রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কমলার ব্যাগ, ওজন খুব বেশি না মাত্র সাড়ে তিন কেজি। কাছে গিয়ে দেখা গেল কিছু স্কুল শিক্ষার্থী সহ কয়েকজন অভিভাবক ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে ছোট ছোট হলুদ রঙের ব্যাগে আলু প্যাকেট জাত করছে। জিজ্ঞেস করা মাত্রই কয়েকজন উত্তর দিলো এগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। বলছিলাম
উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের সাফল্যের কথা। এই উপজেলায় বরাবরের মতো এবারেও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সাগিতা,সানশাইন,গ্যানুলা, ষ্টিক(লাল) সহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছে এখানকার কৃষকরা। তবে
চাহিদার তুলনায় অধিক আলু চাষ করে বিপদে পড়েছেন এ অঞ্চলের আলুচাষীরা। যারা আগাম আলু চাষ করেছিলেন তারা হাসি আনন্দেই বাজারজাত করতে পারলেও যারা দেরিতে চাষ করেছেন সেই কৃষকদের যেন কস্টের শেষ নেই।কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, বর্তমানে বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। তবে কৃষকদের জন্য খুশির সংবাদ হচ্ছে এ অবস্থায় মালয়েশিয়া ও নেপাল,ইন্দোনেশিয়া সৌদি আরবে আলু রফতানির সুযোগ হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন উপজেলার আলু চাষীরা। এবছর অফ সিজনে আলুর দাম আঁকাশ চুমি হওয়ায় অনেক চাষী সেই আশায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে আলুচাষ করে এখন সে আশায় গুড়ে বালি এবং কি আসল টাকা ঘরে ফেরাতে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। কৃষকরা বলছেন,যদি সরকারিভাবে আরো বড় পরিসরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর বাংলাদেশের আলু রপ্তানি করা যায় তা হলেই কেবল চাষীরা লোকসান কমানোর পাশাপাশি লাভের মুখ দেখবে। আলু চাষি দুলাল হোসেন বলেন,যারা আগাম হাইরিস্কি নিয়ে আলু চাষ করতে পেরেছেন তারাই এবার সফল হয়েছেন।বাকি কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন,অনেকে আবার বলছে যে টাকায় বীজ ক্রয় করে রোপন করা হয়েছে সেটাই আলু বিক্রি করে তুলা অসম্ভব। তাই সরকারের উচিৎ হবে আলু বিদেশে রপ্তানিতে আরো বড় পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আলু ব্যবসায়ী কাঠালডাঙ্গী বাজারের সিরাজুল ইসলাম ও জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে বিদেশে রপ্তানি যোগ্য আলু খুজে বের করি। তারপর সেগুলো ক্ষেত থেকে দক্ষ শ্রমিক দিয়ে তুলে এনে ভালো ভাবে পরিস্কার করে ওজন করে প্যাকেট জাত করি। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এই আলু গুলো পাঠানো হয়। যেমন মালেশিয়া রপ্তানি করার জন্য প্রতি প্যাকেটে সাড়ে তিন কেজি আবার চাহিদা অনুযায়ী চার ও আট কেজি করেও প্যাকেট জাত করা হয়। তবে সোদি আরব, কুয়েত ও শ্রীলঙ্কার জন্য আলাদা আলাদা ধরনের ব্যবস্থা। ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম আরো জানায় প্রতি ৫০ কেজির বস্তা সাড়ে তিন কেজি করে আলু প্যাকেট করতে শ্রমিক মুজুরি সব মিলে ৬৫/৭০ টাকা খরচ পড়ে।তবে শ্রমিকরা যদি ক্ষেতেই এই প্যাকেটজাত করতে পারে তবে খরচ হবে প্রতি বস্তায় ৪০/৫০ টাকা।তাহলে এতে করে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হবে। বিদেশে রপ্তানি করার জন্য আলু প্যাকেট জাত করতে কাজ করছে রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ সন্ধ্যারই গ্রামের সাথী হিমাগার এলাকার নারী সদস্যরা সহ স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা। তারা কেউ নষ্ট ও রপ্তানির অযোগ্য ৯০ গ্রামের নিচে আলু গুলো বাছাই করে আলাদা করছে, কেউ কেউ বাছায়কৃত বড় বড় ভালো মানের আলু প্যাজেটে ভরে সঠিক ওজন দিচ্ছেন।তিনি আরো বলেন আ।এখান থেকে আলু গুলো প্রক্রিয়া করে ঢাকা,চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। ডিলারগণ সেখান থেকে কনট্রেনারে করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে।
আলু শ্রমিক হৃদয় চন্দ্র রায়, অয়ন চন্দ্র রায়, বিশ্বজিৎ সহ সনজিব রায় জানায়,আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি রাতের বেলায় বন্ধুরা মিলে বিদেশে পাঠানোর জন্য আলু প্যাকেট করি,এতে আমাদের পকেট খরচ সহ পড়াশোনা টাকা জোগার হয়ে যায়, অপর দিকে কমলা রানী, সহ যমুনা বালা জানায় পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি আমরা নারীরাও আলু বাছায় করি এবং যে টাকা আয় হয় এতে সংসারের কাজে লাগে ও বারতি আয়ের সুযোগ নারীদের জন্য।
রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, গত মৌসুমে এ উপজেলায় ৩ হাজার ২শত পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ হলেও চলমান মৌসুমে এর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ৪ হাজার ২ শত নব্বই হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছে কৃষকরা। তবে মৌসুম শুরুর দিকে আলুর দাম কৃষকরা পেলেও বর্তমানে দাম কম পাচ্ছে কৃষক। আমরা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন এলাকার বিদেশে রপ্তানি করা ডিলারদের সাথে কথা বলেছি ইতিমধ্যে তারাও আলু নিতে রাজি হচ্ছে।যদি ডিলারদের মাধ্যমে আলু বিদেশে রপ্তানি করতে পারি তাহলে কৃষকরা অনেক টা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে, আশা করছি।