দিনাজপুর বার্তা২৪.কম : দিন কয়েক আগের এক সন্ধ্যা। উত্তরার মন্দিরা শুটিং হাউসে বসে ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোবেনা রেজা জুঁই। অপেক্ষায় ছিলেন নাটকের দৃশ্যায়নে অংশ নেয়ার। তবে সে অপেক্ষাটা একটু লম্বা সময়ের জন্যই হয়তো। যে কারণে অনেকটা বিশ্রামেই মগ্ন ছিলেন বলা চলে। এরই ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। সেদিন দুপুর থেকেই তিনি কাজ করছিলেন ফজলুল সেলিমের পরিচালনায় খন্ড নাটক ‘সব চরিত্র কাল্পনিক নয়’-এর। গৌতম ব্যানার্জির গল্পে এর চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন শফিকুর রহমান শান্তনু। জুঁই জানাচ্ছিলেন, আসছে ঈদকে সামনে রেখেই নাটকটি নির্মাণ হচ্ছে। এতে জুঁইয়ের সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করছেন তারই জীবনসঙ্গী জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। জুঁই বলেন, বেশ দারুণ একটি গল্প। একেবারেই ভিন্নধর্মী। আমরা অনেকেই বলি আমাদের নাটকে এখনকার সময়ে ভিন্ন গল্প খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। তবে এই কঠিন সময়েই আমি বলবো এটি দারুণ একটি চিত্রনাট্য। এতটা নিখুঁত যে, আমি খুবই মুগ্ধ। সত্যি বলতে আমরা যারা অভিনয় করি এ ধরনের গল্পের খোঁজেই সারাক্ষণ থাকি। কারণ একটি ভালো গল্প কিংবা সেটার চরিত্রই কিন্তু দর্শক জনম জনম মনে রাখেন। আশা করছি দর্শক উপভোগ করবেন। গল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ নাটকে মোশাররফ করিম একজন অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যে ধরনের চরিত্রে তিনি একের পর এক কাজ করছেন সেসব করতে তার আর ভালোলাগে না। চ্যালেঞ্জিং ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করার খুব ইচ্ছে তার। যে কারণে সাধারণ চরিত্রে কাজ করা তিনি ছেড়ে দেন। এক সময় কাজ ছাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েন তিনি। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ভালো এবং চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা তার তারপরও কমেনা। এগিয়ে যায় নাটকের গল্প। এতে মোশাররফ করিমের স্ত্রীর চরিত্রেই অভিনয় করছেন জুঁই। এ নাটক ছাড়াও জুঁই জানালেন তার অন্য ব্যস্ততার কথাও। এ মুহূর্তে খন্ড নাটকের পাশাপাশি তিনি অভিনয় করছেন বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকেও। এর মধ্যে রায়হান খানের পরিচালনায় ‘প্রেসিডেন্ট সিরাজুদৌলা’, কায়সার আহমেদের ‘রূপালি প্রান্তর’, সাগর জাহানের ‘ল্যাম্পপোস্ট’ উল্লেখযোগ্য। নাটকের ব্যস্ততার বাইরেও গল্পে গল্পে বর্তমান সময়ের নাট্যাঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন জুঁই। কেমন যাচ্ছে বর্তমান সময়ের নাটকের অবস্থা জানতে চাইলে জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী বলেন, কি বলবো! এখন তো আমরা খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণের বাইরেই বলা চলে। ভালো গল্প পাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু এর কারণ কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা তো সবারই জানা কথা। নাটকে ভালো বাজেট নেই। শান্তিতে কাজ করার অবস্থা নেই। সবাই খুব অস্থিরতার মাঝে আছে। যে কাজটা তিন বা চারদিনে করলে ভালো হয় সেটা হচ্ছে দুদিনে। তাতে তো ভালো নাটক নির্মাণ সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ বলে মনে করেন? জুঁই বলেন, আমার মনে হয় এ অবস্থার উত্তরণটা টিভি চ্যানেলের দ্বারাই সম্ভব। কারণ তারাই জানেন নাটকের উন্নয়নে কি করলে ভালো হয়। চ্যানেলগুলো এজেন্সির কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ছে। এজেন্সির ইচ্ছামতে এখন নাটকের শিল্পী নির্বাচন হয়। এক্ষেত্রে ভালো মন্দ যাচাই করা হয়ে ওঠে না। শুধু তাই নয়, যারা সত্যিকার অর্থে শিল্পী তারা কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আরো অনেক জটিলতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু এসব জটিলতা থেকে বের হতে তো টিভি নাটকের শিল্পী কলা-কুশলীরা আন্দোলনও করেছিলেন। সেটার কি হলো? কিছু জানেন? জুঁই বলেন, আন্দোলনটা সত্যিই যৌক্তিক ছিল। আমাদের শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এমন আন্দোলন খুব জরুরী। তবে এখন কি অবস্থা সেটা জানি না। হয়তো আরো ভালো কোনো স্বার্থে এখন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আশা করছি যারা নেতৃত্বে আছেন তারা ইতিবাচক কোনো বার্তা দেবেন শিগগিরই। অভিনয় ব্যস্ততা ও নাট্যাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তো বললেন জুঁই। কেমন যাচ্ছে তার সংসার জীবন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। বেশ ভালো আছি। মোশাররফ, আমার সন্তান এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংসার জীবন দারুণ কাটছে। সবাই দোয়া করবেন যেন আমৃত্যু সুখটা ধরে রাখতে পারি।