ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠায় এলাকার শতাধিক কর্মহিন নারী পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ভারি শিল্প ও কলকারখানা গড়ে না ওঠায় এলাকার বেকার যুবকদের জীবন জীবিকার পথ থমকে গিয়েছিল। বর্তমানে নতুন কিছু শিল্প ও কলকারখানা গড়ে উঠায় প্রতিদিন সেগুলোতে কাজ করছে এলাকার কর্মহিন শত শত নারী-পুরুষরা। এতে এক দিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অন্য দিকে এই এলাকার আর্থনৈতিক দিক সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
শহরের পশ্চিমাংশে রাজারামপুর এলাকায় লাভলী ফুড,মির্জা গ্রুপ অব কোম্পানী,আর এফএর গ্রুপের প্রাণ,ফুলবাড়ী ফ্লাওয়ারস,ইফতি অটো রাইস মিলস সহ একাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় সেখানে শতশত মানুষের কর্মস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতেকরে এক সময়ের কৃষিভিক্তিক এলাকা এখন শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখন নতুন নতুন উদ্যোগক্তার বদৌলতে এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পায়নের পথ,বাড়ছে অর্থ নৈতিক প্রবৃদ্ধি। এলাকার সচেতন মহল বলছেন, যে এলাকায় যতবেশি শিল্পায়ন হবে সেই এলাকা তত বেশি উন্নায়নের পথে এগিয়ে যাবে,ঘরে বসে থাকা বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে,এই জন্য এই প্রতিষ্ঠান গুলোর মতো অনান্য উদ্যোগক্তাদের নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন তারা।
একই ভাবে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার লক্ষে এলাকার তরুন শিল্পপতি ও সমাজ সেবক মশিউর রহমান খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামে প্রায় ৩ একর জমির উপর ফাহিম প্যাকেজিং লিঃ নামে একটি শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন। বর্তমান এই কারখানায় নারী পুরুষসহ প্রায় শতাধিক বেকার নারী ও যুবকরা কাজ করছেন। শ্রমিকরা এখানে কাজ করে যে আয় করছেন তা দিয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মোক্তারপুর গ্রামে ফুলবাড়ী-মাদিলা সড়কের পাশে এক মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে ফাহিম প্যাকেজিং কোম্পানী লিঃ। সেখানে প্লাষ্টিকের সুতা থেকে ওই এলাকার নারী-পুরুষরা,তাঁত মেশিনে তৈরী করছে উন্নত মানের বস্তা এবং ব্যাগ ।
ওই কারখানার শ্রমিক কৃষ্ণপুর গ্রামের নাসরিন বেগম বলেন, তিনি এক সময় বাড়ীতে বসে ছিলেন,কারখানার মালিক তাকে এক মাস সেলাই প্রশিক্ষন দিয়ে চাকুরি দিয়েছে,এখন তিনি এই কারখানায় কাজ করে প্রতিমাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা আয় করছেন, এতেকরে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। একই কথা বলেন, পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের ঝর্না বেগম ও দক্ষিন বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের ভালোরানী সহ ফাহিম প্যাকেজিং কারখানায় কর্মরত অন্যান্য শ্রমিকরা। কর্মরত মহিলা শ্রমিকরা বলেন,স্বামীর পাশা পাশি তাদের আয়ের টাকা সংসারের কাজে লাগিয়ে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে,তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করছে।
ফাহিম প্যাকেজিং কোম্পানী লিঃ এর ম্যানেজার বাবলু মিয়া বলেন, ফাহিম প্যাকেজিং থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার বস্তা এবং ব্যাগ উৎপাদন হয়। উৎপাদিত পন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, এই কারখানায় প্রতিদিন দুই শিপ্টে শতাধিক লোক কাজ করেন, তারা সকলে এই এলাকার স্থানীয় বাসীন্দা। তাদেরকে এক মাস করে প্রশিক্ষন দিয়ে এই কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ফুলবাড়ী ফাহিম প্যাকেজিং কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন,এক সময় এই এলাকাটি ছিল অবহেলিত এখানে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে,নিজের ব্যবস্যার পাশাপাশি এই এলাকার অনেক মানুষের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে, এই চিন্তা থেকে তিনি এই ফাহিম কারখানা গড়ে তুলেছেন।
তিনি বলেন,প্রথমে এই এলাকার দরিদ্র পরিবারের মহিলা ও পুরুষদের প্রশিক্ষন দিয়ে কাজের জন্য উপযুক্ত করেছেন নিজ অর্থ্যায়নে, এরপর এই কারখানায় চাকুরি দিয়েছেন। এতেকরে তিনি তাঁর নিজের কারখানায় স্থানীয় শ্রমিক পেয়েছেন অপরদিকে এই এলাকার কর্মহীন পরিবার গুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।