ঢাকামঙ্গলবার , ৪ মে ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কাহারোল
  5. কুড়িগ্রাম
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খানসামা
  9. খেলা
  10. গাইবান্ধা
  11. ঘোড়াঘাট
  12. চাকরী বার্তা
  13. চিরিরবন্দর
  14. জাতীয়
  15. ঠাকুরগাঁও
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমি ও আমার ক্রীড়াঙ্গণ

দিনাজপুর বার্তা
মে ৪, ২০২১ ৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রওশন আরা ছবি ॥ আমার জন্ম ১৯৬৬ সালে ১ লা মে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে কসবা ইউনিক ভিলায়। আমার জন্মের ৫ বছর পরেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় দেশে। আমার যুদ্ধের কথা তেমন একটা মনে নাই। তবে দেশ স্বাধীনের পর বাড়ীর পাশের স্কুল সেন্ট ফিলিপ্স হাই স্কুলে আমি ভর্তি হই এবং সেখানেই স্কুল জীবনের শুরু। আমি তখন খুব ছোট ওয়ান কি টু এ মনে হয়। ছোট বেলা থেকেই একটু চঞ্চল ও দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। খেলাটাকে খুব পছন্দ করতাম। আর একটা সুবিধা ছিল সেটা হলো আমার বাড়ীর পাশে দিনাজপুর স্টেডিয়াম। তাই স্টেডিয়ামে যখনই কোন খেলা হতো সেখানেই অংশগ্রহণ করতে পিছ পা হতাম না। আর আমার সব খেলাতেই অংশগ্রহণে পুরস্কার আছে। যা আমার ঘরের অনেকাংশেই পুরস্কারে ভরা। এক সময় এমন হলো যে আমার নেতৃত্বেই এলাকায় খেলাধুলার আমেজ তৈরী হলো এবং সেই থেকে আমাদের এলাকাটা এখন পর্যন্ত খেলাধুলার এলাকা হিসেবে পরিচিত লাভ করে। আমি ক্লাসে বসে সহপাঠী মিনু ও রুবুর মুখে সারাক্ষণ হেলিপোট শিশু খেলা-ঘরের কথা শুনতাম। সেখানে কিনা বাচ্চারা খেলা করে এবং খেলা শেষে তাদেরকে বিস্কুট, ছাতু, দুধ পাউডার খেতে দিত। তাদের এসব গল্প শুনে আমার খুব লোভ হয়। এক পর্যায় তাদেরকে বলি আমি গেলে নেবে? তোদের সঙ্গে আমিও যাব। কখন কিভাবে যেতে হবে সব শুনে নেই এবং তারপর গ্রামের সমবয়সীদের জানাই, বলি চল আজকে সবাই মিলে যাব। বাড়ীতে বড় ভাইও শুনে বেশ আগ্রহ সহকারে যাওয়ার কথা বলে। সেদিন প্রথম যাই। তখন জিমন্যাস্টিক্স কোচিং করার জন্য ঢাকা থেকে গিয়াস উদ্দীন যাকে দাদু বলতো সবাই। উনি আসছিলেন খেলা শিখাতে (উনি বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন) এবং প্রথম দিনেই আমাকে আরচিং করাতে গিয়ে বলেছিলেন, তোমার ফ্লাকসিবিলিটি খুব ভাল, তুমি একদিন ভাল জিমন্যাষ্ট হবে এবং প্রথম দিনেই আমার আরচিং হয়ে যায়। আর এ থেকেই আগ্রহটা একটু বেড়েই যায় বিকাল হলেই যেন মনে হয় কখন যাব খেলতে। আমার বাড়ী থেকেই ৩-৪ জন যাই এবং পাড়ার আনিস ভাই, আসলাম ভাই, হাজেরা, সুলতানা, মিলু, সাহানা, মোকসেদ ভাইসহ অনেকেই যায়। আমরা ১০ ভাই বোন। আমি মাঝখানে মানে ৫ নাম্বার, কিছু হলে উভয়রেই গালি খেতাম, বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, মা ছিলেন গৃহিনী। বেশী ভাই বোন হওয়ার পরেও বাবা মা বড় ভাই আমাকে খুব আদর করত। কারণ আমি ছিলাম বেশ চটপটে, যাই ধরি তাই পারি, গান, নাচ, খেলাধূলা, সেলাই ইত্যাদি। খেলাঘর মানে হেলিপোটে যেতে যেতে নেশায় পরিণত হয়ে গেল। এক সময় যে খেলায় অংশ নেই সেটাতেই পুরস্কার পাই। শুধু পুরস্কার নয়, একেবারে প্রথম পুরস্কার, পাশের বাড়ীর সমবয়সী বান্ধবীর মত নাম মেহেরুন, সব সময় এক সঙ্গে বেড়াতাম তার দাদী বলতো ও পুরস্কার আনে তুই কেন পাস না। কথাগুলো আজও কানে বাজে। ১৯৭৬ সাল ন্যাশনাল জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযোগিতা ময়মনসিংহে হবে। বাছাই হবে দিনাজপুর থেকে। তখনকার বড়দের মধ্যে কিছু কিছু মনে পড়ে রীনা আপা, রুমি আপা, রনজু আপা, সুফিয়া আপা, রাকতুবা আপা আরো অনেকেই। সবার মধ্যে তখন আমিই ছোট সম্ভবত ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি। মজার ব্যাপার আমি সিলেক্ট হই। ন্যাশনাল খেলতে যাই ময়মনসিংহে। আমাদের পাড়ারও অনেকেই থাকে সেখানে এবং কনিষ্ঠতম জিমন্যাষ্ট হিসাবে ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে সেই প্রতিযোগিতায় আমি বিশেষ পুরস্কার পাই। সেই থেকে খেলার নেশা আরও বেড়ে যায়, পড়ালেখায় খুব একটা ভাল ছিলাম না, তারপরও স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তার হবো। কিন্তু স্কুল বাদ দিয়ে শুধু খেলাধূলা করলে কি আর ডাক্তার হওয়া যায়। কিন্তু খেলার ভাল ফলাফলের জন্য যা যা করার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রুটিন ওয়াইজ চলতাম। ১ম পুরস্কার পেতে হলে যতটুকু পরিশ্রম করার দরকার তাই করেছি। মানুষ স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে আর আমি স্বপ্ন দেখতাম জেগে জেগে। আল্লাহ আমার পরিশ্রমকে স্বার্থক করে দিয়েছে। শুরু হয় ১৯৭৮ সাল জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা জিমন্যাষ্টিক্স এ ১ম স্থান অধিকার করি এবং প্রথম গোল্ড পাই। ১৯৭৯ তেও ১ম স্থান করে গোল্ড আসে। এরই মধ্যে ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে ষষ্ঠ জাতীয় জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযোগিতায় সাইড হর্সে ১ম, ফ্লোরে ২য়, ব্যালেন্সবীমে ১ম স্থান অধিকার করি। শুরু হয় আমার পুরস্কার পাওয়ার জীবন। আমার বাড়ীর লোকজনসহ পাড়ার লোকজনও বলাবলি করেন সহপাঠীদের মধ্যেই একমাত্র আমিই পুরস্কার পাই। ১৯৮০ তে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ ৪টা ইভেন্টের মধ্যে ৩টিতেই গোল্ড পাই এবং ১টা রৌপ এবং সেই বার ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হই। এদিকে খেলার জন্য ঢাকায় থাকার পরও আমাদের জিমন্যাস্টিক্স কোচ আজিজার স্যারের এক বন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা লুৎফর রহমান স্যার তাঁর বাসাও দিনাজপুরে। এই সুবাদে আমাদের পড়াশোনার দায়িত্বটা তিনিই ঢাকায় বসেই করাতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা করাতে রেজাল্ট খুব একটা ভাল হতো না। তবে সাইন্স নেওয়ার জন্য অংক এবং বিজ্ঞানে যতটুকু নাম্বার পাওয়ার দরকার তা ছিল। যদিও এলোসি স্যার আমার পড়ালেখার অবস্থা দেখে বলেছিলেন যে তুই কিভাবে সাইন্স নিস আমি দেখবো। সাইন্স নিতে গেলে বিজ্ঞান ও অংকে তোর বেশী মার্ক প্রয়োজন তা তুই কিভাবে সাইন্স নিবি। ক্লাস করার নামে ঘন্টা। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল আমাকে সাইন্স নেওয়া থেকে বাদ দিতে পারবেনা জানি। কিন্তু স্যারেরা আমাকে বুঝিয়ে বলে তুমি খেলাধূলা করো বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতে হয় তুমি আর্স নাও। স্যারদের কথামতই চললাম। ঢাকায় বড় ভাই মমিন উদ্দীন এর কাছে থেকে প্রাকটিস করি আর পরীক্ষার সময় এসে দিনাজপুরে পরীক্ষা দেই। যতটুকু শুনেছি এই খেলাঘর কসবার এডভোকেট দলীল উদ্দীন ও আজিজার স্যারের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে এবং আমার এ পুরস্কার আস্তে আস্তে দিনাজপুরকে জিমন্যাষ্টদের শহর হিসাবে পরিচিত করে।
১৯৮০ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জিমন্যাষ্টিক্স এ প্রথম হই এবং সে সময় রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসাবে পুরস্কার পাই। ১৯৮১ সালে সপ্তম জাতীয় জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হই। ১৯৮২ তে ৮ম জাতীয় জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযোগিতায় আমার অনেক ১ম পুরস্কার হিসেবে গোল্ড আসে। এমনও হয়েছে ৪টি ইভেন্টের মধ্যে ৩টিতেই ১ম হয়েছি। কিন্তু আমি দিনাজপুরের মেয়ে হয়েও দিনাজপুরের কাছে তেমন একটা সুবিধা আমি পাইনি। এখন বর্তমানে যত সুযোগ সুবিধা সত্যিই আফসোস হয়। এরপর ৩য় বাংলাদেশ অলিম্পিক, আমাকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কোরপোরেশন (BTMC) থেকে খেলার জন্য প্রস্তাব দেয়। আমি তাদের সব কিছু শুনে তাদের দল থেকে খেলার জন্য রাজি হই। তখন ছিল ১৯৮৪ সাল। সেই থেকে BTMC তে খেলার ফলে দিনাজপুরের স্যার আমার সঙ্গে ভাল আচরণ করেন না। সে সময় কমপিটিশনের ঠিক আগ মুহুর্তে আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়। সেটা হলো প্রাকটিসের সময় অন্য জনের মাথা আমার নাকে লাগে এবং ভীষণ রক্তক্ষরণ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকা হয়, আমার এ অবস্থায় মিমু আপা, ফেন্সি আপা BTMC কোচ আকরাম ভাই ও দিপু ভাই সবাই আসে, জ্ঞান ফেরার পর যখন দেখি আমার দিনাজপুরের আজিজার রহমান স্যার আমাকে দেখতে আসেননি, শুনে খুব কষ্ট পাই এবং সেটা ছিল ফ্লোর ইভেন্ট, যেটাতে আমার গোল্ড পাওয়ার কথা। জিদের বসে একটু রেস্ট নিয়ে আমি খেলি তবে ১ম এর জায়গায় ২য় স্থান লাভ করি। খেলা শেষ হওয়া মাত্র আবার রক্তক্ষরণ শুরু হলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এটা আমার জীবনের একটা স্বরণীয় ঘটনা বলা যায়। এসএসসি ১৯৮৩, সাল এইচএসসি ১৯৮৫ এবং বিএ পাস ১৯৮৭। দিনাজপুর মহিলা কলেজ ও কেবিএম কলেজ থেকে পাশ করে ১৯৮৯ সালে ঢাকা শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড ডিগ্রী নেই। সেই সময়ে একটা মফস্বল শহর থেকে খোলাকে ভালবেসে উঠে আসা অনেক টাফ ব্যাপার। বাইরের লোকজনের কানভারী করা কথা শুনে বাড়ীর লোকজনও একটু খেলাধুলা থেকে সরে আসতে বলে। আর সেই বাধা আমাকে অতিক্রম করতে হয়। বাবা ইউনিক লাইব্রেরী স্বত্বাধিকারী খাজির উদ্দীন আহমেদ এবং মা মতেজা বেগম সব সময় উৎসাহ দিতেন। বড় ভাই মমিন উদ্দীন ছিলেন বিচিত্রা উন্নয়ন সংস্থার ডাইরেক্টার। ২। বড় বোন রুকশানা বেগম ডাক বিভাগের পোষ্টাল অপারেটর। ৩। মেজ বোন ফেরদৌসী বেগম গৃহিনী। ৪। মেজ ভাই মোকসেদ উদ্দীন থাকে লন্ডনে। ৫। আমি নিজেই রওশন আরা ছবি শিক্ষকতা করি। ৬। ছোট বোন খোরশেদা বেগম ডলি কলেজের প্রভাষক। ৭। ছোট বোন রুমানা সুলতানা বাবলি ঢাকায় উত্তরা কলেজের (শিক্ষক) চাকরি করে। ৮। মনিরা ইয়াসমিন পান্না লন্ডনে। ৯। মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী। ১০। রেজিনা সুলতানা ডেইজি মহিলা অধিদপ্তরে কর্মরত।
এত ভাই বোন এর মধ্যে বেশ ভাল ভাবেই দিন কাটছিল খেলাধূলাকে ঠিক রেখে। বড় দু’বোনের বিয়ে দেয় বাবা, এবং তারপর ১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারী হঠাৎ মারা যান বাবা। চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসল, আমার পরের দু’বোনও বিবাহযোগ্য, উপরের দু’বোনের বিয়ে হয়েছে। যার ফলে বাড়ির অনেক কিছুই দেখাশুনা করতে হতো। তখন আমি জগন্নাথ কলেজে মাস্টারস ১ম বর্ষের ছাত্রী। আর এই ১৯৯০ সাল পর্যন্তই আমার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা হয়। সেটা ছিল ১৬তম জাতীয় জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযাগিতা। বাবার মৃত্যুর ফলে সে বারের রেজাল্ট ভাল হয়নি শুধু হর্সে ব্রোঞ্জ পাই। তবে শুরু থেকে অর্থাৎ ’৭৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত আমার ২২টি গোল্ড, ১০টি ২য় পুরস্কার এবং ৭টি ৩য় পুরস্কার পাই। এই মোট ৩৯টি পদক নিয়েই প্রতিযোগিতার পর্ব শেষ হয়। জীবনে চলার পথে অন্য কোন কিছু ভাবার সময় পাইনি, খেলাকে এতই ভালবাসতাম যে, শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধুই আমার মনে ছিল খেলাকে নিয়ে স্বপ্নের আলো, কি করে আরও ভাল করতে পারব, আর এই খেলার কারণে সব কিছুই মেনে নিতাম। এরই মাঝে বিয়ের আলাপ আলোচনা দিনাজপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষিত মেধাবি সৎ ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। শিক্ষিত ছেলে হয়েও চাকরীর পেছনে না ছুটে একজন ভালো ব্যবসায়ী ও সফল ব্যবসায়ী। নাম মোকলেসুর রহমান শ্যামল-এর সাথে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয় ২৮ জুন ১৯৯১ তারিখে। আমার খেলাধূলার কথা শুনেও তারা এগিয়ে আসে। মনের মধ্যে এটাও ভয় ছিল যদি খেলাধূলা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়? তবে আনন্দ ও মজার ব্যাপার হলো খেলার জগতের মানুষ না হয়েও আমার খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা খুব স্বাভাবিকভাবে নেন আমার স্বামী। আর তার আগ্রহ অনুপ্রেরণায় আমার আজও ক্রীড়াঙ্গণকে ধরে রাখা। দিনাজপুর জিমন্যাসিয়ামের কোচ হয়ে জিমন্যাষ্টিক শেখাতে বাচ্চাদের সঙ্গে আজও আমার সময় কাটে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক জিমন্যাষ্টিক কোচেসকোর্স ট্রেনিং নেওয়ার ফলে জাতীয় জিমন্যাষ্টিক্স প্রতিযোগিতায় জাজমেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে দিনাজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (শরীর চর্চা) হিসেবে কর্মরত। একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, আসলে জিমন্যাষ্টিক্সটা একদম স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর সব খেলার মূল ভিত্তি হলো জিমন্যাষ্টিক্স। আর তাই এই খেলাকে খেলার রাণী বলা হয়। যে জাতি জিমন্যাষ্টিক্স-এ যত উন্নত সে জাতি খেলাধূলায় ততো উন্নত। বর্তমান এই করোনাকালে শরীরটাকে সুস্থ্য রাখতে গেলে শরীর চর্চা/খেলাধুলা খুব প্রয়োজন, যা মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের বর্তমান যুব সমাজ অপরাধ জগৎ থেকে সরে এসে ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধূলার সঙ্গে জড়িত থাকবে এটাই আমার কাম্য।
বিবাহীত জীবনে আমার কোল জুড়ে আসে দুটি রাজকন্যা। বড়জন মায়মুন সিনথীয়া প্রেমা ঢাকা সলিমুল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাশ করেছে আর ছোট মেয়ে জাহানারা পৃথা পড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং কুয়েটে তৃপোলিতে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত খেলোয়াড়ি জীবনে মোট ৩৯টি পদক অর্জিত করায় দেশরত্ন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের জিমন্যাষ্টিক্সে এ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়ার ঘোষণা প্রদান করেন এবং তা ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে পুরস্কৃত করেন। খেলাধূলাকে ভালবেসে মাঠকে আকড়ে ধরে যত পরিশ্রম করেছি, খোদাতালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। পাশাপাশি দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারী সুব্রত মজুমদার ডলার দা’র কাছে আমি চীর কৃতজ্ঞ। উনারা এই পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার ইচ্ছা তৃণমূল পর্যায় ছোট জিমন্যাষ্টদের খুঁজে বের করে হাতে খড়ি দিয়ে একজন ভাল জিমন্যাষ্ট গড়ে তোলা। একজন ভাল খেলোয়াড় পারে একটা দেশকে পরিচিত করতে। পড়ালেখার পাশাপাশি অবশ্যই খেলাধূলারও প্রয়োজন আছে, আমরা জানি সুস্থ্য শরীরে সুন্দর মন। খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই, সু-চরিত্র সুন্দর সমাজ, উজ্জ্বল জীবন ও শক্ত মনোবল গড়তে। বর্তমান প্রজন্ম অনেকেই ভাল সুনামধণ্য খেলোয়াড়দের চিনে না এবং জানেও না। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এই সব খেলোয়াড়দের রেজাল্ট ও ছবি কালেকশন করে সংরক্ষণ করে তাদের মাধ্যমে নিজ জেলায় নতুনদের আগ্রহ ও উৎসাহিত করার জন্য জেলা ক্রীড়ার সহযোগিতায় কোচিং এর মাধ্যমে নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বের করে নিয়ে আসা। আমার খুব কষ্ট হয় আফসোস লাগে যে আমার সেই সময় এত সুযোগ সুবিধা ছিল না, ছিল না সেই রকম জিমন্যাসিয়াম না, ছিল না কোন উন্নত মানের খেলার সরঞ্জাম। তখন মেয়েদের ক্রিকেট খেলাও ছিল না। আমার বিশ্বাস জিমন্যাষ্টিক বাদেও যে কোন খেলায় গেলেও অবশ্যই প্রথম সারির খেলোয়াড় হিসেবে থাকতাম ইনশাআল্লাহ।
খেলাধূলার মান আরও ভাল করতে গেলে প্রত্যেকটি খেলার জন্য আলাদা আলাদা মাঠ থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাছাড়া এমন স্থানে প্রশিক্ষন চলবে যাতে করে মানুষের চলাফেরাতে দেখা যায় এবং খেলা দেখে আগ্রহ বাড়ে।
আমার সব বান্ধবীরাই খেলার শিক্ষক, হাজেরা নাজনীন, অন্যান্যরা সবাই মিলে যখন একসঙ্গে হই তখন আর কাউকে লাগে না তখন একটা সুন্দর খেলার পরিবেশ তৈরী হয়ে যায়, এইভাবে নিজ নিজ স্কুলের ছাত্রী দিয়ে খেলার টিম তৈরী করি, এই ভাবেই খেলার মাঠকে আকড়ে ধরে ও স্বামী সন্তান নিয়ে খুব সুখে আনন্দে দিন অতিবাহিত করছি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।