চিরিরবন্দর সংবাদদাতা ॥
শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার চারদিকে এখন ঘন সবুজের সমারোহ। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও শীষ। আর এই সবুজের ঢেউয়ে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে।
কদিন পরেই সবুজ ধানগাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে চিরিরবন্দরে এবার ইরি-বোর ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ইরি-বোরো ধানের শীষ বের হয়েছে। তবে কিছু কিছু জমিতে ধানে রোগ দেখা দিলেও সেটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও সতর্কতার সাথে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সাতনালা, আউলিয়াপুকুর, ফতেজংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাঠে ইরি-বোরো ধানের চাষাবাদে ভরে গেছে। ধানক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। ইরি-বোরো ধান লাভজনক ফসল। তাই কৃষকরা বোরো মৌসুমকে ঘিরেই নানা স্বপ্ন দেখে। এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাষিরা ধান রোপণ করেছেন। যথা সময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় ধান গাছ উজ্জীবিত রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত ইরি-বোরো ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। আর কয়েক দিন পরই ধান কাটা শুরু করা যাবে। এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ বছর বিদ্যুৎ ও সারের কোনো সংকট দেখা দেয়নি। যার কারণে ফসলের চেহারাও অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।
তারা আরও জানান, যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তবে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে ইনশাল্লাহ। তবে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে হতাশা প্রকাশ করেছে কৃষকরা।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। এ পর্যন্ত বোরো চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, এবছর ১৯হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। পরবর্তী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চিরিরবন্দরে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।