ঢাকাবুধবার , ৮ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনায় নতুন বার্তা

মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
এপ্রিল ৮, ২০২০ ১২:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজহারুল আজাদ জুয়েল :-

একটা সময় আমাদের সমাজটা যথেষ্ট রক্ষণশীল ছিল। সেই ছোট বেলার কথা বলছি। তখন দেখেছি রক্ষণশীল মনোভাবের কারনে অনেক মহিলা পুরুষ মানুষের ছায়া মাড়াতে চাইতেন না। পাপ হতে পারে এমন ভয়ে বয়স্ক মহিলাদের অনেকেই ছেলেদের থেকে অনেক দূর দিয়ে চলাফেরা করতেন। তখন বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে বোরকা পড়ার প্রচলন ছিল। রিক্সায় চড়লেও পর্দা দিয়ে চলাফেরা করতেন। রক্সার মধ্যে একটি শাড়ি পেঁচিয়ে পর্দার রুপ দেয়া হতো, যেন তাদেরকে বাইরের কেউ দেখতে না পায়।
তখন শুধু যে বয়স্ক লোকদের থেকেই মহিলারা দূরে থাকার চেষ্টা করতেন না তা নয়, অল্প বয়সী ছেলে, যেমন ফোর-ফাইভে পড়া ছেলেরাও রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে বয়স্ক মহিলারা, যারা হয়ত সম্পর্কে তার দাদী, নানীর মত হবেন তারা তার ছায়া এড়িয়ে চতেন। তখনকার মৌলভীদের আলতু-ফালতু বয়ানের কারনে এমনটা হতো। আমার ছোট বেলায় এই রকমটি বহুবার দেখেছি। হয়ত রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছি, অপরদিক থেকে কোন মহিলা আসছেন, দেখি যে তিনি আমার থেকে অনেক অনেক দূর দিয়ে সরে যাচ্ছেন। তখন ব্যাপারটা বুঝতাম না। এখন বুঝি যে, ধর্মীয় বোধ থেকে তারা ওটা করতেন।
মহিলাদের ঐ আচরণে ব্যক্তিগতভাবে আমার তখন বেশ হাসি পেত।
এখন মনে হচ্ছে ঐ আচরণ যদি এখনো থাকত তাহলে করোনা মোকাবেলায় বেশ কার্যকর হতো। মুশকিল হলো তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় যা ছিল, এখন তেমনটি নেই। এখন নারী-পুরুষ ঘেষাঘেষি করে চলেন। জীবীকার তাগিদে, প্রয়োজনের তাগিদে এবং জনসংখ্যার চাপে এখন ইচ্ছে করলেও কারো ছায়া না মাড়ানোর উপায় নেই। লোকজনকে পথ পাড়ি দিতে হয় অনেক ভিড় ঠেলে। বাসে, ট্রেনে দূর পথে যেতে হয় গাদাগাদি করে। তখন ছায়া না মাড়িয়ে চলাচল করা গেলেও এখন গাদাগাদি করে পথ পাড়ি দেয়া ছাড়া বিকল্প কিছু দেখা যায় না। এই যখন অবস্থা, তখন ভিন্ন বার্তা নিয়ে এসেছে করোনা ভাইরাস কোবিদ-১৯। এই ভাইরাস দ্রæতগতিতে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে আক্রান্ত করছে। হত্যা করছে হাজার হাজার মানুষকে। গত ডিসেম্বর হতে শুরু হওয়া এই ভাইরাসে সারা দুনিয়ায় ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ লাখ লোক আক্রান্ত এবং ৭৫ হাজার লোকের প্রান সংহার হয়েছে। বিশে^র ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে যাওয়া ভাইরাসে পুরো পৃথিবী অচল হয়ে গেছে, সরকার প্রধানরা বাধ্য হয়েছেন নিজেদের দেশকে লকডাউন করতে। শত শত কোটি মানুষের ভয়াবহ রকমের অসহায় অবস্থা চলছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
সামান্য একটা ভাইরাস, কিন্তু তার কাছেই মানুষের চরম অসহায়ত্ব অকল্পনীয়। এখনো এর বিরুদ্ধে প্রতিষেধক আবিস্কার হয় নাই। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট ঔষধ ও পদ্ধতি বের করা যায় নাই। এখন পর্যন্ত এটাই সবাইকে জানানো হচ্ছে যে, করোনা হতে রক্ষা পেতে হলে মানুষকে একজনের হতে আরেকজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাকে বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে চাইলে দূরত্ব বজায় রেখে বলতে হবে এবং কথা বলার সময় মাক্স ব্যবহার করতে হবে। চলাফেরার বেলায়ও সবাইকে মাক্স ব্যবহার করতে হবে এবং হাঁচি-কাশিতে রুমাল অথবা টিসু দিয়ে মুখ ঢাকা দিতে হবে, যেন হাঁচি-কাশির সময় যে থুথু, শ্লেস্মা, সর্দি, কফের অনু বের হয় তা ছড়িয়ে অন্যের গায়ে না পড়ে। ঐ অনুর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস বা কোবিদ-১৯ নামে ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি ঐ লোক করোনায় আক্রান্ত থাকেন।
কেউ কেউ নিজের বেলায় মনে করতে পারেন যে, তিনি তো করোনায় আক্রান্ত নন, করোনার কোন লক্ষণ তার মধ্যে নেই। তাই তার বেলায় ঐসব নিয়ম না মানলেও চলে। কিন্তু তার ঐ ভাবনা হতে পারে বিপজ্ঝনক। এটা সত্য যে, একজন মানুষ করোনায় আক্রান্ত কি না তা বোঝার উপায় নেই লক্ষণ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে লক্ষণ প্রকাশ না হলেও আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকেই তিনি বিপজ্জনক হয়ে পড়বেন অনাক্রান্ত লোকদের জন্য। তিনি তার অজান্তেই করোনা ছড়াতে থাকবেন। অথচ তিনি তা বুঝতে পারবেন না। সে কারনেই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা আক্রান্ত এলাকার জনগোষ্ঠীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলছেন, যাতে সত্যিকারের আক্রান্ত কারো দ্বারা সুস্থ্যরা আক্রান্ত না হন। করোনা থেকে রক্ষা পাবার আরেকটি শক্তিশালী পদ্ধতি হলো সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোওয়া। বাইরে গেলেও হাত ধুতে বলা হচ্ছে, বাড়িতে এলেও হাত ধুতে বলা হচ্ছে। যে কোন কিছু স্পর্শ করার আগে ও পরে সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভাল মত কচলিয়ে হাত ধুয়ে নিতে বলা হচ্ছে।
বিশ^ সাস্থ্য সংস্থা মানুষকে ঘরে থাকতে বলছে। মানুষ ঘরে থাকলে করোনা ভাইরাস বাইরে ছড়াতে পারবে না। ফলে ভয়ংকর এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সহজ হবে। সেই কারনে ধর্মীয় উপাসনা বাড়িতে করার জন্যও বলা হচ্ছিল এতদিন ধরে। কিন্তু বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এইসব নির্দেশনা মানুষ সহজে শুনতেই চাইছিল না। যে কারণে দেশে ক্রমাগতভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুহারও বেড়ে চলছে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মসজিদে নামাজ না পড়ে বাড়িতে পড়ার বিপরীতে বরং উল্টো চিত্র দেখা গেছে। মসজিদে আগের তুলনায় নামাজী লোকের সংখ্যা বেড়েছে। এ এক অদ্ভুত আচরণ মানুষের। যা তাকে নিষেধ করা হচ্ছে তাই সে বেশি করে করছে! এর ফলে দেশের মসজিদগুলো ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম সুতিকাগার হয়ে উঠেছে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ৭এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৬৪ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। অর্থাৎ করোনায় বিশ^ পরিস্থিতির যেমন অবনতি হচ্ছে তেমনি অবনতিশীল অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশও। এমন কঠিনতর পরিস্থিতির মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নামাজ সংক্রান্ত এক ধরনের বিধি নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মসজিদে নামাজ হবে তবে ৫ জনের বেশি কেউ সেই নামাজে অংশ নিতে পারবে না। কারা কারা নামাজে অংশ নিবে তাও সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবারের নামাজে অংশ নিতে পারবেন আরো ৫জন অর্থাৎ ১০জন।
ছেলেবেলায় মহিলারা ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। দেখা যাচ্ছে যে, তখন যদি করোনা ভাইরাস থাকত তাহলে সেটা ঐ ভাইরাস মোকাবেলার জন্য খুব ভাল একটা পদ্ধতি হতো।
এখনো মহিলারা বোরকা পড়েন বটে এর মিনিংটা বদলে গেছে। এখন এটা অনেকটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। তখন বোরকার মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের যে দূরত্ব তৈরী হতো সেটা এখন নেই। যদি সেটা থাকত তাহলে চলতি সংকট মোবালোর জন্য সেটা খুব কার্যকর হতো। অবশ্য এখন শুধু নারী-পুরুষের দূরত্ব থাকলে হবে না, নারীর সাথে নারীর, পুরুষের সাথে পুরুষেরও দূরত্ব থাকতে হবে। অর্থাৎ দূরত্ব হবে জনে জনে। প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রত্যেকের দূরত্ব হবে কমপক্ষে তিন হাত। একজন আরেক জনের তিন হাত দূরে থাকবেন, তিন হাত দূর দিয়ে হাঁটবেন, তিন হাত দূর থেকে মুখে মাস্ক লাগিয়ে কথা বলবেন। এর সাথে সাথে প্রত্যেকে তাদের নিজেদের ঘর-বাড়ি জীবানু নাশক দিয়ে পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং ঘন ঘন সাবান-পানি দ্বারা হাত ধুয়ে নিজেকে ও পরিবারকে করোনা মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
করোনা আমাদের কাছে নতুন বার্তা এনেছে পরিচ্ছন্ন হওয়ার, পরিস্কার থাকার, দূরে থাকার, ঘরে থাকার, মাস্ক পরার। আমার ছেলে সাকিব আজাদ লায়ন এখন অনার্সের ছাত্র। পীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ইংরেজী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সে সহজে বাড়ি থেকে বের হতে চায় না বলে এক সময় খুব বকাঝকা করতাম। অথচ এখন আর বকি না। কারন, এখন বাড়িতে থাকাই তার জন্য এবং আমাদের সবার জন্য ভাল। এই মুহুর্তে সব ছেলেদের উচিত তার মত করে ঘরে থাকা। সে সারাদিন ঘরে থাকে আর কম্পিউটার নাড়াচাড়া করে। কম্পিউটারে সে কি করে সেই জানে, আমার জানা নেই। আগে এ নিয়ে বকলেও এখন মনে হচ্ছে সেই ভাল করেছে। কম্পিউটারে সারাদিন মনোযোগ দিয়ে থাকার কারনে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারছে। করোনা থেকে মুক্ত থাকার মোক্ষম দাওয়াই হলো এটাই। ঘরে থাকো, নিজের বাড়িতে থাকো, পরিচ্ছন্ন থাকো আর ঘর, বাড়ি, দুয়ার পরিস্কার রাখো।

আজহারুল আজাদ জুয়েল
সাংবাদিক, কলামিষ্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।