চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বইছে ফালগুনী হাওয়া। বসন্তের শুষ্ক আবহাওয়ায় চারিদিকে নজর কাড়ে সবুজের সমাহার। সেজেছে এক অপরুপ সাজে। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সোনালী রঙের আমের মুকুল। চারিদিকে সোনালি শোভা। যেমন তার সৌন্দর্য, তেমনি তার ঘ্রাণ। মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা মৌমাছির দল। সর্বত্রই গাছে গাছে মুকুল। চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসিন্দাদের বাসা-বাড়িতে রোপণ করা আম গাছগুলোতে ফুটেছে মুকুল। শুধু বাসা-বাড়িতেই নয়, অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন আমবাগান। এ ছাড়া অফিস-আদালত কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছেও দোল দিচ্ছে মুকুল। এসব মুকুলের ডগায় ডগায় দেখা মিলেছে আমের গুটির। এ যেন হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা।
জানা গেছে, উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি আমগাছে আশানুরূপ মুকুল ধরেছে। এবারে এসব মুকুল থেকে বেশি পরিমাণ আম পাওয়ার আশায় ইতোমধ্যে গাছগুলোতে ওষুধ প্রয়োগসহ নানামুখী পরিচর্যা গ্রহণ করছেন। আমের মুকুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। সেই সোনালী স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছ মালিকরা। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। এ উপজেলার মাটি তুলনামূলক উঁচু এবং মাটির প্রকৃতি বেলে দো-আঁশ। এসব জমিতে কয়েক বছর আগেও চাষিরা গম, ধান, পাট ইত্যাদি আবাদ করতেন। কিন্তু ধান-গম আবাদ করে তেমন একটা লাভ পাওয়া যায় না। তাই অনেকেই বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তুলছেন।
উপজেলার নশরতপুর গ্রামের ছাবেরউদ্দিন ওরফে বাতাস, রফিকুল ইসলাম, আব্দুলপুর গ্রামের শিক্ষক আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন-এমন কোন বাড়ি নেই যে, যাদের বাড়িতে আমগাছ নেই। তাই প্রতিটি বাড়িতে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ছে আমের মুকুল। শুধু আমের মুকুলই নয়, কাঁঠাল, লিচু লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছের ফুলের গন্ধে চারিদিকে সুবাতাস বইছে। এসব মুকুলে সুবাস যেন মুগ্ধ করে তুলেছে মানুষকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান জানান, কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৪৫০ হেক্টর জমি রয়েছে। ছত্রাকে যাতে মুকুল নষ্ট না হয় সেজন্য কীটনাশক হিসেবে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মুকুল গুটিতে পরিণত হওয়ার সময় একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। হঠাৎ ২ দিন বৈরী আবহাওয়া ও হালকা বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।