ঢাকারবিবার , ২৯ মার্চ ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনা মুক্ত থাকতে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি

মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
মার্চ ২৯, ২০২০ ১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজহারুল আজাদ জুয়েল  :-

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারন ছুটি ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। সাধারন মানুষের মধ্যে যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে তা নিশ্চিত করতে আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনাও দিয়েছে।

আমি চাকুরি না করলেও জানগণর সাথে রিলেটেড কাজে জড়িত। কাজের স্বার্থে আমাকে লোকর কাছে যেতে হয়, দেখা, সাক্ষাত ও কথা বলতে হয়। কিন্তু সরকারি ছুটি ঘোষনা এবং সর্বশ্রেনীর মানুষকে ঘরে থাকার আহবান  শোনার পর আমি বাইরে যাচ্ছি না। নিজেকে এক প্রকার গৃহবন্দী করে রেখেছি।

শুধু যে, সরকারের আবেদনের কারনেই নিজেকে গৃহবন্দী রেখেছি ব্যাপারটা শতভাগ এ রকম না। এর সাথে আরো কিছু কারন আছে। সেই কারনগুলো একটু বললে পাঠকের বুঝতে কিছুটা সুবিধা হবে। প্রথম কারন হলো, আমি ছোট বেলা থেকে এ্যাজমা রাগে আক্রান্ত। এই রোগ আমার বাবার ছিল, মায়ের ছিল, এখন আমারো আছে। এমনকি আমার ছেলে, ছোট বান, দুজন ভাগ্নে, তারাও আক্রান্ত এ্যাজমাটিক রোগে। বিশ^ব্যাপী করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকগণ দেখেছেন যে, এই রোগীদের সিংহভাগ বয়স্ক। প্রায় সত্তর উর্ধ লোকেরাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশি মারা গেছেন। এইসব রোগীর মধ্যে আগের থেকে কিছু জটিল রোগ ছিল। যেমন ডায়াবেটিস, এ্যাজমা, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি। অপেক্ষাকৃত তরুনরা করোনায় আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন কম। তাদের অধিকাংশই চিকিৎসায় সুস্থ্য গয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর নানান দিক বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা বলছেন, যারা এ্যাজমা, হাঁপানী, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরাগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আছেন, তাদের জন্য করোনা বিপজ্জনক। তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা, তাই করোনা ভাইরাস খুব সহজেই তাদেরকে কাবু করতে পারে এবং দ্রুতই তার জীবনহানির কারন হয়ে উঠে। চিকিৎসকদের আহবান , এই ধরনের রোগীরা যেন বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন এবং নিজেকে নিরাপদ রাখেন। তদুপরি আমার এক ভাগ্নে, দিনাজপুর সিটি কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিকী একদিন বলল, মামা তোমার তো বয়স ৫০ পেরিয়েছে, তুমি অ্যাজমা রোগী, এমনিতেই তোমার হাঁচি-কাশি হয়। তো এখন যখন একটা বিশেষ সিচুয়েশন চলছে এই সময়টায় তোমার আর বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। তুমি বাড়িতে থাকো, বই পড়, আর বাড়িতেই লেখালেখি করো।

চিকিৎসকদের সতর্কবাণী ও ভাগ্নের পরামর্শ গ্রহন করে আমি এখন নিজেকে বাড়ির ভেতরে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। বাড়িতে বসে বই পড়া, টিভি দেখা, ল্যাপটপে এক আঙ্গুলে কম্পোজ করা, মোবাইলে মাঝে মাঝে দু-একজনের সাথে কথা বলা, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং, কখনো কখনো বাড়ির টুকিটাকি কাজ করা, এগুলোর মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখছি। এভাবে  আমার সময় দিব্বি পার হয়ে যাচ্ছে, কখনো বোর লাগছে না।

অবশ্য বাইরে একেবারেই বের যে হচ্ছি না, তাও নয়। মাঝে মাঝে কিছু কিছু কারনে বের হতে হয়। এর মধ্যে প্রেসক্লাবে একদিন ঢু মেরেছি। আমাদের পাড়ার (পাটুয়াপাড়া) সফিউদ্দিন আহমেদ ওরফে সফি চাচা মারা গিয়েছিলেন, তার জানাজায় অংশ নিয়েছি। রামনগর বাজারে গিয়ে এক-দু’দিন কেনাকাটা করছি। দিনাজপুর নাট্য সমিতির সাধারন সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু ভাইয়ের বাড়িতেও একদিন গিয়েছি। এছাড়া প্রতিদিন হাঁটার জন্য বের হয়েছি।

আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নই। তবও প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় হাঁটা-হাঁটির জন্য বের হতে হয়। বিভিন্ন কারনে ছোট থেকে হাঁটার অভ্যাস আমার। যখন বাংলা স্কুলে পড়তাম তখন পাটুয়াপাড়ার বাড়ি থেকে হেঁটেই যাতায়াত করতাম। যখন দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়তাম, তখনো হেঁটেই যাতায়াত করতাম। স্কুল-কলেজে যাতায়াত করা ছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবেও প্রতিদিন সকালে বড়মাঠ, শিশুপার্ক পর্যন্ত হাঁটতাম। এভাবে হাঁটাহাঁটিটা একটি অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। যার রেশ রয়েছে এখনো। আধা ঘন্টা করে দিনে দুইবার না হাঁটলে ভাল তো লাগেই না, বরং এক রকমের সমস্যাও হয়। যেদিন হাঁটব না, সেদিন কোন কাজে মন বসতে চায় না, কোন কিছুতে এনার্জী আসেনা। সেদিন মনের মধ্যে তেমন ফুর্তিও অনুভব করি না। সেদিন আমার কোমড়ের বিষ-ব্যাথাটাও বেড়ে যায়। তাই কোমড়ের বিষ-ব্যাথা নিয়ন্ত্রণের জন্য হলেও আমাকে হাঁটতে হয়। আমার কোমাড়ের এই ব্যাথাটাও বাচ্চাকালের। আগে এটা শীতের সময় অনুভব করতাম। হাঁটাহাঁটি করলে চলে যেত। গরমকালে ব্যাথা টের পেতাম না। এখন শীত-গরম সব সময়ই কোমড়ের ব্যাথা আছে। তবে হাঁটলে আরাম, না হাঁটলে যন্ত্রণা। তাই আমার জন্য হাঁটাটাই হলো একটা চমকপ্রদ ঔষধ।

আগে বাইরে গেলে হোটেলে চা-পরোটা খাওয়ার একটা অভ্যাস ছিল। রামনগরে এখনো হোটেল খোলা। গরম পরোটা পাওয়া যায়। কিন্তু করোনা সতর্কটার পর হোটেলে যাওয়া বাদ দিয়েছি। ফুটপাটে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার অভ্যাস ঝেড়ে ফেলেছি। কেন না, যে সব কাপ কিংবা গ্যাসে চা দেয়া হয়, সেগুলোতে সারা দিনে অনেক মানুষের মুখ লেগে থাকে। তাদের কারো করোনা থাকলে তা ঐ কাপ-গ্যাসে লেগে যেতে পারে। চা ওয়ালারাতো সেগুলো ভাল মত ধোয় না। ফলে সেগুলোর মাধ্যমে অন্যের মধ্যে জীবানু ছড়িয়ে যেতে পারে। এমন আশংকা থেকে ফুটপাতে চা খওয়া বাদ, হোটেলে যাওয়াও বাদ। এখনলোক সমাগম থেকে দূরে থাকছি, হাঁটার পথেও লোকের কাছাকাছি না গিয়ে দূর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এভাবে সারা দিনের এক দেড় ঘন্টা বাইরে থাকেলেও বাকি সময়টা পুরোপরি হোমের মধ্যে থাকছি। যদিও এটাও হোমকোয়ারেন্টাইন না, তবুও বলা যায়, নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য আমি এখন এক রকম হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি।

আজহারুল আজাদ জুয়েল

                                                                          সাংবাদিক, কলামিষ্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।