দিনাজপুর বার্তা ২৪.কম ডেস্ক ॥ জগতে কোনো কাজই ছোট নয়। সব কাজ, পেশার প্রতিই সবার শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কিন্তু কোনো কাজ যদি কাউকে বাধ্য হয়ে করতে হয়? কিংবা নিতান্তই পেটের দায়ে? মহামারীর এই করুণ সময়ে এরকম বাধ্য হয়েই বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে পশ্চিম বাংলার অভিনেতা শ্রীকান্ত মান্নাকে!
এক সময়ে মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায়ের মতো বড় বড় অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। সংসার চলতো তার অভিনয় থেকে উপার্জিত টাকাতেই। কিন্তু আজ? সময়ের ভিলেন বলা হচ্ছে মহামারী করোনাকে। লাগাতার লকডাউনের কারণে অনেকেই কর্মহীন। সিনেমা, নাটক ও থিয়েটার কর্মীরা নিদারুণ অর্থ সংকটে। বাধ্য হয়ে অনেকে পেশাও বদলেছেন। এমনই এক অভিনেতা শ্রীকান্ত মান্না। দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয়জীবন তার । তিনি পশ্চিম বঙ্গের ‘সংস্তব’ নাট্য দলে নিয়মিত অভিনয় করছেন। এছাড়াও বহু বাংলা ছবি, মেগা সিরিয়াল ও শর্টফিল্মে দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন থিয়েটারে আলো জ¦লছে না, পর্দা উঠছে না সিনেমা হলে। বহুবিধ সামাজিক নিয়মবিধি মেনে ধারাবাহিকের কাজ শুরু হলেও সবাই সেখানে কাজ পাচ্ছেন না। জমানো টাকায় কতদিন? পেট তো কারো কথা শোনে না। আর এ কারণেই পেটের দায়ে মঞ্চ, শুটিং ফ্লোরের অপেক্ষা ছেড়ে মাছ নিয়ে বাজারে বসছেন এই অভিনেতা। মাছ বিক্রি করছেন বলে এ কাজকে ছোট মনে করেন না তিনি। পশ্চিম বঙ্গের অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ ফ্রন্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেটা বলেছেনও! মাছ বিক্রি করা প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘অভিনয় আমার মনের খোরাক মেটায় আর মাছ বিক্রি আমার পেটের খিদে মেটাচ্ছে। দুটোই কাজ। রকমটা আলাদা শুধু। প্রথম প্রথম যখন বাজারে বসতাম মুখ ঢেকে রাখতাম ভাল ভাবে, যাতে কেউ আমায় চিনতে না পারে। বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেক আপ হীন ‘আমি’কে দেখতাম। একদিন ভাবলাম, আজ যদি এরকম কোনও রোল আমাকে মঞ্চে বা অনস্ক্রিনে করতে হত, তখন যদি এরকম আমার লজ্জা লাগত কিংবা ইতস্তত করতাম তা হলে তো চরিত্রটা থেকে পরিচালক আমায় বাদ দিয়ে দিতেন। বের করে দিতেন ফ্লোর থেকে। সেদিনের পর থেকে আর আমি লজ্জা পাই না।’ তিনি বলেন, মাছ বিক্রি করছি বলে আমার কোনও লজ্জা নেই। আফসোসও নেই। কারণ আমার পেটের জ¦ালা মিটছে আজ এই পেশাতেই। যখন কাজকর্ম হারালাম আর চলছিল না সংসার তখন ঠিক করেছিলাম এমন একটা রাস্তা বের করব যেটাতে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। ২০২০ থেকে আজ অবধি যে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা দিন কাটাচ্ছি তাতে অনেকেই পেশা বদলে অন্য চাকরি করছেন কেউ বা ব্যবসা করছেন। অভিনয়ে যদি আবার কখনো নিয়মিত হন, তবুও এই পেশাকে ছাড়বেন না বলে জানান শ্রীকান্ত মান্না। বলেন, আমি চাকরির চেষ্টা করিনি, কারণ আমি জানি একদিন না একদিন আবার চরিত্র মিলবে, মঞ্চের পর্দা উঠবে, সেদিনও আমি চাকরিটা ছাড়ব না। কারণ দুঃসময়ে যে কাজটা আমাকে অন্ন জোগাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া মানে বেঈমানি করা। কিন্তু যদি কোনও জায়গায় আমি চাকরিতে জয়েন করি তারা আমাকে বেশিক্ষণের জন্য বা বেশিদিন অভিনয়ের জন্য ছাড়বে না বা ছুটি দেবে না। তখন আমাকে যে কোনও একটা কাজ বেছে নিতে হবে। আবার আমি আমার নীতিবোধকেও বিসর্জন দিতে পারব না। তাই মাছ বিক্রি করার কথা ভাবি। ভোর ৫ টা থেকে বেলা ১২ টা কি বড়জোর দুপুর ১ টা অবধি কাজ করার পর আমি ফ্রি। তখন আমি বাড়ি ফিরে গান শোনা, সিনেমা দেখা এগুলো আজ করতে পারি। তার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন অনেকে। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র নিউজ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘না, কোনো কাজ ছোট নয় ঠিক, তবু প্রশ্নতো কিছু থেকেই যায়। আর হ্যাঁ, দয়া করে কেউ আহা উহু করবেন না, দানের বা ভাতার টাকায় চলছেন না শ্রীকান্ত মান্না। পরিশ্রম করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন এই শিল্পী। আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই কমরেড।’