পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি। নানামুখী তৎপরতার পরও এটি চালুর উদ্যোগ সফল হয়নি। ইতিপূর্বে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রি, এমপি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজার্তিক বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ প্রফেসর গত্তহর বিজভী বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু তাতেও তেমন কোন কার্যকরী আশ্বাস যেন মিলছেনা। বিমানবন্দর চালুর দাবীতে ইতিপূর্বে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হলেও তেমন কোন ফল পাওয়া যায়নি। ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় জেলাবাসীকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে আর্থিক ও শারীরিক দুই দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দুই জেলার মানুষ। উত্তরের অবহেলিত সীমান্তঘেষা জেলা ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলে নতুন করে তেমন কোন বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি। এর একমাত্র কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা তাই রাজধানীসহ দেশের কোন শিল্প উদ্যোক্তা এ জেলায় ভারি প্রতিষ্ঠান করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর ব্যাপারে সরকারের পক্ষে নানামুখী তৎপরতায় দেশের বিভিন্ন শিল্পও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান নতুন করে স্বপ্ন দেখেতে শুরু করে। কিন্তু এ পর্যন্ত বিমানবন্দরটি চালুর তোমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমান বন্দরের বিমানের টিকিট বুকিং দেওয়ার জন্য রয়েছে ৪/৫ টি বুকিং অফিস। এদের মধ্যে টাঙ্গন এয়ারলাইন্স, মাহিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, এস,এস ট্রাভেশস এন্ড ট্যুরস , জয় এয়্যারলাইন্স, তিথি এয়্যারলাইন্স এবং কসমিক ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস। এ অফিস গুলোর মধ্যে গড়ে প্রতিদিনি প্রায় ৩০/৪০ জন যাত্রী দেশের জাতীয় ও আর্ন্তজার্তিক রুটের টিকিট গ্রহণ করেন। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে এ জাতীয় মানুষদের সুবিধা হবে আনেকাংশে। কসমিক ট্র্যুরস এন্ড ট্রাভেল্স এর পরিচালক আসাদুজ্জামন চৌধুরী মানু বলেন, এখানকার বুকিং অফিসগুলে থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩০/৪০ জন যাত্রী বিমানের টিকিট কিনছেন। পড়ে যাত্রীর ঠাকুরগাঁও থেকে সৈদয়পুরে গিয়ে বিমানে উঠেন এতেকরে ঠাকুরগাঁও সৈদয়পুর যাতায়াতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়। তাদের মতে, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে তাদের এ অতিরিক্তি ভাড়া লাগত না। এতে করে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হতো। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি প্রথম নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন তা চালু ছিল। পাকিস্তান আমলেও ত্রানসামগ্রী পরিবহনসহ জরুরী কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। সে সময় ঢাকা ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিন বিমান সার্ভিস চালু ছিল। তখন থেকেই ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি উত্তরের প্রত্যক্ষ অঞ্চলের জনপদ সমূহের সাথে ঢাকার বিমান যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯৮০ সালে লোকসানের অজুহাতে এ বিমানবন্দরটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের দাবীর মুখে ১৯৯৪ সালে এর বিমানন্দরটি পুনঃরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য ১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামত টার্মিনাল ভবণ নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এয়ার বেঙ্গল ও বোরাক সহ ৬টি সেবরকারী সংস্থার ঢাকা ঠাকুরগাঁও রুটে স্টল বিমান সার্ভিস চালু করার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রানালয়ের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে। কিন্তু চুক্তি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর কিছু দিনের মাথায় স্টল বিমান সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ৩৩ বছর অতিবাহিত হলেও বিমান বন্দরটি গোচারণ ভূমি হিসাবে পড়ে রয়েছে। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিমান বন্দরটি পুনঃরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। যথারীতি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বিমান এ বন্দরে ল্যান্ড করানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এ বিমান বন্দরের ১০৫ একর জমি তাদের আওতায় নিয়ে স্থানীয়দের লিজ দেয়। সিভিল এভিয়েশন তাদের ১১০ একর জমি মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করে। সামরিক ভূসম্পত্তি বিভাগ তাদের ৩০ একর জমি সাধারণ কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করে। ঠাকুরগাঁও বাসী আশা করেন যেহেতু আগামী ২৯ মার্চ দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও সফর করবেন তিনি এ এলাকার মানুষের দুঃখ দূদর্শার কথাও বুঝবেন এবং পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।