![](https://i0.wp.com/dinajpurbarta24.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png?ssl=1)
দিনাজপুর বার্তা২৪.কম :- অবশেষে লালমনিরহাট জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ও ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে। লালমনিরহাটে অবস্থিত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরেই হচ্ছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’। এয়ারক্রাফ্ট নির্মান, মেরামত, স্যাটেলাইট নির্মান, উৎক্ষেপন, মহাকাশ গবেষনা প্রভৃতি প্রযুক্তিতে বিশে^র বেশ কিছু উন্নত দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও কিছু সীমবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে বড় কোন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা এবং সাহসী পদক্ষেপে দেশে এই প্রথম একটি এভিয়েশন এ- অ্যারোস্পেস বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এখানে একটি বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে, এমনকি ভবিষ্যতে এখানে একটি বিমান তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। লালমনিরহাট জেলার সকল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এটি তাদের অনেক দিনের আশা এবং পরবর্তীতে তা দাবিতে পরিনত হয়। পরিত্যক্ত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এখন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকালে বিকেলে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করতে লালমনিরহাটে আসেন লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের), বিমানবাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এয়ার ভাইস মার্শাল ফজলুল হক, জেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. মতিয়ার রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক সালমান ডেভিডসহ বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে হবে, তবে এর একটি শাখা রাজধানী ঢাকার আশকোনায় স্থাপন করা হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের পশ্চাৎপদ, অবহেলিত এবং উপেক্ষিত জেলা হিসেবে লালমনিরহাটের মানুষের কল্যাণে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। লালমনিরহাট বিমানবন্দরকে সচল করতে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই দিনে তিনটি ফ্লাইট চলাচল করতে পারে, এমনটি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দরে স্থাপন করা হবে বিমান তৈরি ও মেরামত করার কারখানা। বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, লালমনিরহাটে অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি এখানে থাকবে আধুনিক বিশ্বের সমতুল্য এম আর ও বা মেইনটেনেন্স এ- রিপেয়ারিং অর্গানাইজেশন অর্থাৎ বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা। এমনকি এখানে একটি বিমান তৈরির কারখানাও হতে পারে। এখানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যারা শিক্ষানবিশে থাকবেন, তাদেরকে শেখাতে গেলে সম্পূরকভাবে বিমানবন্দর এবং উড্ডয়ন জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানাও থাকতে হবে। এই বিশাল কর্মকা- পরিচালনার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যা আজ থেকে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। আর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেলে শুধু বাংলাদেশ নয় নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য তথা এখানকার পুরো অঞ্চলের যোগাযোগ এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে- এমনটি জানিয়ে বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, যেহেতু আকাশ যোগাযোগের বিষয়ে বিমান বাহিনী একটি প্রভাবক শক্তি তাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক সালমান হাসান ডেভিড ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এয়ারক্রাফট নির্মাণ, মেরামত, স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণ, মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি প্রযুক্তিতে বিশ্বের উন্নত দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও রিপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সাহসী পদক্ষেপে দেশে এই প্রথম একটি এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস করা হয় এবং ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, রেজিস্টার ও ট্রেজারারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে, জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আশা করছি আগামি বছর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদ, ৩৭টি বিভাগ, চারটি ইনস্টিটিউট রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এই অঞ্চলের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সালমান হাসান ডেভিড বলেন, আমাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী এবং যুগোপযোগী উদ্যোগে আমরা সফলকাম হবো এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্বের একটি প্রথমসারির অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে।