দিনাজপুর বার্তা২৪.কম :- দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন বসতে যাচ্ছে আগামী ১৮ এপ্রিল। শুরুর দিনই শেষ হতে পারে ওই অধিবেশন। সংবিধানের ‘নিয়ম রক্ষায়’ করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই এই অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল এই অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের এক অধিবেশন থেকে আরেক অধিবেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের বেশি বিরতি দেওয়ার সুযোগ নেই। একাদশ সংসদের সর্বশেষ (ষষ্ঠ) অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়, যা ২২ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন বাতিল করেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় এমন সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হবে। আইনপ্রণেতাদের কাছে এমন বার্তা পৌঁছে দিতে হুইপদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত এবং ঢাকার আশপাশের সংসদীয় এলাকার সদস্যদের অধিবেশনে উপস্থিতিকে উৎসাহিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের বৈঠকের কোরাম পূরণ করতে সর্বনিম্ন ৬০ জনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। ওই হিসাব মাথায় রেখে সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, অধিবেশন যেদিন শুরু হবে সেদিনই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কার্যউপদেষ্টা কমিটি। সংবিধানে অন্য বিকল্প নেই বলেই অধিবেশনে বসতে হবে। সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী, চলতি সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে অধিবেশন শুরুর দিন শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর বৈঠক মূলতবি করা হয়। চলতি সংসদের সদস্য সাবেক ভ‚মিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (পাবনা-২) গত ২ এপ্রিল মারা যান। সংসদের বৈঠকের শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তার উপর আলোচনা হবে। শোক প্রস্তাব গ্রহণের পরপরই অধিবেশন শেষ করে দেওয়া হতে পারে। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আসন্ন অধিবেশনে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে না। গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। কেবলমাত্র সংসদ টেলিভিশনে এটি সরাসরি স¤প্রচার করা হবে। সংসদ সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত না থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কেবল অধিবেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করবেন। তবে সেক্ষেত্রেও সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের বসার ক্ষেত্রেও দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে। অধিবেশন শুরুর দিনেই শেষ হওয়ার সম্ভানা বেশি। অবশ্য বিকল্প হিসেবে বড় একটি বিরতি দিয়ে মুলতবি রাখার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, সংসদে সমাগম এড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি যাতে কম হয় তাও নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজন নেই এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসতে মানা করা হবে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন বলেন, এবার এই অধিবেশন উপলক্ষে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রবীণ এমপিদের সংসদে যেতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। হুইপরা তাদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর সবার স্বাস্থ্যগত অবস্থা জেনে নেয়া হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে সংসদে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সৈয়দা রাশিদা বেগম বলেন, সপ্তম অধিবেশনে অংশ নেয়ার জন্য আমাদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। যারা ঢাকায় আছেন শুধু তাদেরই সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ডাকা সংসদের বিশেষ অধিবেশন বাতিল করা হয়। গত ২২ মার্চ জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসার কথা ছিল। এতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারীর ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। দুই কার্যদিবস চলার কথা ছিল এই বিশেষ অধিবেশন। এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১৮ জুন সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসেছিল। যেখানে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ভাষণ দিয়েছিলেন।