নবাবগঞ্জ,দিনাজপুর থেকেঃ
মৌসুমি ফল বা সবজি হিসাবে সজিনা ডাটার সঙ্গে অন্য কোন সবজি বা ফলের তুলনা হয় না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ মৌসুমে সজিনা সবজি প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে। কেউবা ভালো মুনাফার আশায় এ সবজির চাষও করে থাকে। শহর কিংবা গ্রামের রাস্তার পাশে এমনকি ঘরের আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশে প্রতিটি গাছে বাদুর ঝুলার মত ঝুলছে সজিনা।
সজিনা গাছ অতি পরিচিত একটি নাম। অনেকে আবার দাম একটু বেশি পাওয়ায় বাজারে বিক্রি করছে। সজিনা গ্রাম বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে অতি পরিচিত এবং সুস্বাদু সবজি হিসাবে পরিচিত। প্রতি বছর শীতের শেষে এই গাছ ফুলে ফলে ভরে যায়। সজিনার ডাটা খেতে অত্যান্ত সুস্বাধু ও রোগ প্রতিরোধক। তাই বছরের এই সময়টা এলে সকলেই অন্তত এক দিনের জন্য হলেও সজিনার ডাটার তরকারী খেতে ভুল করেনা। এই গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে মারিংগা ওলেইফেরা। আর ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সজিনা গাছের পাতা, ডাটা, ফলের বিচি এমনকি গাছের ছাল অত্যান্ত উপযোগী বলে বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে। তাই দিন দিন সজিনা গাছের কদর ও চাষাবাদ বেড়েই চলেছে মনে করছেন সচেতন মহল। নবাবগঞ্জে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে অনেকেই এই সজিনার চাষ করেছেন। অনেকে আবার বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতেও চাষ করেছেন এই সবজির।
চলতি মৌসুমে সদর উপজেলা সহ আশপাশে সজিনার ডাটার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে প্রিয় এই তরকারী। তবে দাম নাগালের বাইরে থাকায় সকলের ভাগ্যে এখনও জোটেনি সজিনার ডাটা।
হাকিম মোঃ সাজেদুল ইসলাম(সাগর) জানান, সজিনার ডাটা, এর ফুল, ফল, গাছের ছাল সহ প্রতিটি অংশ নানা গুনে ভরা। যেমন এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় রয়েছে গাজরের চারগুন বেশি ভিটামিনএ, দুধের চেয়ে চারগুন বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে তিনগুন বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুন বেশি ভিটামিন আর দইয়ের চেয়ে দুই গুন বেশি প্রোটিন। প্রায় ৩’শ রকমের চিকিৎসা হয় এই সজিনা গাছ দিয়ে। চার হাজার বছর ধরে নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে কানাচে, বনে জঙ্গলে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে এই গাছ দেখা মেলে। সম্প্রতি আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে এর চাষ বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। চাষও খুব সহজ, একটি গাছের ডাল মাটিতে পুতে রাখলেই এক বছরের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়।
সূত্র জানায়, তেল রসুন দিয়ে রান্না সজিনা খেতে শুধু সুস্বাধুই নয় পুষ্টিকারও। সজিনার পাতা ও সজিনায় প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রেকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যা তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। রক্তনালীতে আটকে থাকা তেল সরাতে সজিনা সাহায্য করে।
বলা চলে চরম অবহেলা আর অযতেœ বেড়ে উঠা ঘরের আনাচে কানাচের এই গাছটি মানুষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। চলতি মৌসুমে জেলার প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে হয়েছে সজিনার গাছ। আর ওই সকল গাছে এখন শোভা যাচ্ছে সজিনার ডাটা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন,মৌসুমি এই খাবার প্রতিটি মানুষ যত বেশি পারে যেন খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করেন পাশাপাশি বাড়ি ঘরের পাশে, পতিত জমি এমনকি রাস্তা ঘাটের পাশে বেশি বেশি সজিনার ডাল লাগানোর পরামর্শ দেন তারা। এতে করে একদিকে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা হবে অন্যদিকে নানা রোগ বালায় থেকে সকলেই মুক্তি পাবে। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার রিপোটার্স ইউনিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বলেন, সজিনা এমন একটি সবজি যাকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত তেমন কোন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সজিনা তেমন মেলেনা। যা কিছু মেলে তা উচ্চ দরে বাজার থেকে ক্রয় করে আনতে হয়। এই তো দু-তিন দিন আগে আমি বাজারে সজিনা দেখে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত তোলার মত অবস্থা। দাম জিজ্ঞাসা করতেই মাথার মধ্যে একটা চমক দিয়ে ওঠে। যা আগে পেকে পেকে পড়েছে আজ তার এত দাম। তিনি আরো বলেন, সজিনা শুধু সবজিই নই এটি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই সজিনা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী তাই আমাদের উচিত এই সজিনার চাষাবাদ করা ।