ঢাকাশনিবার , ১৮ জুলাই ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আবুল কাসেম অরু এক বীর মুক্তিযোদ্ধার গল্পগাঁথা

মোফাচ্ছিলুল মাজেদ
জুলাই ১৮, ২০২০ ১১:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজহারুল আজাদ জুয়েল :-

রাজনীতির সাথে সব সময়ই আছেন, কিন্তু নেতৃত্বে থাকেন না। তাই রাজনৈতিক পরিচিতি তার কম। তাঁর পরিচিতি হলো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। ‘অরু ভাই’ বললে সবাই চেনেন। যাকে নিয়ে এই লেখার অবতারণা তার পুরো নাম আবুল কাশেম অরু। দিনাজপুর জেলার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ি জেলা শহরের বালুয়াডাঙ্গায়। উপজেলা কমান্ডার হিসেবে বিরলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষতার সাথে। বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নাধীন মোস্তফাবাদ গ্রামে ১৯৫১ সালের ২ জানুয়ারি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম তার। পিতার নাম আমিনুর রহমান চৌধুরী, যিনি গোবিন্দপুরের জমিদার পরিবারের বংশধর। মায়ের নাম তাহেরা খাতুন।
আবুল কাশেম অরু স্কুল পর্যায়ের লেখাপাড়া শেষ করেন মঙ্গলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৬৬ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৬৬ সালেই ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হন দিনাজপুর সরকারি কলেজে। এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র তিনি। কলেজে ভর্তি হয়েই জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক উত্তাপে। ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে ছয় দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে সার্বক্ষণিক কর্মসুচিতে সক্রিয় থাকেন। মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন প্রায় প্রতিদিন। সাথে সাথে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতিও চালাতে থাকেন। তার মতে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই সত্তুরের শেষের দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃৃৃৃৃত্ব দিনাজপুর জেলার ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল। কারা, কোথায় প্রশিক্ষণ নিবে তাদের নাম তালিকাও ঠিক করে দিয়েছিল। তখন সেন্ট্রাল নেতাদের কাছে জেলার নেতাদের প্রশ্ন ছিল, অস্ত্র পাব কোথায়? সেন্ট্রাল নেতারা এর সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিয়ে বলেছিলেন, সশস্ত্র বিপ্লবে সময় মত অস্ত্র পাওয়া যায়। এরপর তো আর কোন কথা থাকে না। আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে আন্দোলনের ইস্যুতে উত্তেজনা আর নানান ঘটনা দ্রুতই ঘটতে থাকে এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পর প্রেক্ষাপট দ্রুত পাল্টে যায়। তখন আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে দিনাজপুর জেলায় জয় বাংলা বাহিনী গঠন করি এবং এই বাহিনীর মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত থেকে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলি করতে থাকে এবং ২৬ মার্চ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। এর বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিরোধ গড়ে উঠে। ২৮ মার্চ হানাদার বাহিনীর মূল ঘাঁটি কুঠিবাড়ি দখল চলে আসে বাঙালিদের হাতে। কুঠিবাড়ি দখলের যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা মারা যায় এবং তাদের অস্ত্র ভান্ডারের সকল অস্ত্র বাঙালিরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাঞ্চন রেল ষ্টেশন ও তৎ সংলগ্ন রঘুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবুল কাসেম অরুর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি কুঠিবাড়ি থেকে প্রাপ্ত পাকিস্তানি হানাদারদের অস্ত্র কাঞ্চনে সরিয়ে নিতেও সহযোগিতা করেন।
কুঠিবাড়ি দখলের মধ্য দিয়ে দিনাজপুর জেলা শহর ২৮ মার্চ হতে ১৩ এপ্রিল মুক্ত এলাকায় পরিণত হয়। কিন্তু ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পর এই অবস্থা উল্টে যায়। পাকিস্তানি সেনারা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট হতে ব্যাপক শক্তি সম্ভারে অগ্রসর হয়ে ঐদিন বিকেলের মধ্যে দিনাজপুর শহরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। সন্ধ্যায় তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে বোমা নিক্ষেপ করে এবং রাতে শহর দখল করে নেয়।
পাকিস্তানি সেনাদের এগিয়ে আসার খবরে দিনাজপুর শহরের বাঙালি পরিবারগুলো ১০ এপ্রিল হতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে গ্রামের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। আবুল কাসেম অরু ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিলেও ১৪ এপ্রিল পুনর্ভবা নদী পার হয়ে বিরলের মঙ্গলপুরে নিজ বাড়িতে পালিয়ে যান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা বিরল ও বোচাগঞ্জের দিকে এগিয়ে আসছে এমন খবর পেয়ে আবুল কাসেম অরু তার চাচা সমারু চৌধুরীর পুত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী তসিবুল আলম চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে ১৫ এপ্রিল মঙ্গলপুর ত্যাগ করেন এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের রাধিকাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হন। রাধিকাপুরে অবস্থানকালে নিকটবর্তী ঠনঠনিয়াপাড়া নামক স্থানে ইপিআর বাহিনীর সাথে হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর নিক্ষিপ্ত শেল রাধিকাপুর রেল স্টেশনে এসে পড়লে বাঙালি শরনার্থীদের অনেকে নিহত হয়। এমতাবস্থায় অরু রাধিকাপুর থেকে প্রায় মাইল দেড়েক দূরের পরমেশ^রপুর নামক জায়গায় সরে যান। সেখানে মি. জর্জ দাস, আব্দুস সাত্তার ঋষিসহ অনেকের সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
পরমেশ^রপুরে অবস্থানকালে শরনার্থীদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেন আবুল কাশেম অরু। মে মাস পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। জুন মাসে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মকছেদুর রহমানের মাধ্যমে সংবাদ পান যে, ছাত্রলীগের সাথে জড়িত সবাই যেন সশস্ত্র ট্রেনিংয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
‘আমি প্রস্তুত ছিলাম। সম্ভবত জুলাই মাসে আমাকে এবং আরো অনেককে রায়গঞ্জ হতে ট্রেনিংয়ের জন্য সেনাবাহিনীর বাসে পাঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয়’ জানান আবুল কাসেম অরু।
জুলাই মাসে অরুসহ অনেক যুবক ও ছাত্রলীগ কর্মীকে সেনাবাহিনীর বাসযোগে জলপাইগুড়ির পাঙ্গা নামক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগের রিক্রুটিং ক্যাম্প ছিল, যার পরিচালনায় ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল হক মনিসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এই ক্যম্প বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) ক্যাম্প নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে উত্তর প্রদেশের দেরাদুন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো ছত্রলীগ কর্মীদের। অরু জানান, তাকেসহ ছাত্রলীগের অনেককে বিমানযোগে দেরাদুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা বাগডোগড়ায় বিমানে উঠেছিলেন। সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের শাহরানপুর বিমানবন্দরে নামানো হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় দেরাদুনের গভীর অরন্য বেষ্টিত পাহাড়ে। ভারতীয় সেনা কমান্ডার জেনারেল উবানের নেতৃত্বে এক মাসের উচ্চতর গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয় দেরাদুনে। এই প্রশিক্ষণে গেরিলা লিডারশিপ, আধুনিক অস্ত্র ও ওয়ার্লেসের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ১০ জন, ১২ জন, ১৪ জনের ছোট ছোট গ্রুপ বা টিম গঠণ করে দেয়া হয়, যাদেরকে পরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে পাঠানো হয় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনার জন্য। তাদের কাজ ছিল অবরুদ্ধ বাংলাদেশের ভিতরে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতিতে ঝটিকা অপারেশনে নাস্তানাবুদ ও ভীত-সন্ত্রস্ত করা।
এই রকম একটি গ্রুপের লিডার করা হয় আবুল কাশেম অরুকেও। তার প্রথম অপারেশন ছিল দিনাজপুর সদরের খানপুর এলাকায় যা সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত হয়েছিল। অবশ্য অরু বলেন, দেরাদুন থেকে আমাদেরকে কোন বর্ডার দিয়ে ঢুকানো হবে তা আগের থেকে জানানো হয়নি। আমাদেরকে বর্ডার এলাকায় নামাসোর পর অভ্যর্থনা জানান দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের অন্যকম প্রভাবশালী নেতা আব্দুত তোয়াব। তিনিই বললেন, তোমরা ভিতরে যাবে, তোমাদের জন্য শেল্টার রেডি আছে। আমরা রাত ৩টায় বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকি এবং খানপুরের আজাহার আলী মাষ্টারের (বাংলা স্কুলের শিক্ষক) বাড়িতে শেল্টার নেই। ঐ রাতে বিশ্রামে থেকে পরের রাতে অপারেশনে যাওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু শেল্টার নেয়ার রাতেই ভোর ৫টার দিকে হানাদার বাহিনীর ১৫-২০ জনের একটি দল গ্রামটি ঘেরাও করে এবং বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালানোর চেষ্টা চালায়। একজন কিশোরের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনা আসার সংবাদ পাই। তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল। এ অবস্থায় তাদের যুদ্ধ করে আমরা পারব না। তাই আমরা একটি বড় পুকুরের দিকে সরে গিয়ে পরে সীমান্ত পার হই। সম্ভবত কোন গোপন ইনফর্মারের মাধ্যমে খবর পেয়েই পাকিস্তানি সেনারা সেদিন ঐ গ্রামে অভিযান চালিয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে আমরা সরে আসতে সমর্থ হই।
এই ঘটনার পর আবুল কাসেম অরুর ধারণা হয় যে, এই এলাকা তার অপরিচিত যা তার জন্য সুবিধার চেয়ে অসুবিধার কারণ হয়েছে। সেই কারণে তাকে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ায় ফিরে তার উচ্চতর কমান্ডারের কাছে আবেদন জানান যে, তাকে যেন বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল এলাকায় অপারেশনের জন্য পাঠানো হয়। কারণ ঐ জায়গাগুলো তার পরিচিত। তার সেই আবেদন মঞ্জুর হয় এবং পরবর্তী সময়ে তিনি বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল এলাকায় হানাদার বিরোধী অপারেশন পরিচালনা করেন। এরপরেও তার টিমের উপর বিপর্যয় নেমে এসেছিল আরো অনেক অপারেশনে। নভেম্বর মাসের কোন একদিন রাত ১২টার দিকে তিনি তার দল নিয়ে বোচাগঞ্জের মাহেরপুর থেকে কাহারোলের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় চেঙ্গন বিলের কাছে ফুলবাড়ি হাট ক্যাম্প এলাকা হতে পাকিস্তানি সেনারা তাদের দিকে অকস্মাৎ গুলি বর্ষণ করে। ঘণ অন্ধকারে তারা বুঝতে পারেন নাই যে, তারা হানাদারদের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। তাদের সাথের গাইডার তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। নিজেরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন অকস্মাৎ আক্রমণে। তবে সৌভাগ্য বশত সেই ভয়াল রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবেলা করে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
বোচাগঞ্জের মাহেরপুর, বিরলের মঙ্গলপুর, কাহারোলের রাজুরিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় বেশি অপারেশন পরিচালনা করেছেন তিনি। অপারেশন পরিচালনার জন্য শেল্টার নিয়েছেন বন্ধুগাঁও গ্রামের লারু চৌধুরীর বাড়ি, গমিরগ্রামের জাকির মোহাম্মদের বাড়ি, রঘুনাথপুরের শুকু চেয়ারম্যানের বাড়ি, মঙ্গলপুরের সোলায়মান মাষ্টারের বাড়ি, জামতলীর দবিরুল ইসলামের বাড়িসহ আরো বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে। এ রকম ১০-১২টি শেল্টার ছিল তার। কিন্তু কোন শেল্টারেই এক রাতের বেশি অবস্থান করতেন না। ঝটিকা বেগে অপারেশন চালিয়েই তারা শেল্টার পরিবর্তন করতেন অথবা নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যেতেন। অরু মনে করেন যে, তার জীবনের এক আনন্দময় মূহুর্ত হলো স্বাধীন, মুক্ত দিনাজপুরে প্রবেশ করা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তাদের অবস্থান ছিল বোচাগঞ্জের মাহেরপুররের বিপরীতে টাঙ্গন নদীর পশ্চিম প্রান্তের একটি মুক্তাঞ্চলে। এখান থেকে নদী পার হয়ে মুক্তি সেনাদের বিভিন্ন গ্রুপ প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের উপর হামলা চালাত। নিজেদের অবস্থান থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে ঝটিকা আক্রমণগুলো হতো এবং ঝটিকা বেগেই তারা নিজেদের ক্যাম্পে ফেরার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে ফেরার চিন্তা বাদ দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় মিত্র বাহিনী ও সামরিক কমান্ডারবৃন্দ। সম্ভবত ডিসেম্বরের ১০-১১ তারিখে মুক্তি সেনারা ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সাপোর্ট নিয়ে হানাদার বিরোধী ব্যাপক কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু করে। মুক্তিসেনাদের ক্রমাগত অগ্রগতিতে হানাদার ও রাজাকার বাহিনী ক্রমেই পেছাতে তাকে। অরু তার বাহিনী নিয়ে বোঁচাগঞ্জের বন্ধুগাঁও গ্রামে অবস্থান নেন ১১ অথবা ১২ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর তিনি তার দল নিয়ে দিনাজপুর শহরে প্রবেশ করেন। তসিবুল আলম, মকছেদুর রহমান, মোকছেদ আলী মঙ্গলিয়া, মমতাজ আলী, নুর নবী, আব্দুল মালেক সরকারসহ সর্বমোট ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা দিনাজপুর শহরে প্রবেশ করেন। তখন শহরের কোথাও পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি ছিল না। মুক্ত দিনাজপুরে প্রথম প্রবেশের বিষয়ে অরু বলেন, আমি ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় দিনাজপুরে আসি এবং বালুয়াডাঙ্গায় আমার বাড়িতে ঢুকি। বাড়ি তখন ঘাস-জঙ্গলে পুর্ণ ছিল। চৌকি, খাট কিছুই ছিল না। সব কিছু লুট হয়ে গিয়েছিল। এ সময় আমার সাথে মঙ্গলিয়া, মিনহাজ, বাবলুসহ ৪-৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদের সকলের হাতে অস্ত্র ছিল। কিন্তু দিনাজপুর শহরে প্রবেশকালে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে হয় নাই। আমরা বিনা যুদ্ধে, বিনা বাধায় শহরে ঢুকতে সমর্থ হই। আমরা শহরে ঢেকার আগে হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে সৈয়দপুর, পার্বতীপুরের দিকে পালিয়ে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম অরু মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম বলে মনে করেন। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিরল উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন। তিনি কড়াই বিল মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগী ও পশুপালন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ সভাপতি এবং সমাজ প্রগতি পরিষদ-এসপিপি এর নির্বাহি পরিচালক। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ দিনসাজপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি তাদেরই একজন। জাতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদান কখনো ভুলবে না।

আজহারুল আজাদ জুয়েল
সাংবাদিক, কলামিষ্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।