দিনাজপুর বার্তা২৪.কম :- চলতি মওসুমে গোটা দেশে পেঁয়াজের মুল্য বৃদ্ধিতে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ঘাটতি পুরনের সহায়ক হিসেবে প্রদর্শনী আকারে বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডাল তেল ও মসলা বীজ সংরক্ষন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এর আওতায় উপজেলার রায়পুর ও ফতেপুরে প্রায় ২ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহায়তায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী কৃষকদের মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মানিক মিয়া একজন। পরিশ্রমী এ কৃষক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অনুপ্রেরনায় নিজস্ব প্রায় ১ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠ ভিত্তিক এ উৎপাদন কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করে তার প্রদর্শনী প্লটের ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন। মানিক মিয়া জানান, আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকুল সত্বেও কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে এ বীজ উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম বিনিয়োগ করতে হযেছে। পেঁয়াজ চাষ স¤পর্কে তিনি জানান, জমিতে ৫ থেকে ৭ বার চাষ দিয়ে মাটি ক্ষুদ্রাকার ও বেড তৈরী করতে হয়। সেই সাথে বেডের পাশ দিয়ে তৈরী করতে হয় ছোট ছোট নালা। যাতে জমিতে পানি জমে যেতে না পারে। এরপর বিঘা প্রতি প্রায় ছয় মন করে দেশী (ছাঁচি) জাতের পেঁয়াজের আল জমিতে রোপন করতে হয়। আল রোপনের সময় বিঘাপ্রতি পরিমান মত জৈব সার, দস্তা ২ কেজি, পটাশ ২০ কেজি, বরুন ২ কেজি ও ইউরিয়া সার ১০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। এতে চারা ভাল হয় এবং বীজও ভাল ও উন্নত মানের হয়। তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজে ফুল আসা মাত্রই মশা, জাব পোকা ও ল্যাদা পোকার আক্রমণ হতে পারে। এর মধ্যে ল্যাদা পোকা সব থেকে মারাত্বক। পেঁয়াজ ফুল দেখতে কদম ফুলের মত। এই ফুল থেকেই বের হয় কালো রঙ্গের দানা। যাকে কৃষকেরা কালো সোনা নাম দিয়েছে। তার মতে অন্য ফসল থেকে পেঁয়াজের বীজের চাষ অধিক লাভজনক এবং পেঁয়াজ উৎপাদনে ম্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক। মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ চাষের উপযোগী হলে এবং বাইরের বীজের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাষিদের এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা খুবই জরুরী। তিনি আশা করেন এ বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হবে ও মুনাফা হবে। তার মতে জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, দিনমজুর, ফসল উত্তোলন সহ বিঘা প্রতি ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর প্রতি একর জমিতে বীজ উৎপাদনের সম্ভবনা এক থেকে দেড় মণ। বর্তমানে প্রতি কেজি বীজের বাজার দর দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এ হিসেবে বিঘা প্রতি উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের দাম মণ প্রতি ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি সম্ভব। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন- আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৫৭.১৪% মেটানো সম্ভব। দেশে পেঁয়াজের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর চাহিদা পূরণের জন্য বিপুল পরিমাণ কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ৫থেকে ৬’শ কোটি টাকা ব্যয় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের ফলন বৃদ্ধির জন্য মানস¤পন্ন বীজ উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। আর স্থানীয় ভাবে চলতি বছরে পীরগঞ্জে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা দিয়ে প্রায় ১শ’ ৫০ একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব হবে।