দিনাজপুর বার্তা২৪.কম :- মুক্তিযুদ্ধের পর মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণে মাইন বিস্ফোরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার বৃত্তান্ত পাঠ্য পুস্তকে তুলে ধরার দাবী জানিয়ে দিনাজপুরে পালিত হয়েছে মহারাজা স্কুল দুর্ঘটনা দিবস। এ উপলক্ষ্যে ৬ জানুয়ারি শনিবার স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মৃতি চারণ ও আলোচনা সভায় বক্তাগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পরেও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যার সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তবে মহারাজা স্কুলে মাইন বিস্ফোরণে এক সাথে ৫-৭শ মুক্তিযোদ্ধার হতাহত হওয়ার মত বড় ঘটনা কোথাও ঘটে নাই। এতবড় বেদনাদায়ক ঘটনাকে সরকারিভাবে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাচ্ছে।
৬ই জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক সফিকুল হক ছুটুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আজহারুল আজাদ জুয়েলের সঞ্চালনে দিনাজপুর প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত স্মৃতি চারণ ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আলতাফ হোসাইন,দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরুপ বকসী বাচ্চু, দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ, জেলা উদীচীর সভাপতি রেজাউর রহমান রেজু, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, তেভাগা চেতনা পরিষদের সদস্য সচিব রেয়াজুল ইসলাম রাজু, বাসদের সারোয়ারুল হাসান ক্লিপটন প্রমুখ।
কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলতাফ হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এমনভাবে বদলে যাচ্ছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চার মুলনীতি উপেক্ষিত থাকছে। সমাজতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি যা বর্তমানে উপেক্ষিত।
নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ বলেন, মহারাজা স্কুলের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে ক্যাম্পেইন করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত স্মৃতিসোধ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরুপ বকসী বাচ্চু বলেন, শহীদের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
দিনাজপুর জেলা উদীচীর সভাপতি রেজাউর রহমান রেজু বলেন, একাত্তরের আগে ও পরে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে অঞ্চলভিত্তিক সংঘটিত সকল ঘটনাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। এইসব ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স¦ার্থে তুলে ধরতে হবে।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ,মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ঐ শক্তির বিরুদ্ধে রায় দিতে হবে।
অন্যান্য বক্তাগণ পাঠ্যপুস্তকে মহারাজা স্কুলের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরার আহ্বান জানান এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে মক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ তুলে ধরার তাগিদ দেন। স্মৃতি চারণ ও আলোচনা সভা শেষে শেখ ছগির আহমেদ কমলের নেতৃত্বে আবৃত্তি কাননের শিল্পী সামিনা আলরাজী শিশির, শিরিন আখতার পারভীন, সুপ্রিতী গোস্বামী প্রিয়া, কাদিরা চৌধুরী লাজু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতা আবৃত্তি করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে শায়িত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি ও সকাল সাড়ে ১০টায় মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে সফিকুল হক ছুটু ও আজহারুল আজাদ জুয়েলের নেতৃত্বে স্মৃতি পরিষদের সদস্যরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান আলতাফ হোসাই। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সবা শেষে বাদ জোহর মহারাজা স্কুল জামে মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়।