দিনাজপুর বার্তা২৪.কম ডেস্ক : দেশ স্বাধীনের পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীর বস্ত্র ও কর্মসংস্থানের কথা ভেবে ভারত থেকে ৭টি বস্ত্র কল নিয়ে এসে ৭টি জেলায় স্থাপিত হয়। তার মধ্যে দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ একটি। এটি ১৯৭৫ সালের পহেলা মার্চ প্রয়াত বস্ত্র মন্ত্রী কামুরুজ্জামান ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। মিলটি ৩৬ একর ৩৭ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮০ সালের ১৬ অক্টোবর ২৫ হাজার ভারতীয় টাকু দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করে। এখানে কর্মসংস্থান হয় ৭ শত পুরুষ ও ৫ শত মহিলা শ্রমিকের, পরে আরও অস্থায়ী ভাবে বদলী হিসেবে ৩০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। মিলে ভাল মানের ২০,৩২, ৪০,৬০ ও ৮০ কাউন্টের সুতা উৎপাদিত হত। দেশে ৫৭ টি বস্ত্র কলের মধ্যে একাধিক বার দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে। এতে শ্রমিকরা মিলের লাভের অংশ পান। দেশের বস্ত্র কল গুলোর সুতা উৎপাদনে ভালই চলছিল। এমন সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে চোরা পথে সুতা আমদানী শুরু করে। অপর দিকে সরকারের মুক্ত বাজার অর্থনীতি গ্রহন। এরশাদ সরকারের আমলে মাথা ভারী প্রশাসন গড়ে উঠে। সেটাব ছাড়া জনবল গ্রহন। দিনাজপুর জেলা শহরে সরকারি প্রোগ্রামে মিল কারখানা ও অফিস খালি করে মিলের বড় বাসে করে নিয়ে যাওয়া হত কাজে থাকা সকলকে। বিভিন্ন ভাবে মিলের অর্থ তছনচ হতে থাকে, সুদান থেকে নিম্ম মানের তুলা মিলে আনা হত। সমুদ্র বন্দরে মাস ব্যাপী তুলা আনার জন্য কর্মকর্তাদের অবস্থান ছিল। অভিযোগ আছে কোন সরকারের আমলেও শিল্প রক্ষার গুরুত্ব দেয়া হয় নি। শ্রমিকদের পুর্নবাসনের কথা না ভেবে ঢালাও ভাবে শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের নামে ছাঁটাই করা হয়। সে ভাবেই বিজিএমসির পাট কল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। শিল্প কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের পাওনা দেয়া হয় কয়েক ধাপে। আজ প্রায় ২০ বছর বিগত হলেও দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক/কর্মচারীরা তাদের বকেয়া পাওনাদি আটকিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায় এক বছর পূর্বে মিলের বকেয়া পাওনা আবেদন পত্র হুইপ ইকবালুর রহিম এম.পি সুপারিশ নিয়ে পাওনাদার শ্রমিকরা মিল ইনচার্জ মোঃ এমদাদুল হক এর নিকট জমা দেয়া হয়। তিনি দ্রুত বি.টি.এম.সি প্রেরন করেন। বিটিএমসি চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রাণায়ে এক বৈঠকে তার সকল মিলের বকেয়া পাওনার জন্য অর্থ মন্ত্রালয়ে তুলে ধরা হলে অর্থ মন্ত্রালয় তা গ্রহন করেন। বিটিএমসির বকেয়া পাওনাদার মিলগুলোর মোট ১৬ কোটি টাকা পাওনা নিদ্ধারন হয়। তদমধ্যে দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলের একাধিক পাওনা এক কোটি টাকা যা অধ্যাবদি প্রায় এক বছর হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল নরছে না। দুঃখ করে মিলের একাধিক সিবিএ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতি পূর্বে আমরা কোন বকেয়া বিল তদবির ও অর্থ খরচ ছাড়া পাই নাই। আজ তো মিল বন্ধ সবাই বিচ্ছিন্ন কিছু করার নেই। অজ্ঞাত কারণে অর্থ মন্ত্রালয়ের অর্থ প্রাপ্তী বিটিএসসিতে স্থানান্তির হচ্ছে না। মিল থেকে বকেয়া পাওনা অপেক্ষায় থেকে অনেকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। আজ যারা বেঁচে আছে মিল চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাদেরও আশা নিরাশায় রুপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে মিল ইনচার্জ মোঃ এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিটিএমসি অর্থ প্রাপ্তি হলে আমরা টাকা দ্রুত পেয়ে যাব। মিল চালুর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার সীপ (পিপিপি) মাধ্যমে বন্ধ মিল গুলো চালু করার ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক মিল চালু হয়েছে দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ ২য় পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব সুতাকলে মৃত্যু ঘন্টা বাজার পর পাট কল গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাদেরও সুতাকলের মতো পূর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত সকল মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মহামারী করোনায় এমনিতে বিভিন্ন শিল্পের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কবলে পড়েছে, অপর দিকে বিদেশে অবস্থানরত প্রায় সকল শ্রমিককেরা দেশে ফিরে এসেছে। সব মিলিয়ে দেশে বেকার বাহিনীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দিনাজপুরের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ আজ জরাজীন্নতায় ভুগছে অনিতিবিলম্বে মিলটি কোন ভাবে চালু না হলে সম্পূর্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মিলটি চালু হলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতো। অপর দিকে এ এলাকায় একটি অর্থনৈতিক জোনের জমি অধিগ্রহন হলেও প্রায় ১ বছরেও তা দৃশ্যমান হয়নি। এটা প্রতিষ্ঠিত হলে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে সূত্র জানায়। অভিযোগ উঠেছে রংপুর বিভাগে এখনও গ্যাস না আসায় অনেক শিল্প উদ্যোক্তরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। দিনাজপুর বাসীর দাবী সরকার কাছে দিনাজপুরে নতুন শিল্প স্থাপন ও পুরনো শিল্প পূনঃ উদ্ধারে উদ্যোগী হবেন। এ ব্যাপারে দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস্ পাওনাদার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হামিদুল হক জানান, আবেদন নিবেদনে কিছু না হওয়ায় আমরা ক্ষুধার জ্বালায় মিল গেটে অথবা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী গ্রহনের কথা আপাতত ভাবছি।#