স্টাফ রিপোর্টার : শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর সদর উপজেলায় এ বছর প্রায় ২৭২৩০ হেক্টর জমিতে আমন ফসলের আবাদ হয়েছে, যার ৮০% ব্রিধান-৩৪ অথবা সুগন্ধি জাতের ধান। চলতি রোপাআমন মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হলেও কৃষকসম্প্রদায়কে কৃষি বিভাগ কর্তৃক সু-পরামর্শ ও সেচ প্রদানে উৎসাহিত করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভুমিকা রেখেছেন। আবহাওয়া বৈরী থাকলেও মৌসুম শুরু থেকে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন কৃষকগণকে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক কলাকৌশল, উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ব্যবহারে অনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। সুন্দরবন গ্রামের কৃষক বাবু ক্ষেত্র মোহন , কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী মোঃ আমিনুল ইসলাম, কালিকাপুর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন, ঝানজিরার কৃষক মোক্তার হোসেন মাষ্টার, রানীগঞ্জের কৃষক মোঃ খলিলুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন, সহিদুর রহমান, মহারাজপুরের কৃষক দবিরুল ইসলাম ,নশিপুরের কৃষক মোঃ মইদুল হক, নুলাইবাড়ির কৃষক মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ, ভবাইনগরের কৃষক মোঃ আবুল হোসেন এবং চকরামপুরের কৃষক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান তাদের মাঠের ফসল বর্তমানে ভালো আছে। ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা মাকড় রোগবালাই যৎসামান্য থাকলেও তা নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। খোজ নিয়ে জানা যায় কৃষি বিভাগের নশিপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান, কালিকাপুর ব্লকের মোঃ আাব্দুল মতিন, সুন্দরবন ব্লকের মোঃ এনামুল হক, রাণীগঞ্জ ব্লকের মোঃ আবু বোরহান, হরিরামপুর ব্লকের মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল, রাজারামপুর ব্লকের মোঃ মোস্তাকিম হাসান, রামনগর ব্লকের আলহাজ¦ মোঃ আলী আকবর, চেহেলগাজী ব্লকের ফজিলা বানু সহ অন্যান্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ রোগ- বালাই এবং ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় সহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন œ গ্রামে উঠান বৈঠক, ছোট ছোট গ্রুপে মিটিং, মসজিদে মুসল্লীগনের মাঝে পরামর্শ মূলক লিফলেট বিতরণ, রাতে আলোক ফাঁদের আয়োজনে কৃষকদের জন্য সতর্কতামূলক সভার আয়োজনের মাধ্যমে কৃষকগণকে রোগবালাই পোকা মাকড় দমনে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। যার সুফল ইতিমধ্যে কৃষকভাইদের মাঠে পাওয়া যাচ্ছে। এ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্টির অধিকাংশই মানুষই কৃষি নির্ভর। নয়নাভিরাম দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠগুলো বর্তমানে হালকা বাতাসে দোলা খাচ্ছে। অনেক মাঠের আমন ধাানের ক্ষেতগুলো সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কিছু সংখ্যক মাঠে ব্রি উদ্ভাবিত আগাম জাতের মাঠ সোনালী শীষে নুয়ে পড়েছে। বাজারে আগাম জাতের ধানের নায্যমূল্য পেয়ে চাষী ভাই ও বোনেরা আনন্দে আত্মহারা এবং আবেগে উদ্বেলিত ও উজ্জীবিত। কৃষকগণ যাতে কৃষি উপকরণ সহজে এবং ন্যায্য মূল্যে পায় এজন্য উপজেলায় বিভিন্ন প্রান্তের কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ীগনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ নুরহাসান এর নেতৃত্বে অফিসের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাঠ মনিটরিং জোরদার করেছেন। সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মশিউর রহমান, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মোঃ বেলাল হোসেন এবং উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মোস্তফা নিয়মিত মাঠ মনিটরিং কাজে অংশগ্রহন করে কর্মসূচি সফল করতে অবদান রাখছেন।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ জানান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ নুরহাসান স্যারের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা এবং সময়োপোগী পরামর্শ ও সাবিক ব্যবস্থাপনায় চলতি আমন মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া থাকা সত্বেও সদর উপজেলার ২১৬ টি গ্রামে এবং দিনাজপুর পৌরসভা সংলগ্ন কিছু এলাকায় রোপাআমন করে কৃষককৃল বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে দিনাজপুর সদর উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায় ব্রিধান-৯০, ব্রিধান-৭৫, বিণা-১৭ প্রভৃতি উচ্চফলনশীল আগাম জাতের আমন ধান কৃষকগণ ইতিমধ্যে কর্তন শুরু করেছেন। অনেক মাঠে কৃষি বিভাগ কর্তৃক শস্য কর্তন কার্যক্রম চলছে। এসব মাঠে আগাম জাতের সরিষা আবাদের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কৃষকগণ জানান বারি সরিষা-১৪ ও ১৫ জাতের আবাদ করে তারা সময়মত বোরো ধান চাষ করতে পারবেন এবং আগাম জাতের ধান আবাদ করার কারনে এবার সরিষার আবাদ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে এ দেশের মানুষ ভোজ্য তেলের বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে সুশীল সমাজ মনে করেন। কৃষি মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে কৃষি বিভাগের সহায়তায় এসকল শস্য বহুমূখীকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত রুপকল্প-২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নে অনন্য ভুমিকা পালন করবে। এর ফলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে উত্তরনে দেশ ও জাতি এক ধাপ এগ্রিয়ে যাবে।