দিনাজপুর বার্তা২৪ ডেক্স // থমকে আছে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার আসামির মামলাগুলো। তাতে ঝুঁকি বাড়ছে। সরকার ওসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে একাধিক উদ্যোগ নিলেও ধীরগতিতে চলছে ওসব মামলার কার্যক্রম। ইতিমধ্যে ওসব মামলার বিচার কার্যক্রম কেন ব্যাহত বা ঝুলে আছে তা একাধিক বৈঠকে পর্যালোচনা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওসব মামলার সার্বিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য সরকারি কৌঁসুলি ও পুলিশ অধিদফতরকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কারাগারে ছড়িয়ে থাকা ৮৩ দুর্ধর্ষ আসামির দ্রুত বিচারের স্বার্থে নির্ধারিত কারাগারে স্থানান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই সাথে মামলার বিবরণ ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কী করে তা দ্রুত নিষ্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে আইনি মতামতসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেয়া হয়েছে। আর তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ে যোগাযোগও অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কবে নাগাদ ওসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে সংশ্লিষ্টরা তা বলতে পারছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকেই দুর্ধর্ষ আসামিদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একসাথে কিংবা প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে দুর্ধষ আসামিদের নামে বিভিন্ন আদালতে চলমান আলোচিত জঙ্গি হামলা বা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট মামলা ও আসামিদের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই সংক্রান্ত নির্দেশনা পুলিশ অধিদফতরেও পাঠানো হয়েছে। জটিল ওসব মামলা এখনো তদন্তাধীন, বিচারাধীন ও বিচার প্রস্তুতির অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেগুলোত ওসব আসামিদের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কারণ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির আসামিদের আদালতে হাজিরার দিন আনা-নেওয়ার সময় পুলিশ তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকলেও নির্ধারিত দিনে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই তাদেরকে আদালতে হাজির করতে হয়। আর প্রিজন ভ্যানগুলো পুরনো হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ওসব ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও সুপারিশ করা হযেছে।
সূত্র জানায়, গাজীপুর কারাগার থেকে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ময়মনসিংহ আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়ার পথে বিগত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার পর সরকার দেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা অন্য দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয়। পাশাপাশি ওসব আসামিকে নির্দিষ্ট কোনো আদালতে হাজির করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। আর ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনে একই আদালতে এনে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামত নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি টঙ্গীতে মৃত্যুদ-ে দ-িত মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার একাধিক মামলার আসামিদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা ৮৩ দুর্ধর্ষ আসামিকে নির্ধারিত কারাগারে স্থানান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। যাদের বিরুদ্ধে নিকটস্থ থানায় বা আশপাশের থানাগুলোতে মামলা বেশি রয়েছে এমন আসামিদের ওই কারাগারে আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে এমন আসামিদের চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া কুমিল্লা কারাগারে ২ জন, কক্সবাজার কারাগারে ২ জন, সিলেট কারাগাওে ৬ জন, নীলফামারী কারাগারে ৩ জন, খুলনা কারাগারে ৭ জন, রাজশাহী কারাগারে ৯ জন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৬ জনসহ মোট ৮৩ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ১০ থেকে ২০টি করে মামলা রয়েছে। আর বিচারাধীন মামলাগুলোর কার্যক্রম চলবে নির্দিষ্ট জেলাতে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি দেশের কারাগারে আটক জঙ্গি বন্দিদের হালনাগাদ তালিকা সূত্রে জানা যায় গাজীপুরের কাশিমপুরে হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছে জঙ্গি এনায়েত উল্লাহ ওরফে জুয়েল ওরফে ওয়ালিদ। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩১টি মামলা রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে হওয়া ওসব মামলার ২০টিতে তার মৃতুদ-াদেশ হয়েছে। অপর ১১টি মামলা এখনো বিচারাধীন থাকায় ওই আসামিকে গাজীপুর থেকে বিভিন্ন জেলার আদালতে হাজিরা দেয়ার জন্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। আরেক দুর্ধর্ষ জঙ্গি আবদুল আজিজ ওরফে হানিফ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৃহত্তর সিলেট জেলার (সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) বিভিন্ন থানায় দ্রুত বিচার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ ২২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ৭টি মামলায় তার ১০ থেকে ১৪ বছরের কারাদ-ের আদেশ হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে হওয়া ওসব মামলাগুলোর ১৩টির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। মাত্র দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ওই ধরনের অন্তত ৮৩ দুর্ধর্ষ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এক জেলার কারাগারে বন্দি থাকলেও অন্য জেলার আদালতে নিয়মিত হাজিরার জন্য ওসব আসামিকে কারা কর্তৃপক্ষকে আনা-নেয়া করতে হয়। তাতে নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি দীর্ঘসময়ও ব্যয় হয়। ওই জন্য ওসব মামলার দীর্ঘসূত্রতা দূর করে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু গত দুই বছর আগে নেওয়া ওসব উদ্যোগ এখনো কার্যকর হয়নি।
এদিকে দুর্ধষ আসামিদের বিচার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো দুর্ধর্ষ জঙ্গি আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে চলা মামলার হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার চার্জশিট ও সাক্ষী যথাসময়ে উপস্থিত করাসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে হাজিরার দিন আনা-নেয়ায় বিশেষ ঝুঁকি পোহাতে হয়। সেজন্য দেশের বিভিন্ন আদালতে চলমান দুর্ধর্ষ আসামিদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলার তথ্য-উপাত্তই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে ওসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সে ব্যাপারে আইনি মতামত দিতে বলা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেবে।