ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দু’টি হত্যা মামলার ঘটনায় ১১ দিনের ব্যবধানে ৬ জনের ফাঁসির রায় এবং চারজনকে যাবজ্জীবনসহ একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও আরো একজনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।সোমবার বিকেলে দিনাজপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২-এর বিচারক মেহেদী হাসান মন্ডল এ রায় ঘোষণা করেন।আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন,ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই গ্রামের তাসের উদ্দিনের ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪৩), আজাহার আলীর ছেলে রেজাউল করিম বাবু (৪৮) ও আজিজ সিদ্দিকীর ছেলে আতোয়ার ওরফে আতর আলী (৫১)।যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন আতোয়ার আলীর ছেলে গোলাম রব্বানী (৪৪) ও একরামুল হক (৫১), মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাঈদ আলী (৫৮) ও ইদ্রিস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৪)।যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। অপর এক ধারায় আসামিদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড দেন বিচারক।মামলার বিবরণে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গরপিংলাই গ্রামের সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী একই এলাকার আজাহার আলীর মেয়ে নারগিস নারী নির্যাতনের মামলা করেন। ২০০৯ সালের ২ আগস্ট ওই মামলার রায়ে সাইফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। মামলা চলাকালে সাইফুল ইসলাম তার জমিজমা বড় ভাই শহিদুল ইসলামের ছেলে তৌহিউল ইসলাম বাবু ও হুমায়ুন কবিরের নামে লিখে দেন।মামলার রায়ের ১৮ দিন পর সন্ধ্যায় হুমায়ুন কবির তার মুদি দোকান থেকে বের হয়ে জয়নগর বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। পরের দিন স্থানীয় এমআইবি নামক ইটভাটার সামনে ইটের স্তুপের নিচে হুমায়ুন কবিরের রক্তমাখা মরদেহ পাওয়া যায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিনই নিহত ব্যক্তির বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।এ ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সোমবার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।এদিকে, এর আগে গত ১১ মে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার আলোচিত গৃহবধূ হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদন্ড এবং একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও আরেকজনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড আদেশ দেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী।এই মামলার আসামিরা হলেন, ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ সুজাপুর গ্রামের মৃত বিবেকানন্দ চৌধুরীর ছেলে সাধনা নন্দ চৌধুরী (৬৩), সাধনা নন্দ চৌধুরীর স্ত্রী প্রতিমা রানী চৌধুরী (৪৫), ও তার ছেলে আকাশ চৌধুরী (২৭),চকচকা গ্রামের রবীন্দ্রনাথ দাশের ছেলে জীবন চন্দ্র দাস (৩০) ও কাঁটাবাড়ী গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মহন্তের ছেলে কাজল মহন্ত (৩১)।এদের মধ্যে প্রতিমা রানী চৌধুরী, আকাশ চৌধুরী ও কাজল মহন্তকে মৃত্যুদন্ড, নিহত নারীর স্বামী সাধনা নন্দ চৌধুরীকে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং জীবন চন্দ্র দাসকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে জীবন চন্দ্র দাসকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের সশ্রম কারাদন্ড আদেশ দেওয়া হয়।সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রবিউল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।মামলার বিবরণে জানা যায়, সাধনানন্দ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রী তপতী রানী চৌধুরীর সঙ্গে সংসার চলাকালীন ২০১৪ সালে প্রতিমা রানী চৌধুরীকে পুনরায় বিয়ে করেন। এরপর থেকেই তপতী রানী চৌধুরীকে আলাদা করে রাখতেন এবং ভরণপোষণ দিতেন না স্বামী সাধনানন্দ। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের কলহ হতো। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল রাত ৯টার পর থেকে স্বামী, সতিন ও সতিনের ছেলেসহ পাঁচজন মিলে তপতী রানীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মরদেহ পৌর এলাকার উত্তর সুজাপুর গ্রামের একটি বাঁশবাগানে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।এ ঘটনায় নিহত নারীর ছেলে শুভ নন্দ চৌধুরী বাদী হয়ে ওই সময় ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার চার আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২২ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১১ মে এ রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ আদালত।