স্টাফ রিপোর্টর ॥ দিনাজপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দু’টোই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস হতে জুলাই মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত তিন মাস আট দিনে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০০৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৮ জন। শুধু জুলাই মাসের ১ তারিখ হতে ৮ তারিখ পর্যন্ত এই ৮দিনেই ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ১৪০৬ জন।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এই অবস্থায় জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোন বিকল্প নেই। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন পালন করতে হবে। পাশাপাশি নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২৪ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে মাত্র ৯ জন। মে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১৩ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন, জুন মাসে আক্রান্তের হার কয়েকগুন বেড়ে হয়েছে ২৬৬২ জন ও এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৩ জন। আর জুলাই মাসের প্রথম আট দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। যা খুবই উদ্বেগজনক।
সিভিল সার্জন আরো জানান, জুলাই মাসের ১ তারিখ হতে ৮ তারিখ পর্যন্ত গত ৮ দিনে ১৪০৬ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ জুলাই তারিখ হতে ৮ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে কেউ কেউ না যুক্ত হয়েছেন। জুলাই মাসের ১ তারিখ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫১ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন, ২ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ১০৩ জন ও মৃত্যুবরন করেছেন ৩ জন, ৩ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৮ জন ও মৃত্যুবরন করেছেন ২ জন, ৪ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ১০৭ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, ৫ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৭ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন, ৬ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৩ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন, ৭ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ১১১ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন এবং ৮ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন ২২৬ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৮০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮৭৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় একজনসহ এ পর্যন্ত ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ২৪ ঘন্টায় ২৭৭ জনসহ এ পর্যন্ত ৭০৯৯ জন সুস্থ হয়েছেন।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৬৮৫ টি নমুনাসহ এ পর্যন্ত ৫৫০২৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘন্টায় ৮০৪ টিসহ এ পর্যন্ত ৫২০৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৬৯৮ জনসহ এ পর্যন্ত ৪৫৪৮১ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় ১৫৪ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৬৯৮৮ জনকে কোয়ারেন্টাইন হতে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ২৫৬১ জন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৫১৬ জনকে। আর বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২১৫ জন। এর মধ্যে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৫৩ জন, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সমূহে রয়েছে ৩৭ জন। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনার উপসর্গযুক্ত আক্রান্ত ১০৭ জন ও সন্দেহভাজন ১০৮ জন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ আরো জানান, দিনাজপুর জেলায় বর্তমানে মজুতকৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২৮৫টি (পুরো জেলায় ১৫২৪), হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা’র সংখ্যা ১৯টি ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা ২৮টি (পুরো জেলায়)।
এদিকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ মাঠে তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুরে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। ৭ জুলাই বুধবার রাত ১২টায় এই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় দফায় লকডাউন আরো ৭ দিন বৃদ্ধি করায় এই লকডাউন হবে আগামী ১৪ জুলাই বুধবার রাত ১২টায়।