
প্রেস বিজ্ঞপ্তি। স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য দিনাজপুরের কৃতি সন্তান এম. আব্দুর রহিম (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পদক-এর জন্য মনোনীত হওয়ায় এম. আব্দুর রহিম সমাজকল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের প্রতি অভিনন্দন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
এম. আব্দুর রহিম সমাজকল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র’র পক্ষ হতে সম্মানীয় সভাপতি অ্যাড. আজিজুল ইসলাম জুগলু, কার্যকরী সভাপতি মো. সফিকুল হক ছুটু, সাধারন সম্পাদক চিত্ত ঘোষ স্বাক্ষরিত অভিনন্দন বার্তায় উল্লেখ করা হয়, “২০ ফেব্রুয়ারী/১৮ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। এ বছর ১৬ জন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক সাংসদ এম আবদুর রহিম রাষ্ট্রীয় এই সর্বোচ্চ সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাচ্ছেন”।
এম. আব্দুর রহিম একজন সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় তিনি নেতৃত্বের আসনে থেকে দিনাজপুরের মানুষকে যুগিয়েছেন সাহস-অনুপ্রেরণা-উদ্দীপনা। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁকে বিভিন্ন ক্ষমতায় আসীন স্বৈরাচার শাসক গোষ্ঠী দ্বারা নির্যাতনের শিকার ও কারাবরণ করতে হয়েছে অনেকবার। আদর্শ ও নীতিবোধকে অটুট-সমুজ্জ্বল রেখে রাজনীতিকে মানুষের সেবা-কল্যাণ আর মঙ্গলের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তিনি সমাজ সেবায় ছিলেন একনিষ্ঠ। মহাপ্রলয়ে পাহাড় ভেঙ্গে পড়লেও তাঁর ব্যক্তিসত্ত্বা জুড়ে আদর্শের পর্বত ছিল অটুট।
অভিনন্দন বার্তায় বলা হয়, ছাত্র অবস্থায় এম. আব্দুর রহিম পাকিস্তান বিরোধী স্বাধীকার আন্দোলনে যুক্ত হন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন। কলেজের শহীদ মিনার নির্মাণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম লীগ সরকারের হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টের একজন তরুণ কর্মী হিসেবে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি দিনাজপুর অঞ্চলে ৬ দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির প্রতিটি স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরূদ্ধে দায়েরকৃত ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এম. আব্দুর রহিম অ্যাডভোকেট।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী, তাঁর অনুসারী, সংগঠকদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ পূনর্গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর অতর্কিত আক্রমনে সবাই যখন কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিনি তখন প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বাঙালি ইপিআরদের সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নেন। যার ফলে ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর পাক হানাদারমুক্ত রাখা সম্ভব হয়। এম. আব্দুর রহিমকে আহ্বায়ক করে দিনাজপুরে ‘মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। মানবিক মূল্যবোধ আর দেশাত্ব¡বোধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে তিনি ভারতের পতিরাম, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা নিরসনে কাজ করেন।
১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন হলে গোটা দেশকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১১ টি বেসামরিক জোনে ভাগ করা হয়। মুজিবনগর সরকার এম. আব্দুর রহিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের জোনাল চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। শরণার্থী শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, ইয়ুথ ক্যাম্প পরিচালনা, মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ এবং ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব ছিল তার উপরে। উল্লেখ্য তার প্রশাসনিক জোনের অধীনে ১শ’১২ টি রিলিফ ক্যাম্প, ১২ টি যুব অভ্যর্থনা শিবির, ৬ টি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পসহ ১ টি মুক্তিযোদ্ধা বাছাই ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সাথে একাধিকবার বৈঠক করেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তৎকালীন পাকিস্তানী সেনা শাসক সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় দিনাজপুর গোরে শহীদ বড় ময়দানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দিনাজপুর অঞ্চল পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন এবং রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন।
বিজ্ঞ আইনজীবী ও জনদরদী রাজনীতিক এম. আব্দুর রহিম সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যখন সভাপতি, এম. আব্দুর রহিম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তখন সহ-সভাপতি হিসাবে দল গঠনে বঙ্গবন্ধুর সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলা হয়, সৎ, নির্ভিক, ত্যাগী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের প্রতি আমৃত্যু নিরবিচ্ছিন্ন আস্থাশীল থাকা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপুর্ণ অবদান রাখায় জননেতা এম. আব্দুর রহিমকে রাষ্ট্রীয় এই সর্বোচ্চ সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’- এ সরকার মনোনীত করায় দিনাজপুরবাসীকে গর্বিত ও সম্মানীত করা হয়েছে। যা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে ও সততার সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                