত ভিত। ৩৮ ওভারে কোনও সাফল্য পাননি আবু জায়েদ-তাসকিন আহমেদরা। শ্রীলঙ্কার কোনও ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারেননি তারা। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের সময় নাজমুল হোসেন শান্ত-মুমিনুল হকদের সাফল্যের ফ্রেমে তাসকিন-মিরাজদের কঠিন সময়ের ছবি ফুটে উঠেছিল। মাঠেও তার ছাপ। ব্যাটিং-বান্ধব পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কান দুই ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে ও লাহিরু থিরিমানে ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন সফরকারী বোলারদের ওপর। তবে চা বিরতির আগে মিরাজের সৌজন্যে এসেছে প্রথম উইকেট। শুরুতে তারা ছিলেন ভীষণ সাবধানী। বিশেষ করে থিমিরানে তো রানই পাচ্ছিলেন না। কিন্তু সময়ের গড়ানোর সঙ্গে তিনি খোলস ভেঙে চড়াও হয়েছেন বোলারদের ওপর। পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম হাফসেঞ্চুরি। অন্যদিকে অধিনায়ক করুণারত্নে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর চাওয়া ছিল ৫২০ রান। সেই সংগ্রহও টপকে ইনিংস ঘোষণা করলো বাংলাদেশ। ক্যান্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনে দেড় ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ৫৪১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে সফরকারীরা। সোয়া দুই দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ১৭৩ ওভার! মুমিনুল হক হাতের ইশারায় যখন ইনিংস শেষের ঘোষণা দিলেন, তখন মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৬৮ রানে। আর তাসকিন আহমেদ ছিলেন ৬ রানে অপরাজিত। তার আগে অবশ্য তৃতীয় দিনের সকালে ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেশনের হিসাবে ক্যান্ডি টেস্টে এটাই সফরকারীদের সর্বোচ্চ উইকেট হারানো। এর আগে সেশন তো দূরে থাক, প্রথম দুই দিনে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ২টি করে উইকেট। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মুশফিক যেভাবে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন, ইনিংস ঘোষণা না হলে সেঞ্চুরি সংখ্যা আরেকটি বাড়তেই পারতো। যদিও টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফসেঞ্চুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। ১৫৬ বলে খেলা হার না মানা ৬৮ রানের ইনিংসটি তিনি সাজান ৬ বাউন্ডারিতে। মুশফিকের সঙ্গে তৃতীয় দিন আক্রমণাত্মক ঢংয়ে শুরু করেছিলেন লিটন দাস। দ্রুত রান বাড়িয়ে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফসেঞ্চুরিও। তবে ফিফটি পূরণের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই উইকেটকিপার। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের ইনিংস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিং করেছেন লিটন। তবে তৃতীয় দিনে দ্রুত রান তোলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে আগ্রাসী ছিলেন তিনি। বিশ্ব ফার্নান্ডোর বলে আউট হওয়ার আগে খেলে গেছেন ৫০ রানের ইনিংস। ৬৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়। তার বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই ফিরে গেছেন মিরাজ। এই ব্যাটসম্যান সুরঙ্গা লাকমালের বলে ধরা পড়েন উইকেটকিপার নিরোশান ডিকবেলার গ্লাভাসে। যাওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩ রান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মাজেদা মনজিল, মালদাহপট্টি
দিনাজপুর-৫২২০
মোবাঃ ০১৭১৪৯১০৭৭৯, ০১৭৭২৯৩৩৬৮৮
ই-মেইলঃ [email protected], [email protected]
দিনাজপুর বার্তা ২৪