দিনাজপুর বার্তা২৪.কম॥ মৌসুমী ফল লিচু। সবার মন জয় করা অনন্য স্বাদের ও লোভনীয় দিনাজপুরের লিচু। বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশী লিচু এখানে হয়। আর এই দিনাজপুরের লিচু গোটা দেশে চাহিদা ও বাজার রয়েছে। আর এটাকে লক্ষ্য করে সারাবছর খাওয়ার উপযোগী করে সংরক্ষন করার অভিপ্রায়ে দিনাজপুরে লিচু সংরক্ষণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন।
জেলা পর্যায়ে ৩৮তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে দিনাজপুর জিলা স্কুলে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় কলেজ পর্যায়ে উদ্ভাবিত লিচু সংরক্ষণ পদ্ধতিটি শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বৃহস্পতিবার বিকালে চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন।
লিচু সংরক্ষণের এই পদ্ধতির সাহায্যে প্রায় ৬-৭ মাস পর্যন্ত লিচু সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন এর নেতৃত্বে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া তামান্না ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম ৬ মাস ধরে প্রভাষক আনোয়ার হোসেন ও জুয়েল রহমানের তত্বাবধানে গবেষণা চালিয়ে লিচু সংরক্ষণে সফলতা লাভ করেছেন।
লিচু সংরক্ষনের ব্যাপারে মোসাদ্দেক হোসেন জানায়, ফল পাকার জন্য দায়ী ইথিন বা ইথিলিন গ্যাসের উপরে পর্যবেক্ষণ করার পর লিচুকে গাছ থেকে পাড়ার পর যেন শুকিয়ে বা পঁচে না যায় সেজন্য পুষ্টির মাধ্যমে রাখা হয়। পুষ্টি মাধ্যম হিসেবে লিচুর বীজের পাউডার, লিচুর পাতার নির্যাস ও পানির দ্রবণ নির্দিষ্ট অনুপাতে তৈরি করে ফুঁটানো হয়। এরপর বোটাসহ লিচুকে বোতলজাত করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (২০-২৫ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট) ছাঁয়া যুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। লিচুর টিস্যু ও কোষসমূহ সরাসরি প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করার মাধ্যমে লিচু সতেজ থাকে এবং ৬-৭ মাস পর্যন্ত এভাবে লিচু সংরক্ষণ করা যায়।
আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ফরিদা ইয়াসমিন জানায়, লিচু সংরক্ষণ করে ২০১৫ ও ২০১৬ লিচু মৌসুমে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। লিচুর আবারণ লালচে বর্ণ ধারণ করলেও লিচুর দানা ও ফ্লেবার অপরিবর্তীত থাকে। লিচুর খাদ্য গুণাগুণের বৈশিষ্ট্য ঠিক আছে কিনা তা নির্ণয়ে আরও উন্নত গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ খালেকুজ্জামান জানান, অত্র কলেজের ছাত্র মোসাদ্দেক হোসেনের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সফল গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন জাতীয়ভাবে পুরস্কারের পাশা-পাশি, জেলার শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের স্বীকৃতি ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর সম্মানা পেয়েছে। কলেজ প্রশাসন থেকে তাকে স্কলারশীপের মাধ্যমে পড়াশুনার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।