
স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে জনসাধরণের প্রাণিজ পুষ্টি নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এর ব্যবস্থাপনায় দিনাজপুর জেলায় ভ্রাম্যমান দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানে প্রাণিজ পণ্যের (দুধ, ডিম, মাংস) সরবরাহ স্বাভাবিক এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার নিমিত্তেও পরিচালিত হচ্ছে এই ভ্রাম্যমান বিক্রয় কেন্দ্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত ২ এপ্রিল শুরু হওয়া এই কার্যক্রম এখন চলমান রয়েছে। জেলা শহরে বিভিন্ন রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব দ্রব্য বিক্রয় কার্যক্রম। সরকারের এমন উদ্যোগে জনসাধারণ বেশ উপকৃত বলে জানিয়েছেন অনেকে। জনসাধাণের অভিমত, সরকারের এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার। শুধু দাম কমের ক্ষেত্রে নয় দ্রব্য কিনতে এসেছেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয় না বলে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় সকাল ১১ টার পর ক্রেতার চাপ বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমে যায়। আবার বিকেলের দিকে একটু বিক্রি ভালো হয়।
শহরের আইন কলেজ মোড়ে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখে কিনতে এসেছেন মিনহাজুল হক। বাড়ির দোরগোড়ায় এমন সুবিধা পেয়ে বেশ খুশি তিনি। তিনি বলেন, আমি আজ ৫১০ টাকায় গরুর মাংস কিনছি। করোন কালে বাসার সামনে এমন সুবিধা পেয়ে আসলেই ভালো লাগছে। সব সময় বাসার সামনে যদি এমন সুবিধাটি পাওয়া যায়, তবে মন্দ হবে না। শুধু যে বাসার সামনে পাচ্ছি এমন সুবিধার জন্য নয়, বাজারের থেকে একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেক ভালো লাগছে।
গরুর মাংস ক্রেতা শাহাজাদা বলেন, সরকারের ভ্রাম্যমান এমন মাংস বিক্রির পদ্ধতিটি আমার বেশ ভালো লেগেছেন, এমন উদ্যোগ আমি বেশ খুশি। কারন বাজারে ৫৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হয়। এখানে তুলনা মূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে মাংসটি। আবার নিজের যতটুকু দরকার, ততটুকু নিতে পারছে মানুষ। হাফ কেজি, আড়াই’শ গ্রাম যার যেমন খুশি।
এদিকে গরুর মাংস বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, আমাদের কাছে প্রাণী সম্পদ বিভাগ গরু মাংস কিনে নিয়েছে ৫’শ টাকা কেজি দরে। আমরা যে দামে বিক্রি করছি এতে যদি লাভ হয় তাও ওদের (প্রাণিসম্পদ বিভাগ) লোকসান হলেও ওদের (প্রাণিসম্পদ বিভাগ)। বাজারে এই মাংস নিয়ে আমাদের কাছে নিচ্ছে, কারণ বাজারের থেকে কম পাচ্ছে। আমরা বিক্রি করছি ৫১০ টাকা কেজি দরে। এমন পদ্ধতিতে রমজান মাসে আমাদের কাছে মাংসের চাহিদাটাও বেশি। জনগন তো ২ টি গরু মাংস বিক্রি করলেও নিবে। কিন্তু আমাদের নিয়ম একটাই বিক্রি করা।
শহরের বলাই মোড়ে দেখা মিলেছে মুরগির ভ্রাম্যমান মুরগির দোকনের। যেখানে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগি। মুরগি বিক্রেতা বাবুল বলেন, বর্তমান করোনার সময়ে ফাঁকা ভাবে মুরগি বিক্রি করতে পেরে আসলেই ভালো লাগছে। সরকারের এমন কাজ আসলেই ভালো। ক্রেতাদেরও ভালোমত মুরগি দিয়ে বিদায় করতে পারছি। শুধু আমাদের জন্যই নয়। সকলের জন্যই এমন টা ভালো হচ্ছে।
তিনি বলেন, রমজান মাস হিসেবে ক্রেতার চাহিদা ভালো। সকাল থেকে (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) এখন পর্যন্ত ব্রয়লার ৩০ টি, সোনালী ৬০ টি, আর লেয়ার মুরগি বিক্রি করছি ২০ টি।
মুরগি কিনতে এসছেন ওমল কুমার সরকার। তিনি বলেন, এখন করোনা পরিস্থিতি, মানুষের আয় অনেক কমে গেছে। মানুষ চাচ্ছে কোথায় সহজভাবে, কমদামে, মানুষে ভীর এরিয়ে জিনিস কেনা যায়। আমি এখানে মুরগি কিনতে আসলাম দেখলাম বেশ ফাঁকা ভাবে কেনা যাচ্ছে। আমি এখানে সোনালী মুরগি নিলাম ২৩০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই একই মুরগি বাহাদুর বাজারে ২৪০ টাকা চায়।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি কম দামে আর জনসমাগম না থাকায় কিনতে পারলাম অনেক ভালো ভাবেই। বর্তমান এই ধরনের সেবা আসলেই মানুষের উপকারের জন্য। আমি চাই জনগনের সুবিধার্থে যেন সরকারের এমন কার্যক্রম সব সময়ের জন্য থাকে। আমি চাই দু’দিন এমন সুবিধা দিয়ে যেন হারায় না যায়।
দিনাজপুর বড়মাঠে দেখা মেলে ডিম বিক্রেতাকে। ডিম কিনতে এসেছেন রুমি বেগম। তিনি বলেন, বাজার করতে এসেছিলাম। এখানে দেখলাম অনেক সুরক্ষিত ভাবে কেনা যাচ্ছে, ভীড় নেই আর কম দামেও ডিম পাওয়া যাচ্ছে, তাই নিয়ে নিলাম।
ডিম বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার খামাড়ি দের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে ডিম, দুধ বিক্রয় করছে ক্রেতাদের মাঝে। আমি নিজেও একজন খামাড়ি। শুধু আমার খামাড় থেকেই নয়, বিভিন্ন খামাড় থেকে এসব ডিম ক্রয় করেছি। আমাদের এই বিক্রয় কার্যক্রমে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজারের মত ডিম বিক্রি হয়। প্রাণী সম্পদের মাধ্যেমে সরাসরি ক্রেতাদের মাঝে আমরা এসব বিক্রি করছি। তাই বাজার মূল্যের থেকে প্রতি হালিতে আমরা দুই টাকা কমই বিক্রি করি।
তিনি বলেন, শহরের সব যায়গায় গিয়ে আমরা বিক্রি করি, তবে বড়মাঠেই বেশি সময় দিয়ে থাকি। কারণ এই যায়গাটা একটু ফাঁকা। আমরা পুরো রমজান মাস জুড়ে এই বিক্রি কার্যক্রম চালাবো। রমজান মাসের পর আরও ১০ দিন কার্যক্রম চলবে। আর আমি মনে করি যেহেতু স্বল্প মূল্য অন্যদিকে ভীড় নেই বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী অব্যশই এই কার্যক্রম চলমান থাকলে ভালো হয়।
উল্লেখ্য, ভ্রাম্যমান এই বিক্রয় কার্যক্রমে আজ গরুর মাংস ৫১০ টাকা কেজি, দুধ ৫০ টাকা লিটার, ব্রয়লার ১৩০ টাকা কেজি, লেয়ার ১৯০ টাকা কেজি এবং সোনালী ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।