দিনাজপুর বার্তা ২৪ | Dinajpur Barta 24

ভাইয়ের হাতে বোনের রাঁখি বাঁধা শুধু করোনা
মোফাচ্ছিলুল মাজেদ নভেম্বর ৫, ২০২১, ১০:০২ অপরাহ্ণ | পড়া হয়েছে ৩০০ বার |

দয়ারাম রায় :

মহামারী করোনা কালে রাঁখি বন্ধন গত বছর বোন ভাইয়ের হাতে রাঁখি পরাতে

যায়নি এক বিভিন্ন ভাবে মানবতা হীনতার ঘটনা মানব জীবনকে দেখতে

হয়েছে। আর যেন মানবতা হীনতার কোন ঘটনা মানব জাতিকে আর দেখাতে

না হয়। মানব জীবনের শুভ কাল অতিব পবিত্র, স্বার্থপরতার ছায়াহীন। সারাক্ষনের

নিষ্পাপ সাথী ভাই-বোন। তারা পৃথিবীটাকে নতুন ভাবে জানতে চায়। ভাই-

বোনের অকৃত্রিম বন্ধন যা তৈরী হয় কোন রকম স্বার্থপরতা, নির্ভরতা ও চাওয়া-

পাওয়া ছাড়া। মানবজীবনে স্বাভাবিক নিয়মে এক সময়ে এই বন্ধন আলগা

হয়ে যায়। ওই দুটি কঁচি হাত শক্ত হয়। আর সেই শক্ত হাত পৃথিবীর নানা

বন্ধনে,নানা কাজের আবর্তে জড়িয়ে পড়ে। শিশুকালের বন্ধনের আবর্তে এভাবে

হারিয়ে যাবে, যাতে সেটা না হয় সে জন্যেই বুঝি কোন এক সুদূর

অতীতে শুরু হয়েছিল রাঁখি বন্ধন। তবে কবে কোথায় কখন এই রাঁখি বন্ধনের

প্রথা শুরু হয়েছিল সেটা নির্ণয় করা কঠিন। তবে শ্রাবণী পূর্ণিমায়

কৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা দিবসের সঙ্গে এর দিন ক্ষনের মিল থাকায় একটু ধারণা করা

যায় এটা মহাকাব্য মহাভারতের আমলের। তাতে করে নিঃ সন্দেহে ধরে নেয়া যায়

পাঁচ হাজার বছর আগেই রাঁখি বন্ধন শুরু হয়েছিল। এ দুটি আপন ভাই

বোনের মধ্যে নয়। রাঁখি ভাই বোনের ভেতর। একটি হলো রাজপুতনার এক রাজা

বাপ্পাদিত্যের ক্ষমতা গ্রহনের দিন, গৌরবর্ণ এই রাজপুত ভাইয়ের কপালে ও

হাতে আদিবাসী কালোভীল,বোন নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে রাঁখির চিহ্ন এঁকে

দেয়। অপরটি মোঘল আমলের চিতরের রানী কঙ্কাবর্তীর প্রেরিত রাঁখি পেয়ে

তাকে রক্ষার আহ্বানে ছুটে আসেন স¤্রাট হুমায়ুন। তিনি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কালে বাঙ্গালী মুসলমান ভাইদের হাতে পরানোর জন্য হিন্দু বোনদের

হাতে রাখী তুলে দিয়েছিলেন। ইতিহাসের এই গন্ডি ছাড়া আজ পারিবারিক

গন্ডিতে ছড়িয়ে পড়েছে রাখী বন্ধন অনুষ্ঠান। আপন বোন এই শ্রাবনী

পূর্নিমা তিথিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজ ভায়ের হাতে পরিয়ে দেয় রাখী।

এই রাখীর অর্থ করেছেন বহুভাষাবিদ হরিচরন বন্দোপাধ্যায় রক্ষাসূত্র বা মঙ্গল

সূত্র অথ্যাৎ এ যেন ভাই কে সকল বিপদ থেকে রক্ষার, ভায়ের মঙ্গলের জন্য বোনের

দোয়া। এ অনুষ্ঠানে ভাইকে মিষ্টি মুখ করিয়ে হাতে বেঁধে দিতে পারেন লাল

রঙ্গের এই মঙ্গল সূত্রটি। যদি কেউ আরো বর্ণাঢ্য করতে চান, তিনি ভাইকে

পরাতে পারেন সোনার চেইন, দিতে পারেন নতুন কাপড়ে সাজিয়ে বানাতেন

কোন উপহার, আপনার পছন্দ মতো। এ ব্যাপারে অনেক বোন প্রশ্ন তুলেছেন

ভায়ের জন্য ভাই ফোটা বোনের জন্য বোন ফোটা নেই কেন? রাখীর এই লাল

রঙ্গের সুতোটি সাধারনত বোন ভাইয়ের হাতে পরিয়ে দেন। কিন্তু কোন ভাইও

ইচ্ছে করলে পরিয়ে দিতে পারেন বোনের হাতে। যদি সে তার নিজের বোন না

হয় তাহলে এর ভিতর দিয়েও সম্পর্কটি গড়ে উঠবে রাখী বোনের । অনেকে

আবার এই রাখীবন্ধন অন্য ভাবে আয়োজন করে। সমস্ত ঘরদোর সুন্দর করে

সাজায়। আলপনা আঁকে ভাইকে ধান-দূর্বা দিয়ে বরণ করে নেয়। ধান হচ্ছে

লক্ষীর প্রতীক অথ্যাৎ বোন চাইছে ভায়ের সংসার প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। সব

অভাব অনটন ঘুচে যাক। আর সবুজ দুর্বা দেয়া হয় সতেজ প্রাণ ও দীর্ঘ

জীবন কামনায়, কপালে চন্দন পরিয়ে দেয়া হয় পবিত্র সুন্দর ও যশ-মান লাভ করার

বাসনায়। চিরকালই ফুলকে সবাই সুন্দরের প্রতিক হিসেবে জানে। তাই

ফুলের মালাও পরানো হয়। প্রদ্বীপ জ্বলানো হয়, জীবন থেকে অন্ধকার দুঃখ বেদনা

দূর হয়ে গিয়ে জীবন আলোয় আলোয় উজ্জীবিত হয়ে ওঠার আশায়। আলোই

তো জীবনের প্রতীক। আলোর পথে, সত্যের পথে মঙ্গল ময় জীবন কামনায়

প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে দেয়া হয় ভায়ের সামনে। তার পর হাতে রাখী বেঁধে দিয়ে

রাখীতে আবদ্ধ করা হয়। বোন তার ভাইকে সামর্থ অনুযায়ী উপহার দেয়। আবার

ভাইও বোনকে উপহার দেয়। এর পর ভাইকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। উপস্থিত

সকলেই নানা প্রকার মিষ্টি, ফল ও নানাবিধ সুস্বাধু খাদ্য এবং সুপেয়

পানীয় অপ্যায়িত করে। ভায়ের স্ত্রীকেও উপহার দেয়া হয়। ভায়ের গোটা

পরিবারকেই শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনন্দময় সুখী পরিপারিক জীবনের কামনায়।

নাচ-গান প্রভূতি নানা রকম আনন্দময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই

ভাবে আনন্দের ভেতর দিয়ে ভাই বোনের ও প্রিয় জনের মিলনের দিনটি

অতিবাহিত হয় সুন্দরবন একটি সুখ স্মৃতি নিয়ে। হিংসা-বিদ্বেষহীন

হয়ে পৃথিবীতে শান্তির ছোঁয়া বয়ে নিয়ে আসুক এই রাখী বন্ধন

অনুষ্ঠানটি। তবে বলা প্রয়োজন রাখী বন্ধন ও ভাই ফোটা এক নয়।

এই পাতার আরো খবর -
৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
দিনাজপুর, বাংলাদেশ
ওয়াক্তসময়
সুবহে সাদিকভোর ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ
সূর্যোদয়ভোর ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ
যোহরদুপুর ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
আছরবিকাল ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১৪ অপরাহ্ণ
এশা রাত ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদকীয়