দিনাজপুর বার্তা ২৪.কম ॥ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে নবনির্মিত উপমহাদেশের বৃহৎ ঈদগাহ মাঠে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের নামাজ আদায়ের সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।
ঈদের দিন সোমবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেয় বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী¬।
এতে ইমামতি করেন দিনাজপুরের জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম শামসুল হক কাসেমি।
নামাজে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম পুলিশ সুপার হামিদুল আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলারও মুসলিল্লরা ছুটে আসেন বড় এ ঈদের নামাজে শরিক হতে।
বৃহৎ এ ঈদ জামাতকে ঘিরে চার স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ঈদগাহের মাঝে ওয়াচ টাওয়ার ছিল। মাঠে প্রবেশের পূর্বে মুসল্লিদের আনা মোটরসাইকেলসহ যানবাহন রাখার জন্য তিনটি পয়েন্টে চেকিংএর মাধ্যমে রাখার ব্যবস্থা ছিল। ঈদগাহ মাঠের চারপাশে ৬টি পথে প্রবেশের সময় মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পর জামাতে প্রবেশ করানো হয় মুসল্লিদের। এ ছাড়া মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন পথে টহল পুলিশ ছাড়াও সাদা পোষাকেও নিরাপত্তায় দায়িত্বে ছিল। পুলিশ ছাড়াও র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও নিরাপত্তায় সক্রিয় ছিলেন।
পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি¬র একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করার লক্ষ্য নিয়ে ৫২ গম্বুজ বিশিষ্ট বিশাল মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। মিনারটি উপমহাদেশের মধ্যে সবোর্চ্চ।
বড় ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি হয়েছেন এরকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন দুর-দুরান্ত থেকে আসা মুসল্লিনা। আগামীতে আরো বিপুল সংখ্যক মুসলি¬ জামাতে অংশ নেবে বলে আশা করছেন তারা।
নিরাপদে নামাজ আদায় শেষে মোনাজাতে দেশ এবং মুসলি¬ম উম্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ ইকবালুর রহিমের পরিকল্পনা এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে এটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। এই দৃষ্টি নন্দন ঈদগাহ মিনার এ রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব, যেখানে ইমাম দাড়াবেন, তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর পাশাপাশি রয়েছে ৫১টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। ৫২ গম্বুজ বিশিষ্ট মিনারের দুই পাশে ৬০ ফুট করে দুইটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ঈদগাহ মাঠের দু ধারে করা হয়েছে অজুর ব্যবস্থা। পুরো মিনার সিরামিক্স ইট দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত করে নির্মিত হয়েছে এই ঈদগাহ মিনার।
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক গোর এ-শহীদ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে কাজ শুরু হয়। সৌন্দর্য বাড়াতে গম্বুজে রং বেরঙের বৈদ্যুতিক বাতি দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়, পরে তা ছয় মাস বর্ধিত করা হয়।
নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে শত বছরের স্টেশন (অফিসার্স) ক্লাব অন্য প্রান্তে সরিয়ে দিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানা গেছে। মিনার কেন্দ্রিক মাঠের আয়তন ২০ থেকে ২২ একর। তবে মাঠের মধ্যে আরও কিছু স্থাপনা অপসরণের কাজ বাকি আছে, যা শেষ হওয়ার পর পুরো মাঠের আয়তন হবে ৬৫ একর।