দিনাজপুর বার্তা২৪ ডেক্স: আপনি তখনই অ্যালার্জিতে ভোগেন যখন আপনার ইমিউন সিস্টেম কোন বস্তু বা উপাদানের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় যা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখায় না। আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কাজই হচ্ছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মত বহিরাগত বস্তুকে খুঁজে বের করা এবং এদেরকে শরীর থেকে বের করে দেয়া। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম ভুল করে অক্ষতিকর উপাদান যেমন- পরাগরেণু বা চিনাবাদামকে মারাত্মক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রাসায়নিক নির্গত করা শুরু করে। এর ফলেই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।
বিভিন্ন জিনিস অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় এবং এটি হঠাৎ করেই বিরক্তিকর সমস্যা তৈরি করে এবং জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নিই অ্যালার্জির সমস্যাকে বৃদ্ধি করে দেয় এমন সাধারণ উপাদানগুলোর বিষয়ে।
১। পরাগরেণু
বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে যে বিভিন্ন পরাগ উৎপন্ন হয় সেগুলো অ্যালার্জি বৃদ্ধি করে। অনেকেই একে হে ফিভার বলে। এর ফলে হাঁচি দেয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চুলকানি এবং চোখে পানি আসার মত উপসর্গ দেখা যায়। আপনার যদি পোলেন অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে যখন বাইরে খুব বাতাস বয় তখন ঘরের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন, জানালাগুলো বন্ধ রাখুন এবং এমন আবহাওয়ায় আপনার কাপড়চোপড় বাহিরে শুকাতে দেবেন না, বাহিরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। লবণ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে নিতে পারেন, অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে পারেন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
২। ডাস্ট মাইট
এটি খুবই ক্ষুদ্র জীবাণু যা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায়না। এর উপসর্গগুলো পোলেন অ্যালার্জির মতোই। এরা সারাবছরই হয়, কোন একটি বিশেষ ঋতুতে নয়। আপনার যদি ধুলায় অ্যালার্জি হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে প্রতি সপ্তাহে আপনার বিছানার চাদর ও বালিশের কভার গরম পানি দেয়ে ধুয়ে নিন, আপনার শোবার ঘর থেকে এমন জিনিসগুলো (কার্পেট, পর্দা, পোষা প্রাণী) দূরে রাখুন যেখানে ধূলা জমতে পারে, মাস্ক ব্যবহার করুন। অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে পারেন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
৩। চিতি
চিতি ও এক ধরনের ছত্রাক যা পরাগ রেনুর মতোই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এরা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে (বাথরুম, পাতা বা ঘাসের স্তূপের নীচে) লুকিয়ে থাকে। উপসর্গ ও চিকিৎসা পরাগের অ্যালার্জির মতোই। ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং যথাসম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করুন, দেয়ালের ফাটল বা পানি চুইয়ে পড়ার স্থানটি মেরামত করুন, গাছের টবেও চিতি জমতে পারে তাই ঘরের ভেতরে টব রাখবেন না।
৪। পোষা প্রাণী এবং আরশোলা
পোষা প্রাণীর ত্বক বা লালা থেকে যে প্রোটিন নির্গত হয় তার প্রতিও আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এ ধরনের অ্যালার্জি তৈরি হতে দুই বা তার চেয়েও বেশি বছর সময় লাগে। যদি একবার এ ধরনের অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা যায় তাহলে প্রাণীর সংস্পর্শে না আসলেও এই উপসর্গ দীর্ঘদিন যাবৎ থেকে যায়। আর যদি আপনার বাসায় পোষা প্রাণী না থাকে তাহলে আরশোলার কারণেও হতে পারে এ ধরনের অ্যালার্জি। যদি আপনার পোষা প্রাণী থাকে তাহলে তাকে আপনার বিছানায় আসতে দেবেন না, প্রতি সপ্তাহে পোষা প্রাণীকে গোসল করান। অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকঞ্জেস্টেন্ট এবং নেজাল স্টেরয়েড সাহায্য করতে পারে উপসর্গ কমাতে। তেলাপোকার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে ঘর পরিষ্কার রাখুন।
৫। পোকার কামড়/ হুল ফোটানো
মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল, বড় পিঁপড়ার কামড়ে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সারা শরীরে, একে অ্যানাফাইলেক্সিস বলে। এ রকম ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় তা হল – শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাস ফেলতে শাঁ শাঁ করে শব্দ হওয়া। মুখ, চোখ, কান, হাত ও পা ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি বা ডায়রিয়া হওয়া এবং মাথা ঘোরানোর মত অনুভূতি হওয়া। অ্যালার্জির টিকা নিলে অ্যানাফাইলেক্সিস প্রতিরোধ করা যায়। পোকার হুলটি ভালো ভাবে সরিয়ে নিন এবং সেখানে বরফ লাগালে ব্যথা কমবে।
৬। ল্যাটেক্স
আপনার যদি ল্যাটেক্স (রাবার গাছের আঠা)এর অ্যালার্জি থাকে তাহলে ল্যাটেক্স আছে এমন জিনিস যেমন – গ্লাভস, বেলুন ইত্যাদি স্পর্শ করলেই আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর ফলে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, হাঁচি দেয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা যায়।এটি খুবই বিরল।
৭। খাবার
কিছু খাবার আপনাকে বিরক্ত করতে পারে। কোন কোন শিশুর চিনাবাদামে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দুধ, মাছ, খোলসযুক্ত মাছ, বাদাম, সয়াবিন, গম, ডিম ইত্যাদি খাবারেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায় কারো কারো। কোন খাবারে আপনার সমস্যা হয় তা নির্ণয়ে আপনার চিকিৎসক সাহায্য করতে পারেন। শ্বাসকষ্ট, আমবাত, বমি, ডায়রিয়া, মুখের চারপাশ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
৮। ঔষধ
কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ যেমন- পেনিসিলিন বা অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। উপসর্গ সাধারণ থেকে মারাত্মক পর্যন্ত হতে পারে। মারাত্মক ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।