ঢাকাসোমবার , ৩ মে ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বদরে সাহাবী আবু উবাইদা ইবনুল জার্রাহ (রাঃ)

দিনাজপুর বার্তা
মে ৩, ২০২১ ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

“মুমিনগন তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করও না এবং তোমরা একে ওপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল না। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না” (সুরা আল-হুজরাত-২)। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ এবং নবী (সাঃ) এর মর্যাদা অত্যধিক বা সর্বাধিক। র্শিক ভয়াবহ অপরাধ এবং নবী (সাঃ) এর মর্যাদা পৃথিবীর সকল মানুষের উপরে না দিলে মুমিনের সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহকে ভালবাসতে হলে প্রথমে তাঁর নবী (সাঃ) কে ভালবাসতে হবে। ধর্মের কোন বিধান বা বিশ্বাসের উপর খারাপ মন্তব্য বা কটুক্তি করা যাবে না। তাই নবী (সাঃ) কে সাহাবীগণ সবসময় জীবন দিয়ে ভালবাসতেন। তারা বিপদে বা যুদ্ধের মাঠে ও শক্রুপক্ষের তীর নিজের শরীরে বিদ্ধ করেছেন। কিন্তু নবীর (সাঃ) শরীরে তীর বিদ্ধ হতে দেননি। সকল যুদ্ধের মধ্যে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরের মর্যাদা সর্বাধিক। বদর মূলত একটি কূপের নাম এবং তার সাথে সংযুক্ত ময়দানকে বদর বলা হয়। এই মাঠ মক্কা ও মদীনার মাঝে রাজপথে অবস্থিত। বদরের যুদ্ধে ছিল সত্য ও মিথ্যার মধ্যে একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল মদীনায় ইসলামের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি। মদীনায় নিরাপদে থেকে মুসলমানেরা ইসলামের কাজ চালিয়ে যাক এটা মক্কার ঈর্ষান্বিত, বিধর্মী কুরাইশগণ এবং মুশরিকরা কোন ভাবে সহ্য করতে পারেনি। সে সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর পাতায় যদি বদরের যুদ্ধ সংগঠিত না হত এবং মক্কার মুশরিকদের সম্মিলিত শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ না হত তাহলে নিঃসন্দেহে কেবল হেজাজ, আরব ও ইরানই নয় বরং গোটা বিশ্বের প্রতিটি স্থান, জল ও স্থলভাগ অত্যাচার, নিপীড়ন ও মিথ্যায় আজ ভরে যেত। আমরা আজও পৃথিবীবাসী অন্ধকারে পরে থাকতাম। মুহাজির সাহাবীগণ আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনের জন্য নিজের বংশ, গোত্র ও নিজের নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিলেন। বদর যুদ্ধ জিহাদের ময়দানে ছিল সমগ্র আরববাসীর নিকট বিস্ময়কর ব্যাপার। যা নিজেদের চোখে তারা তা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। একদিকে পিতা-অন্যদিকে পুত্র সে ঘটনাটির বর্ণনায় পরে আসব। মুসলমানদের পক্ষে হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর (রাঃ) অন্যদিকে আপন ভাই উবাইর ইবনে উমাইর। হযরত উমর (রাঃ) নিজের মামা প্রতিপক্ষে আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরা। হযরত আবু বকর (রাঃ) বিপরীতে নিজের ঔরসজাত সন্তান আব্দুর রহমানের সহিত লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। হযরত আলী, হযরত হামজা, হযরত উবাইদা উবনুল হারেস (রাঃ), উৎবা, শাইবা ও অলীদ ইবনে উৎবাকের হত্যা করেছিলেন। এরা সকলে তাঁদের নিকট আত্মীয় ছিলেন। নবী (সাঃ) এর জামাতা আবুল আস বন্দী হয়ে আসলেন কিন্তু নবী (সাঃ) এর জামাতা বলে তার সাথে বিন্দুমাত্র পার্থক্যমূলক বা অন্য বন্দীদের থেকে ভিন্নতর ব্যবহার করা হয়নি। পৃথিবীতে মানুষ পিতা বা মাতার নামে পরিচিতি লাভ করে এটাই নিয়ম, এটাই বিধান, এটাই প্রথা। কিন্তু আশারায়ে মুবাশ্শারা এক সাহাবী যিনি (পিতামহের নামে) ইসলাম প্রচারের প্রথম ভাগে হযরত আবু বকর (রাঃ) মুসলমান হওয়ার পরের দিনই তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং মহানবী (সাঃ) এর চিরসাথী বা সাহাবী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। তবে যেকোন সংকট মুহূর্তে চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁর মধ্যে পরিস্ফুটিত হয়ে উঠত। আর তিনি হলেন বিখ্যাত কুরাইশ বংশের সন্তান আবু উবাইদা ইবনুল র্জারাহ (রাঃ)। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক উম্মাতের একজন করে আমীন ছিল আর আমার উম্মাতের আমীন (আমানতদার) হচ্ছে আবু উবাইদা ইবনে র্জারাহ (রাঃ)। রাসূল (সাঃ) আবু তালহার (রাঃ) সাথে আবু উবাইদাহ (রাঃ) এর ভ্রাতৃত্ব কায়েম করে দেন। মুমীন জননী হযরত আয়শা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে? নবী (সাঃ) জবাব দিলেন, আবু বকর, তারপর উমর তারপর আবু উবাইদা (রাঃ)। সর্বদা আবু উবাইদার উপর আল্লাহ ভীরুতা বিজয়ী ছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু। মহাম্মদ ইবনে জাফর (রাঃ) বলেন, খ্রিষ্টানদের একটা প্রতিনিধি দল নবী করীম (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল-হে আবুল কাসিম। আপনার সাথীদের মাঝ থেকে আপনার নির্বাচিত কোন একজনকে আমাদের সাথে পাঠান। তিনি আমাদের কিছু বিতর্কিত সম্পদের মীমাংসা করে দেবেন। আপনাদের মুসলিম সমাজ আমাদের সকলের কাছে মনোপূত ও গ্রহণযোগ্য। একথা শুনে নবী করীম (সাঃ) বললেন, সন্ধ্যায় তেমারা আমার নিকট আবার এসো। আমি তোমাদের সাথে একজন দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিতে প্রেরণ করব। উমর ইবনুল খাত্তাব বলেন, আমি সেদিন সকাল সকাল যোহরের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হলাম। আর আমি এ দিনের মতো আর কোন দিন নেতৃত্বের জন্য আকাঙ্খিত হইনি। এর একমাত্র কারণ, আমিই যেন হতে পারি নবী করীম (সাঃ) এর এ প্রশংসার পাত্রটি। নবী করীম (সাঃ) আমাদের সাথে যোহরের সালাত শেষ করে ডানে-বামে তাকাতে লাগলেন। আর আমিও তাঁর দৃষ্টিতে আসার জন্য আমার গর্দানটি একটু উচুঁতে তুলে ধরতে লাগলাম। কিন্তু তিনি তাঁর চোখ ঘোরাতে এক সময় আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে দেখতে পেলেন। তাঁকে আহ্বান করে তিনি বললেন, তুমি তাদের সাথে যাও এবং সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের বিতর্কিত বিষয়টির মীমাংসা করে দাও”। আমি তখন মনে মনে বললাম, আবু উবাইদা এ মর্যাদাটি কেড়ে নিয়ে গেল। উহুদের যুদ্ধে নবী (সাঃ) এর দুটো দাঁত শহীদ হয়, তাঁর কপাল রক্তে রঞ্জিত হয় এবং গন্ড দেশে বর্মের দুটি বেড়ি বিঁধে যায়। আবু উবাইদা শক্ত ভাবে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে বেড়ী তুলতে গেলে তারও একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। খন্দক ও বনী কুরাইজা অভিযান, হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক চুক্তিতে একজন সাক্ষী, দুবার হাফসায় হিযরত, খাইবার যুদ্ধে একজন বীর, সিরিয়া অভিযানে সর্বাধিনায়ক, মক্কা বিজয়ে, তায়িফ অভিযান এবং বিদায় হজ্জে¦ও আবু উবাইদা সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বদর যুদ্ধের দিন আবু উবাইদার ঈমানের পরীক্ষা ছিল সকল ধ্যান-ধারনা ও কল্পনার উর্ধ্বে, মৃত্যুর প্রতি সম্পূর্ন উদাসীন যুদ্ধের মাঠে তিনি বেপরোয়াভাবে কাফিরদের উপর আক্রমনের পর আক্রমন চালাতে থাকেন। মুশরিকরা তাঁর আক্রমনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অশ্বারোহী সৈনিকরা প্রানের ভয়ে দিশেহারা হয়ে দিক বিদিক পালাতে শুরু করে। কিন্তু শক্র পক্ষের এক ব্যাক্তি বার বার ঘুরে ফিরে তাঁর সম্মূখে এসে দাঁড়াতে লাগলেন। আর তিনিও তার সামনে থেকে সরে যেতে লাগলেন যেন তিনি সাক্ষাত থেকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। লোকটি ভীড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। আবু উবাইদা সেখানেও তাকে এড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে সে শক্রপক্ষ ও আবু উবাইদার মাঝখানে এসে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ান। ঐ আগন্তুক লোকটির একমাত্র লক্ষ্য ছিল নবী (সাঃ) কে হত্যা করা। কাজেই তিনি বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। প্রথম এবং দ্বিতীয়বার ঐ লোকটি আবু উবাইদাকে দেখে বিব্রতবোধ করে চলে গেলেও তৃতীয়বার যখন এলেন তখন আবু উবাইদা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তখন তাঁর ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। তিনি তাঁর তরবারির এক আঘাতে লোকটির মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। মাথাটি কয়েক গজ দূরে গিয়ে পড়লে লোকটি তখন মাটিতে গড়িয়ে পরেন। যুদ্ধের শেষে মাথা এবং লাশ একত্রিত করা হল। লোকটি কে? সে আর কেউ নয়। সে আবু উবাইদার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। মূলত আবু উবাইদা তাঁর পিতাকে হত্যা করেনটি। তিনি তাঁর পিতার আকৃতিতে শিরক বা পৌত্তলিকতাকে হত্যা করেছেন। মক্কার কুরাইশগণ বা ইসলাম বিরোধীরা সবখানে প্রচার করলেন মুহাম্মদ পুত্রকে দিয়ে পিতাকে হত্যা করিয়েছেন। নবী (সাঃ) চুপ করে রইলেন। আল্লাহ তাআলা এ পরিস্থিতিতে আবু উবাইদা (রাঃ) ও তাঁর পিতার শানে সূরা আল্ মুজাদিলার ২২ নং আয়াত নাযিল করেন। “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাঁদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও এরা পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জাতিগোষ্ঠী হয় তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদের কে আল্লাহ শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে”। লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।