আজহারুল আজাদ জুয়েল-
দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সচিব হুমায়ুন কবীর ইন্ডিয়া যাবেন। তিনি যাবেন তাঁর জন্মভূমি মহিপাল গ্রামে। সেখানে তাঁর আপন ভাই-ভাতিজারা আছে। তাদের সাথে শেষবারের মত দেখা সাক্ষাৎ করে আসবেন তিনি, এটাই তাঁর শেষ ইচ্ছ। আমিও তাঁর সাথে যাব। তাঁর সাথে গিয়ে তাঁর গ্রামের বাসায় দু-একদিন থেকে মুর্শিদাবাদ যাব, এমন একটা ইচ্ছা আমার।
সেই মোতাবেক আমরা ২৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে রওনা দিয়েছিলাম হিলির উদ্দেশে। আমাদের সাথে আরো একজন ছিলেন কসবা নিবাসী অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম, তিনি মহিপাল হয়ে চেন্নাইয়ে যাবেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু হিলি যাওয়ার পর বিপত্তি দেখা দিল। হুমায়ুন কবীর সাহেবের করোনার টু ডোজ টিকা নেয়ার সনদ পাওয়া গেল না। কম্পিউটার ওয়ান ডোজ শো করল। একাধিকবার একাধিক কম্পিউটারে একই রেজাল্ট। অথচ হুমায়ুন কবীর জানালেন যে, তিনি থ্রি ডোজ নিয়েছেন। বড় সমস্যা এটা। কমপক্ষে টু
মহিপাল দিঘীতে আমি
ডোজের সনদ ব্যতিত সীমান্ত পার হওয়া যাবে না। হিলির এক দালাল বললেন, টু ডোজ দেখিয়ে একটা সনদ বের করে দিতে পারবেন। পয়সা খরচ হবে। হুমায়ুন কবীর তাতে রাজী নন। ভুয়া কাগজে যাবেন না। আমরাও বললাম, এটা করা যাবে না। ধরা পড়লে বিপদ হবে। এমতাবস্থায় হুমায়ন কবীর ফিরে আসলেন দিনাজপুর শহরে। তাঁর সাথে আমিও ফিরে এলাম, অ্যাড. রবিও ফিরলেন। অবশ্য হুমায়ুন সাহেব আমাদেরকে ইন্ডিয়ায় ঢুকে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি ও রবি বললাম, আপনি কোভিদ সনদ ঠিক করেন। দু-একদিন দেরি হলে হোক, এক সাথেই যাব।
আমরা ফিরে এলাম। বাসযোগে আসার পথে হুমায়ুন সাহেব কিছুটা অসুস্থ্যতা বোধ করলেন। বমি বমি ভাব। ওক্কানী। বুঝতে পারলাম যে, তাঁকে ছেড়ে যদি ইন্ডিয়া চলে যেতাম, তাহলে বিপদে পড়তেন। তাঁর বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি। এমন বয়সে এক দেশ ছেড়ে আরেক দেশে না যাওয়াই ভাল। কিন্তু আমরা যাচ্ছি বলেই তিনি যাচ্ছিলেন একটা ভরসা নিয়ে। আবার আমরাও তার ভরসাতেই যাচ্ছিলাম এই আশায় যে, মহিপালে এক-দুই দিন আমরা ঘুরে বেড়াতে পারব।
হুমায়ুন কবীরকে তাঁর বালুবাড়ির বাসায় ঢুকিয়ে ফিরে এলাম আমার নিজ বাসায়। স্ত্রী রিপা আজাদ দেখে অবাক হলেন! ‘কি ব্যাপার? ফিরে এলে যে!’ ঘটনাটা তাঁকে বললাম।
হুমায়ুন কবীর পরদিন জানালেন যে, তাঁর শরীর বেশ দূর্বল। ছেলে- মেয়েরা চায় না, এই মুহর্তে দূর্বল শরীরে তিনি ইন্ডিয়ায় যান। তাছাড়া কোবিদ সনদটা পেতেও কয়েকদিন সময় লাগবে। তাই আপাতত যাচ্ছেন না। তিনি বললেন, ‘তুমি না হয় চলে যাও। মহিপাল ঘুরে আসো। আমি আমার ভাই-ভাতিজাকে বলে দিচ্ছি তোমার কথা।’
‘রবি যাবে?’ জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জানালেন, রবি এখন বলছে যে, সেও যাবে না।
কেউ যাবে না। না যাক। আমি তো একা ঘুরতে অভ্যস্ত। একা গেলে অল্প অর্থে নিজের মত করে ঘোরা যায়। পরে সময় নাও হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি একাই যাব। নতুন ই পাসপোর্ট করেছি। নতুন পাসপোর্টে প্রথম ভিসা করেছি। অন্তত একবার ঘুরে আসি।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে রওনা দিলাম ইন্ডিয়ার উদ্দেশে। হিলি সীমান্তের দুই পাড়ে কাষ্টমসএর প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ইন্ডিয়ান হিলির বাস ষ্ট্যান্ডে যখন পৌঁছালাম তখন দুপুর হয়ে গিয়েছিল। হিলির বাংলাদেশ অংশে পাসপোর্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাজ সারলেন লুৎফর। নিলেন দেড়শ টাকা। ইন্ডিয়ান অংশে কাজ সারলেন তাপস চক্রবর্তী। নিলেন ২০০ রুপী।
আমার গন্তব্যস্থল মহিপাল। লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম, মালদা অথবা রায়গঞ্জগামী বাসে উঠলেই বংশীহারি মোড়ে নেমে মহিপাল যাওয়া যাবে।
দুপুরে খাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু ধুলামুক্ত হোটেল না পেয়ে খাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। এস্টেট বাসে উঠে রওনা দিলাম মহিপালের উদ্দেশে। প্রায় ৫টার দিকে বাস নামিয়ে দিল বংশীহারি মোড়ে। এই পর্যন্ত ভাড়া নিল ৫৫ টাকা। ক্ষুধা লেগেছিল। তাই বংশীহারি মোড়ে ৪০ রুপীতে নিরামিষ তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম। এরপর সেখান থেকে ব্যাটারী চালিত একটি টোটো গাড়িযোগে রওনা হলাম মহিপালের দিকে। ভাড়া ৩০ রুপী।
বংশিহারির উত্তরে মহিপাল মোড়। টোটোয় যেতে ৪০ মিনিটের মত লেগে গেল। মহিপাল বেশ জমজমাট, নেমেই বুঝলাম। চার রাস্তার মোড়। এর মধ্যে যে রাস্তা ধরে বংশীহারি হতে মহিপালে এলাম, সেটা চওড়া। রাস্তাটি মহিপাল মোড় ভেদ করে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। অন্য রাস্তা দুটো এর অর্ধেক চওড়া। মোড়ের চতুর্দিকেই প্রচুর দোকান পাট দেখা গেল। লোক সমাগমও প্রচুর। চায়ের দোকানগুলোয় জমজমাট আড্ডা। চালু এলাকা, দেখেই বুঝা যায়।
আমার একটা সাধারন নিয়ম হলো নতুন কোথাও গেলে চা দোকানে বসা এবং চা পান করতে করতে লোককে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করা। এখানেও তাই করলাম। একটি চা দোকানে লাল চা পান করতে করতে লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘চৌধুরীপাড়া কোনদিকে?’
‘চৌধুরীপাড়ায় যাবেন?’ জিজ্ঞাসা করলেন একজন। তারপর নিজেই দেখিয়ে দিলেন, ‘এই দিক দিয়ে ডানে যান। ডানে গেলে একটা স্কুল পাবেন। স্কুলের পরে মাঠ পাবেন। মাঠের ভিতর দিয়ে যাবেন। মাঠের পরে যে পাড়া দেখবেন সেটাই চৌধুরী পাড়া। হেঁটেই চলে যান। সামান্য পথ।’
মহিপাল দিঘীর সাথে মহিপাল পর্যটন কেন্দ্র
চা পান শেষে লোকটির নির্দেশনা মোতাবেক হাঁটা ধরলাম। মোড়ের পূর্ব দিকে কয়েক কদম এগিয়ে যেতে দেখলাম একটি রাস্তা ডান দিক দিয়ে গেছে। দক্ষিণে সামান্য ঘুরতেই যে স্কুল পেলাম, ফটকের সামনে সেই স্কুলের নাম লেখা ‘মহিপাল উচ্চ বিদ্যালয়।’ দ্বিতল ভবন যুক্ত বেশ বড় স্কুল এটি। এই স্কুলের কথা হুমায়ুন কবীরের কাছ থেকে অনেক আগে শুনেছি। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাঁর পিতা মরহুম রফিউদ্দীন আহম্মেদ চৌধুরী, যিনি রফি চৌধুরী নামে অধিক পরিচিত ছিলেন।
স্কুলটি পার হলেই পাওয়া যায় একটি মাঠ। নাম মহিপাল মাঠ। এই মাঠটাও হুমায়ুন কবীরদের ছিল। কিন্তু তাঁর পিতা রফি চৌধুরী মাঠের বর্তমান জায়গাটি স্কুলকে দান করে দিয়েছেন খেলাধুলা করার জন্য। স্কুলের শিক্ষার্থীরা দিনের বেলা এখানে খেলাধুলা করে। আবার এলাকার মানুষ মাঠের বিরাট অংশ জুড়ে ধান শুকানোর কাজ সারে। আশেপাশের সবাই ধান শুকায়। আমি যখন মাঠটি অতিক্রম করছি, তখন অনেককেই দেখলাম সারদিনের রোদে শুকানো ধান বস্তায় ভরছেন।
মাঠটি পার হয়ে ছোট একটা পুকুর দেখা গেল। পুকুর পার হয়ে একটা দ্বিতল মসজিদ। মসজিদের পরেই আছে কয়েকটা বাড়ি। এটাই চৌধুরীপাড়া। মসজিদের পাশে কয়েকজন মহিলা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কয়েককটা বাচ্চাকেও দেখলাম। পুরুষ মানুষ না পেয়ে মহিলাদেরকেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ফজল চৌধুরী, নুরুল চৌধুরীর বাড়ি কোনটা?’
‘ঐ যে ঐটা ফজল চৌধুরীর, পাশেরটা নুরুল চৌধুরীর বাড়ি। আমি ফজল চৌধুরীর ছেলের বউ। কিছু বলবেন?’ একজন মহিলা যার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বললেন এ কথা।
‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’
‘ও আচ্ছা। আসেন, বাসায় বসেন।’
ফজল চৌধুরীর ছেলের বউ আমাকে বাসায় নিয়ে গেল। ঘরে বসাল। তার কাছ থেকে খবর পেয়ে দেখা করলেন তার শ^াশুরী। অল্পক্ষণের মধ্যে এলেন তার শ^শুর ফজলে এলাহী চৌধুরী, ফজলে কবীরের একমাত্র ছেলে, ফজলে কবীরের বড় ভাই নুরুল আলম চৌধুরীসহ আরো দু-একজন। আমাকে বেশ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করলেন সবাই। তাঁদের সকলের মধ্যে হাসিখুশি ভাব। এটা আমাকে বেশ ভাল লাগল। বিদেশের মাটিতে যেন আপনজনরাই দেখা করলেন। হুমায়ুন কবীর আগেই আমার কথা বলে দিয়েছিলেন। ফলে যথেষ্ট কদও পেলাম সকলের কাছ থেকে।
রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো ফজলে কবীরের ভাতিজা জালাল চৌধুরীর বাসায়। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং এই এলাকার প্রখ্যাত একটি মাদ্রাসার সাধারন সম্পাদক। তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষক। তার বাড়িটির অবস্থান মহিপাল-বংশীহারি সড়কের ধারে। বেশ আলিশান বাড়ি। ৩টি বড় বড় ঘর আছে সেই বাড়িতে। এর একটি ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা হলো। ফজলে চৌধুরীও আমার সাথে রাত যাপন করলেন।
জার্ণির কারণে এক ধরণের ক্লান্তি ছিল। তাই রাতে শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গে ভোর রাতে মসজিদের আজান শুনে। বাংলাদেশের সবখানে প্রায় সব মসজিদে মাইক লেগেছে। কিন্তু কট্টর মৌলবাদী দল বিজেপি শাসিত ভারতের কোন মসজিদে মাইকের আওয়াজ পাব এটা ধারণার বাইরে। ভোর বেলা আজানের ধ্বণিতে মনের মধ্যে একটা প্রফুল্ল ভাব এলো।
ফজলে চৌধুরী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। ঘুম থেকে উঠেই নামাজে গেলেন। আমাকে বললেন, ‘একটু সকাল হলে বাসায় আসো, মহিপাল দিঘী দেখাব।’ তাঁকে বললাম, ‘চাচা, আপনাদের এখানে মাইকে মসজিদের আজান হচ্ছে, তাতে অবাক হয়েছি। বিভিন্ন স্থানে বিজেপি সমর্থকরা যে রকম করে, তাতে তো মসজিদে মাইক থাকার কথা না।’ তিনি বললেন, ‘ তৃণমূল ক্ষমতায় না এলে হয়ত ঐরকমেই হতো।’
মহিপাল দিঘীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ডাক বাংলো
ঠান্ডা যথেষ্ট। তবে সকাল বেলা আলো ঝলমলে রোদের প্রকোপ থাকায় তীব্রতা কমে গিয়েছিল। আমি কাপড়-চোপড় পড়ে ফজলে হকের বাসায় গেলাম। জালাল চৌধুরীর বাড়ি থেকে ফজলে চৌধুরীর বাড়ির দূরত্ব হতে পারে ৫০০ গজের মত। একটি ছোট আম বাগান, একটি ধান ক্ষেত, দুটি ছোট পুকুর পেরিয়ে এই দুই বাড়িতে যাতায়াত করা যায়।
ফজলে চৌধুরীর বাসায় নাস্তা করে বের হলাম মহিপাল দিঘী দেখতে।
মহিপাল দিঘীর সাথেই লাগালাগি পাড়া চৌধুরীপাড়া। কিন্তু গতকাল চৌধুরীপাড়ায় আসার সময় বুঝিনি যে, এই পাড়ার অবস্থান দিঘীর অনেকটা মাঝামাঝি পয়েন্টের পশ্চিম প্রান্তে। চৌধুরীপাড়া থেকে বের হয়ে প্রথমে একটা পাকা রাস্তায় উঠলাম। ফজলে চৌধুরী বললেন, এটাই মহিপাল দিঘী। দিঘীর চতুর্দিক দিয়ে এই রাস্তা আছে। এটা হলো দিঘীর পাড়। সরকার দিঘীর উচ্-নীচু পাড় সমান করে দিয়ে মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তা নির্মাণ করেছেন।
দেখলাম, রাস্তার দুই দিকে অসংখ্য বাড়ি। কাঁচা বাড়ি, পাকা বাড়ি। সেইসব বাড়িতে লোকজনের বসবাস অছে। বাড়িগুলোর ওপাশেই আছে দিঘী। কিন্তু বাড়িগুলোর কারণে দিঘীর মূল অংশ দেখা যাচ্ছে না। মহিপাল দিঘীর রাস্তা ধরে দক্ষিণমুখী হয়ে কিছুটা হাঁটার পর একটা গলি ধরে দিঘীর আসল জায়গায় গেলাম, যেখান থেকে দিঘীর ডান দিক, বাম দিক এবং সামনের অংশ পুরোটাই দেখা যায়। কিন্তু দিঘীটাকে আমি যে রকম দেখব ভেবেছিলাম, সেরকম কিছু পেলাম না। এতবড় দিঘী, অথচ দিঘীর অধিকাংশ অংশ জুড়ে কচুরিপানায় ভরা। তাই পানির অংশ দেখা যাচ্ছে কম। আর পানি দেখা না গেলে দিঘীকে দিঘী মনে হয় না। মহিপালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একমই দাঁড়িয়েছে।
ফজলে চৌধুরী মহিপাল দিঘীর পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ পর্যন্ত আমার সাথে থাকলেন। এরপর কোথা থেকে যেন একটা ফোন এলো তাঁর। ফোনে কথা বলার পর আমাকে বললেন, ‘আমাকে তো এখুনি যেতে হবে। তুমি যাবে, না আরো দেখবে?’
বললাম, ‘চাচা, আপনি যান, আমার টয়লেটের চাপ এসেছে। টয়লেট সেরে পরে যাব।’
‘দেরী করবা না। আর এখানে গ্রামীণ ফোনের কানেকশন পাওয়া যায়। আমি মাঝে মাঝে এখানে এসে বাংলাদেশে কথা বলি। কারো সাথে কথা বলতে চাইলে এখান থেকে বলে নিও।’ এ কথা বলেই ফজলে চাচা চলে গেলেন।
আমার টয়লেটের চাপ এসেছিল। সেটা কোথায় সারতে পারি এমন একটা ভাবনায় দিঘীর দক্ষিণ পাড় ধরে কিছুটা পূর্বে এগিয়ে গেলাম। একটা মসজিদ দেখলাম। মসজিদে টয়লেট ছিল। তালা লাগা। মসজিদটিতে লোকও নাই। আরেকটু এগিয়ে যেতে দেখি রাস্তার ধারে দুইটি বাড়ি। দুই বাড়ির দুইটি টয়লেট বাড়ির বাইরে, রাস্তার ধারে। টয়লেটের গায়ে লেখা দেখে বুঝলাম এগুলো কমিউনিটি বেসড ভিত্তিতে দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাজ্য সরকার নির্মাণ করে দিয়েছেন। দুটো টয়লেটের একটিতে ঢুকে বালতি ভর্তি পানি পাওয়া গেল। টয়লেটটি পরিস্কার। মনে মনে রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ দিলাম এরকম দূর্গম এলাকায় টয়লেট নির্মাণের জন্য। আর ধন্যবাদ দিলাম সেই বাড়ির লোকদেরও, যাদের ব্যবহারের জন্য এটি নির্মাণ হয়েছে এবং তারা বালতি ভর্তি করে পানি রেখেছেন। মনে হচ্ছে যেন আমার জন্যই পানি রেখেছেন।
কাজ সেরে আবার হাঁটা ধরলাম দিঘীর রাস্তা ধরে, পূর্ব দিকে। গ্রামীণ ফোন অন করে আমার স্ত্রীর সাথে সংযোগ পাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বার বার বার টোঁট টোঁট শব্দ পেলাম। আরো দু-তিন জায়গায় চেষ্টা করেও বাংলাদেশের কারো সাথে নেটওয়ার্ক পেলাম না। বুঝলাম যে, নেটওয়ার্ক হয়ত পাওয়া যায়, কিন্তু খুব দূর্বল। এখন কাউকে ধরতে পারছি না, হয়ত অন্য সময় ধরা যাবে।
রফি চেীধুরী
আমি কারো সাথে যোগাযোগের চেষ্টা বাদ দিয়ে পূর্বদিকে হাঁটা ধরলাম। অল্প কিছুদুর গিয়ে বেশ ক’টি পাকা ডাক বাংলো দেখলাম। সাইকেল নিয়ে এক লোককে আসতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই, এগুলো কি?’ লোকটি জানালেন যে, ‘এগুলো বাংলো। রাজ্য সরকার করেছেন পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য।’
কিন্তু পর্যটক এখানে আসে বলে আমার মনে হলো না। কারণ দিঘীর মধ্যে আকর্ষণ করার মত কিছু নাই। এর চেয়ে বাংলাদেশের রামসাগর দিঘী বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হলো। রামসাগর দিঘীর পাড়সহ চতুর্দিক দিয়ে প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। দিঘীর চতুর্দিকে ইট বিছানো রাস্তা আছে এমনভাবে, ঐ রাস্তা ধরে প্রদক্ষিণ করার সময় পানির অংশ পুরোটাই দেখা যায়। আবার পানি যেহেতু পরিস্কার ও টলটলে, তাই পুরো দিঘীকে আকর্ষণীয় লাগে। দিঘীরপাড় জুড়ে আছে নানাবিধ বাগান। ঘুরতে বেশ মজা লাগে। আনন্দ পাওয়া যায়। ঘুরার আনন্দ এখানেও আছে। কিন্তু দিঘীর পানির অধিকাংশই কচুরপিানায় ঢাকা, তাই আকর্ষণ তেমন নাই।
মহিপাল দিঘীর পূর্ব প্রান্তের দক্ষিণ দিক হতে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে অবশ্য কিছু ঝোপঝাড় ও বাগান দেখা গেল। তবে এই বাগানগুলি রামসাগরের বাগানগুলোর মত সৌন্ধর্যমন্ডিত নয়। মহিপাল দিঘীর পূর্ব পাড়ে বাড়ি-ঘর কিছুটা কম। এই সাইডটিতে আদিবাসী লোকেরা বেশি থাকেন। তাদের কয়েকজনের সাথে এখানে দেখা হলো। আদিবাসী এক বয়স্ক মহিলাকে জ্ঞিাসা করলাম, ‘এখানে কতদিন ধরে আছেন?’ বললেন, ‘বৃটিশ আমল হতে। বাপদাদার ভিটা এটা।’ আরেক আদিবাসী জানালেন, তারা বাংলাদেশের বিরল উপজেলার গিরিডুবা এলাকা থেকে এসে মহিপালে স্থায়ী হয়েছেন। গিরিডুবার অবস্থান হলো বিরলের বহবল দিঘীর কাছে।
এভাবে আরো অনেকের সাথে কথা হলো। এক আদিবাসী মহিলার সাথে কিছু কথা হওয়ার পর ঐ মহিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি হাড়িয়া খাব কি না? বললাম, না, হাড়িয়া আমি খাই না। তখন তিনি বললেন যে, তিনি খাবেন। আমার কাছ থেকে হাড়িয়া খাওয়ার জন্য টাকা চাইলেন। আমি ২০ রুপী দিয়ে সেখান থেকে সরে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে দিঘীর উত্তর পূর্ব কোণে এলাম। এই কোণে এসে দেখি বাজারের মত দোকানপাটের ছাপড়া দেয়া কিছু ছাউনি। কিন্তু এগুলোতে কোন পণ্য নেই।
মহিপাল দিঘীর পাড়ে সপ্তাহে দুদিন বসে মহিপাল হাট
আমার ঘাম ধরে গিয়েছিল। কিছুটা ক্লান্তিও মনে হলো। তাই একটি চা-বিস্কুটের দোকান খোলা পেয়ে সেখানে বসলাম। দোকান করছিলেন একজন মধ্য বয়সী মহিলা। বাড়ির সাথে লাগা দোকান তার। সেখানে লাল চা পান করতে করতে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটা বাজার না কি?’ তিনি জানালেন যে, এটা বাজার। নাম মহিপাল হাট। সপ্তাহে দুই দিন এই হাট বসে।
চা পান শেষে বাজার থেকে পশ্চিম দিকে হাটতে গিয়ে মহিপাল দিঘীর ঘাট পাওয়া গেল। এতবড় সুবিশাল দিঘীর মাত্র একটিই পাকা ঘাট, যার অবস্থান দিঘীর উত্তরে। রাস্তা থেকে ঘাট অনেকটা দূর। সেখানে যেতে ঢালাই রাস্তা আছে। সেই ঢালাই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম ঘাটে। ঢালাই রাস্তার দুইদিকে পুরোটাই আবাদী জমি। এইসব জমির অনেকটার মালিক ছিলেন রফি চৌধুরী। বর্তমানে তাঁর সন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পেয়েছেন। জমিগুলোর এক জায়গায় ফজলে চাচার ছেলেকে দেখা গেল ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।
ঘাটের দিকে মহিপাল দিঘীর পানি পরিস্কার, টলটলে। এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত টলটলে পানি দেখা যায় । ঘাট এলাকায় ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছিল। তাদের দ্বারা আমার কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। ঘাটের দিকে টলটলে ও পরিস্কার পানি থাকায় এই সাইডটা বেশ আকর্ষনীয় লাগছিল। এদিক থেকেই মহিপালকে সত্যিকারের একটি বড় দিঘী মনে হচ্ছিল। কিন্তু এই দিঘীর বিরাট অংশ যদি কচুরীপানায় ঢাকা না পড়ত, তাহলে আরো আকর্ষনীয় লাগত। বেশ কিছুটা সময় সেখানে অতিবাহিত করে আবার হাঁটা দিলাম।
হাঁটতে হাঁটতে আমি পৌছালাম মহিপাল হাই স্কুলের সামনে। গতকাল এই স্কুলের সামনে দিয়েই চৌধুরীপাড়ায় গিয়েছিলাম। এর মানে হলো মহিপাল হাইস্কুলটির অবস্থান দিঘীর জায়গার মধ্যেই। দিঘীর উত্তাংশের পশ্চিম কোণে এই স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। স্কুলের জায়গার পুরোটাই হুমায়ুন কবীর ও ফজলে ইলাহীর পিতা রফিউদ্দিন চৌধুরীর। তিনিই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। বৃটিশ শাসনামলে প্রথমে প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি হাই স্কুলে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল হতে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্কুলের সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে স্কুলটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে প্রচুর আত্মত্যাগ করেছেন। স্কুল ও স্কুল মাঠের জমির পুরোটাই দান করেছেন। আরো জমি বিক্রি করে স্কুলের প্রয়োজনীয় ব্যয় মিটিয়েছেন। বিশেষ করে এপিওভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন দিয়েছেন জমি বিক্রি করে। এগুলো করতে গিয়ে এতই ক্ষতিগ্রস্থ হন যে, পাবিারিক অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে আসে তার। এর পরেও হাল ছাড়েন নাই।
রফি চৌধুরীর কোন জমিদারি ছিল না। কিন্তু বিপুল পরিমাণ জমির মালিক ছিলেন। লোকে তাই তাঁকে চৌধুরী সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। তাঁ কারণেই তার পাড়ার নাম হয় চৌধুরীপাড়া। সম্প্রতি তাঁর পরিবারের পক্ষ হতে পরিবারের নিজস্ব খরচে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রফিউদ্দীন চৌধুরীর নামে শে^তপাথর লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুলটির বর্তমান কর্ণধাররা সেটা লাগাতে দেয় নাই। এতে করে রফিউদ্দীন চৌধুরীর সন্তানেরা ভিষণ মর্মাহত হয়েছেন। তাদের জায়গায়, তাদের অর্থে, তাদের পিতার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুল। অথচ সেই স্কুলে বাবার নামে শে^তপাথর লাগাতে পারেন নাই কতিপয় শিক্ষকের বিরোধিতায়। শিক্ষকদের অধিকাংশই হিন্দু। তাই এ অবস্থা বলে তারা মনে করেন। কট্টর মৌলবাদী বিজেপি শাসিত শাসন ব্যবস্থার ফল এটা। তারা মুসলিম অবদান স্বীকার করতে চায় না, মুসলমানদের উঠতে দিতে চায় না, ্এমনটাই আভাষ পাওয়া গেল কারো কারো কথায়
স্কুলটির সামনে একটি ভগ্নাবশেষ দেখা গেল। লম্বা ভবনের ধ্বংসাবশেষ। কি এটা? প্রশ্ন করতে এক লোক জানালেন যে, এটা নীলকুঠি। বৃটিশ শাসকেরা লোকজনকে নীলচাষে বাধ্য করত। না করলে এখানে চাষীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। নীলকুঠির সাথেই একটি বড় গেট দেখা। গ্রীলযুক্ত গেট দিয়ে ভিতরটা দেখা যাচ্ছিল। ভিতরে পাকা মেঝের মত। একটি ছোট মেহরাবের মত দেখা গেল পশ্চিম দিকে। মেঝের চতুর্দিকে প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। আকাশের দিক খোলা। লোকে জানালেন এটা ঈদগাহ মাঠ। বছরে দুইবার এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। চৌধুরীপাড়া, জেল্লাবান, কারবালা, তালপুকুরিয়া, মহিপাল, চকদূত, দেবীপুর, শেরপুর, ভেলাকুড়ি, সুতাহারপাড়া, কাড়াদার, শালুকুড়ি, ডাঙ্গাপাড়া, আমলাপুকুর, উদয়পুর, কদমডাঙ্গা, মাঝাপাড়াসহ আরো কয়েকটি পাড়ার মুসল্লীরা ঈদের জামাতে অংশ নিয়ে থাকেন। ফলে ঈদের জামাত কয়েকটি পাড়া ও গ্রামের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
মহিপাল দিঘীর চতুর্দিক ঘুরে সামগ্রিকভাবে অবলোকন করে আমার উপলব্ধিতে একটা বিষয় নিশ্চিত হলাম যে, দিঘীটি রামসাগরের তুলনায় অনেক বড় হবে। কিন্তু কত বড়? সেরকম কোন তথ্য নির্দেশনা মূলক কোন বোর্ড এখানে পেলাম না। এ বিষয়ে অনেককে জিজ্ঞাসা করেও সঠিক কোন তথ্য পেলাম না। লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে এটুকুই জানলাম যে, এই দিঘী খনন করেছেন মহিপাল রাজা। তাই এর নাম মহিপাল দিঘী। মহিপাল দিঘীকে কেন্দ্র করেই এই এলাকার নাম হয়েছে মহিপাল। বৃটিশ ভারতে অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার অংশ এটা।
মফিউদ্দীন আহম্মেদ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত মহিপাল উচ্চ বিদ্যালয়
দেশ ভাগাভাগিতে মহিপাল পড়েছে ভারতীয় দিনাজপুরের মধ্যে। বর্তমানে এটি ভারতীয় দিনাজপুরের বংশিহারি থানার অংশ। বংশিহারি হতে যে সড়কটি সোজা উত্তরে ২৩ মাইল পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশের বিরল উপজেলা হয়ে দিনাজপুর জেলা সদরে সেই সড়ক পথের ১৪ মাইল পোষ্টের ১ ফার্লং পুর্বে অবস্থান ঐতিহাসিক মহিপাল দিঘীর। মহিপাল দিঘীর পাড়েই হলো মহিপাল গ্রাম।
মহিপাল দিঘীর পূর্ব-উত্তর পাড়ের উপরে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় ও সরাসরি উত্তরপাড়ের দুই খন্ডে তপশিলী কামার সম্প্রদায়ের বসবাস। দিঘীর উত্তরপাড়ে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। মহিপাল দিঘীর হাট। গরুর মাংসসহ সব ধরনের কাঁচা তরকারি পাওয়া যায় এই হাটে। চাউল, আটা, আলু, বেগুন, মরিচ, পিঁয়াজসহ সকল পন্য এই হাটে বেচা-কেনা হয়।
মহিপাল গ্রাম প্রাকৃতিক আচ্ছাদনে ভরপুর, মনোরম এক গ্রাম। দিঘীর পাড়ে এবং গ্রাম সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন জাতের আম বাগান দেখা যায়। আম বাগান বাদে বাঁশঝাড় ও অন্যান্য গাছ-গাছালিতে মনকাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠেছে গ্রামটিতে। একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের লোকদের ঘুম ভাঙতো হাজারো পাখির বিচিত্র ধ্বণির কলকাকলিতে। গোধুলি বেলায় ঘরে ফেরা পাখির কল-কাকলিতে উদ্বেলিত হতো মানুষের মন। দিঘী পাড়ের বাগান ও ঝোপঝাড়ে এবং বিস্তীর্ণ জলরাশির চারপাশে শিয়াল, খেকশিয়াল, বনবিড়াল ও অন্যান্য বন্য পশুর অবাধ বিচরণ থাকত। ঘন জঙ্গলের মধ্যে কখনো কখনো নেকড়ে বাঘও দেখা যেত। শুধু তাই নয়, বৃটিশ রাজত্ব শেষ হওয়ার ৫০-৬০ বছর আগে পর্যন্ত গ্রামটিতে বাঘ ও বন শুয়োরের আনাগোনা ছিল। দূর-দূরান্ত হতে বনশুয়োরের বিরাট দল মাঝে মাঝেই গ্রামে হানা দিয়ে ক্ষেতের ফসল-ফসলাদি খেয়ে চলে যেত। তারা যত খেত তার চেয়ে বেশি ফসল নষ্ট করত। মহিপাল দিঘীর দক্ষিণে ছিল বিস্তীর্ণ ঘণ জঙ্গল। সেই জঙ্গলে প্রায়ই বাঘ আসত। বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষা পাবার জন্য মহিপালের বাসিন্দারা ফাঁদ পেতে রাখত। ফাঁদে পা দিয়ে দু-একটা বাঘ প্রাণও হারিয়েছে গ্রামবাসীর হাতে।
মহিপাল দিঘীর পাড়ে রাস্তা, বাড়ী, জঙ্গল।
রামসাগর দিঘী কত বড়, কবে হয়েছে, কে করেছেন সেইসব তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বন বিভাগ একটি বোর্ড করে দিয়েছেন যার ফলে দর্শনার্থীরা সেখানে গেলে কিছুটা জানতে পারেন। কিন্তু মহিপাল সম্পর্কে তেমন কিছু না থাকায় অবাক না হয়েছি। পরে তথ্য সংগ্রহ করেছি গুগল ঘেঁটে। উত্তরবঙ্গ সংবাদডটকম নামের একটি পোর্টালে “আইনি জটিলতায় আটকে ঐতিহ্যবাহী মহিপাল দিঘির সংস্কার, ক্ষোভ বিভিন্ন মহলে” শিরোনাম দিয়ে ৭ মাস আগে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ সংবাদে জানা গেল যে, ১৮০৭-০৮ সালে দিনাজপুর জেলার বিবরণীতে বুকানন হ্যামিলটন ‘মহিপাল দিঘির জলরাশির আয়তন ১০২ দশমিক ৪৩ একর’ উল্লেখ করেছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় মহিপাল দিঘী আয়তনে রামসাগরের প্রায় দ্বিগুন। রামসাগর জলরাশির আয়তন ৫৬ দশমিক ২২ একর।
মহিপাল এতবড় দিঘী হওয়ার পরেও এরকম জীর্ণ দশা কেন তা নিয়ে প্রশ্ন না এসে পারে না। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা গেল, মহিপাল দিঘীর জায়গা নিয়ে এলাকাবাসী মামলা করেছেন। দিঘীপাড়ের এবং দিঘীর বাইরের অনেকে এই জমির মালিকানা দাবী করেছেন। দাবীর পক্ষে কাগজপত্রও শো করেছেন। ফলে মহিপাল দিঘীকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার পর্যটন স্পট করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মহিপালে ছিলাম ৫দিন। ৫দিনে মোহনগঞ্জ, লালপুর, রসুলপুর, ডিটলহাট, শালুককুড়ি, কাড়াদার, ভেলাকুড়ি, ঐতিহাসিক বাণগড়, ধলদিঘী, পীরপুকুর, আঁয়ড়া ফরেষ্টসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় ঘুরেছি। এই জায়গাগুলো মহিপাল হতে ২ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। সফরের সেইসব বিষয় নিয়ে অন্য সময় আলাদাভাবে প্রতিবেদন লিখে পাঠক সমাজে উপহার দেয়ার চেষ্টা করব।
আজহারুল আজাদ জুয়েল
সাংবাদিক, কলামিষ্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক